ইসলাম শিক্ষা
১০ বছর ধরে নেই কোনো মুসলিম শিক্ষক, ইসলাম শিক্ষা পড়াচ্ছেন হিন্দু শিক্ষকরা
ফেনী সদর উপজেলার তুলাবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১০ বছর কোনো মুসলিম শিক্ষক না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা পড়াচ্ছেন হিন্দু শিক্ষকরা। ফলে তাদের পক্ষে ইসলাম ধর্মের আরবি ভাষার সূরা, কালাম পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র বাংলা অর্থটুকুই পড়াচ্ছেন তারা। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষক থাকলেও মুসলিম কোনো শিক্ষক নেই। ফলে সব বিষয়ের ক্লাস তারাই নিয়ে থাকেন।
বিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৪৪ প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে ৩২৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মুসলমান শিক্ষার্থী রয়েছে ২৮ জন। এদের মধ্যে পাক-প্রাথমিকে ২ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৬ জন, পঞ্চম শ্রেণিতে ২ জন মুসলিম শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়াশোনা করছে।
এদিকে, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে একজনও মুসলিম শিক্ষক না থাকায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ইসলাম ধর্ম বিষয়ের জন্য মুসলিম শিক্ষক না থাকায় স্থানীয় মুসল্লিদের অনেকেই তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। অনেকে আবার পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসায় সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রিপ্রা রানী পাল বলেন, ‘মুসলমান শিক্ষক না থাকায় হিন্দু শিক্ষক দিয়েই ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে করে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, আমাদেরও যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিক্ষা অফিসে আলোচনা করে শুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন: কুয়েটের আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা
তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল গনি বলেন, ‘নীতিমালায় হিন্দু ও মুসলমান আলাদা করে শিক্ষকদের পদায়ন করা না থাকায় বিষয়টি সুরাহা করা যাচ্ছে না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করব।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। সব উপজেলা থেকে শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। রমজানের পর এ বিষয়ে সমাধানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঢাকার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মহি উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দেশের সব মুসলমান মা-বাবারই ইচ্ছা থাকে, তার সন্তান পবিত্র কোরআন শিখবে ও পড়বে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ভালো শিক্ষক না থাকায় অনেকে তাদের সন্তানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে মাদ্রাসায় পাঠান। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে। তাই ছাত্র-ছাত্রী ধরে রাখার স্বার্থে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জীবন-জীবিকার ও শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক।’
৩২ দিন আগে