ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেছেন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে এই বৈঠক। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদির দিরিয়াহ প্রাসাদে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
দ্বিপাক্ষিক এই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ বাদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে দেশদুটিতে; সেখানে আসতে পারে পরিবর্তন। তাছাড়া এই আলোচনা ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সাক্ষাতের পথও সুগম করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
রিয়াদে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটির আয়োজন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। তবে মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই বৈঠকে ইউক্রেন বা ইউরোপের কোনো দেশের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ইউরোপীয় নেতাদের কপালে।
বৈঠকের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘এই আলোচনাকে তারা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সূচনা হিসেবে দেখছেন।’ আলোচনার অগ্রগতি হলে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজিত হবে বলে জানান তিনি।
ওয়াশিংটনের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, মঙ্গলবারে বৈঠক সমঝোতা আলোচনা শুরু করার জন্য নয়; বরং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে রাশিয়া ‘আন্তরিক’ কি না, সেটা বোঝার জন্য আয়োজন করা হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন ও মস্কোতে দূতাবাসকর্মীদের ফিরিয়ে সেগুলো সচল করার বিষয়ে একমত হয়েছে দেশ দুটি। পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো দুই পক্ষ খতিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় নেই ইউক্রেন
অন্যদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশ দুটিতে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেবেন তারা। দূতাবাসগুলোতে ব্যাংক লেনদেন বাধা অপসারণসহ কূটনৈতিক মিশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।
এর আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি বৈঠকে কিয়েভকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের এই আলোচনায় খোদ ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোতে উদ্বেগ প্রকাশ করে কিয়েভ। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে ছাড়া আয়োজিত বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানায় ট্রাম্প। তাদের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করেছে, তাদের বাদ দিয়েই হয়তো এমন একটি শান্তি চুক্তি হতে যাচ্ছে, যা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে। বিশেষত সেটি যদি রাশিয়ার অনুকূলে হয়।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ বন্ধে ‘কার্যকর আলোচনায়’ থাকবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয়রা
তবে তাদের এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, সৌদিতে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার কেবল সূত্রপাত হতে যাচ্ছে। অগ্রগতি হলে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।
রুবিও সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছেন মুখপাত্র ব্রুস। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার শুরু হয়েছে কেবল। ক্রমান্বয়ে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে ওয়াশিংটন।