জাতীয় ঐকমত্য
সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করে সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা সম্ভব।
শনিবার (২২ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দিল জামায়াত, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে জোর
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও মতপার্থক্য থাকলেও অনেকে একই মতামত পোষণ করেন। সবার মতামত শোনা হবে। আমি আশা করি আমরা সংলাপের মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।’
তিনি বলেন, 'এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আপনারা (খেলাফত মজলিস) অংশগ্রহণ করছেন। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কাজ শুরু করেছি এবং বেশি সময় দিতে পারিনি। তবে আপনারা যে আন্তরিক মতামত দিয়েছেন তার ভিত্তিতে আমরা আমাদের আলোচনা চালিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, সংলাপ শুধু তাদের দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে প্রথম সংলাপ করে কমিশন।
আরও পড়ুন: কিছু প্রস্তাবে বিরোধিতা করে ঐকমত্য কমিশনে মতামত পাঠিয়েছে ইসি
সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামত গ্রহণ করে কমিশন।
পরে কমিশন স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে সুপারিশের একটি কপি পাঠায়। ১৩ মার্চের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সুপারিশের ওপর সুনির্দিষ্ট মতামত চায় কমিশন।
৬ দিন আগে
শ্রম খাতে টেকসই সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হচ্ছে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার শ্রম খাতসহ অন্যান্য সব খাতের সংস্কারে সব অংশীজনের অংশিদারত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এসব খাতে টেকসই সংস্কার সাধনে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ৩৫৩তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে বাংলাদেশের শ্রমখাত সংস্কার নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জেনেভার বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শ্রম খাতের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন শ্রম উপদেষ্টা।
গত নভেম্বরে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনের পর বর্তমান সরকারের আমলে দ্বিতীয়বারের মতো এক্ষেত্রে অগ্রগতির ওপর আলোচনা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলাগুলোর অধিকাংশ বাতিল করেছে। এছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ত্রিপক্ষীয় কমিটিগুলোতে প্রকৃত শ্রমিক ও মালিকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কাউন্সিল সভায় চলমান শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আইনটির আওতা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান ও প্রশাসনিক পদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সম্প্রসারণ, অনায্য শ্রম আচরণ ও ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যের শাস্তি তিনগুণ বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া শিশুশ্রমের শাস্তি পাঁচগুণ বর্ধিত করা, জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ও সহিংসতা এবং জবরদস্তি শ্রমের শাস্তি নির্ধারণ, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত নিষিদ্ধ ও এর শাস্তির বিধান সংযোজনে ত্রিপক্ষীয় ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও বাধ্যতামূলক সভা কমিয়ে আনা, ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা প্রদানে মালিকের বাধ্যবাধকতা ও একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত ইউনিয়নের সংখ্যা তিনটি থেকে পাঁচটিতে উন্নীত করতে সবাই ঐকমত্য হয়েছে বলে তিনি অবহিত করেন।
তবে, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম কর্মীর শতকরা হার বা সংখ্যার বিষয়সহ কিছু বিষয়ে এখনো ঐকমত্য অর্জিত না হলেও ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তা অর্জিত হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। এর মাধ্যমে অচিরেই সরকার অধ্যাদেশ জারি করে আইনটির সংশোধন সুসম্পন্ন করবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আরও বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসমূহের জন্য ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধনে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের পর বিদ্যমান ইপিজেড শ্রম আইন ও সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের মধ্যে ফারাক বিশ্লেষণ করে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শনের জন্য বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা (এসওপি) অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অঘোষিত পরিদর্শন হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিদর্শকের শূন্যপদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
অধিবেশনে দাখিল করা প্রতিবেদন নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা শ্রম অধিকার উন্নয়ন ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানান।
চলমান মামলায় গত পাঁচ বছর ধরে শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জোট হিসেবে প্রথমবারের মতো আরব দেশগুলোর জোট বাংলাদেশের পক্ষে জোটবদ্ধ সমর্থন ব্যক্ত করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে চলমান দেশগুলোর ক্ষেত্রে কোনো জোটের এমন সমর্থন একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আরব জোট ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে ১৮টি দেশ বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কারের ভূয়সী প্রশংসা করে, যা এযাবৎকালে অর্জিত সর্বোচ্চ সমর্থন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা শ্রমখাত সংস্কারে সরকারের চলমান উদ্যোগ স্বাগত জানান। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা। চলতি অধিবেশনে গভর্নিং বডির কোনো সদস্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দাবি জানায়নি।
বাংলাদেশের দাখিল করা প্রতিবেদন ও অধিবেশনে অনুঠিত আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা ২০২৫ সালের নভেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত সহযোগিতার প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের শুভেচ্ছা সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া শ্রম উপদেষ্টা শ্রম খাতের উন্নয়নে সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ত্রিপক্ষীয় দলসহ যেকোনো প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। সমাপনী বক্তব্যে তিনি চলমান মামলাটি শিগগির নিষ্পত্তি করতে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন কামনা করেন।
১০ দিন আগে