১৪৩২
অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশে ‘সবার’ বৈশাখ
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি বছরের ইতি ঘটে শুরু হয়েছে নতুন একটি বছরের। জরাজীর্ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে এসেছে ১৪৩২ সন।
হ্যাঁ, আজ পয়লা বৈশাখ, নববর্ষের প্রথম দিন। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন এ বছর এসেছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে। পুরোনো সব ক্লেশ, দ্বেষ ও হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন আশার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দেশকে নতুন করে বিনির্মাণের আহ্বান নিয়ে এসেছে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
বৈশাখ বাঙালির জীবনে কেবল একটি নতুন বছরই নিয়ে আসে না, বাঙালির ক্রমবিস্মৃত আত্মপরিচয়কেও নতুন করে জাগিয়ে দেয়। বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণসঞ্চার করে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রতিটি কোনায় থাকা বাঙালির জীবনে। আর যার যার অবস্থান থেকে প্রত্যেকেই তা আলিঙ্গন করে নেয় সাদরে।
প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছে বাঙালির প্রাণের বৈশাখ। আর নানা আয়োজনে তাকে বরণ করে নিচ্ছে দেশের সব জনগোষ্ঠীর মানুষ। এ বছর বর্ষবরণ উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে সব জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় আয়োজন।
আরও পড়ুন: যেখান-সেখান দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যাবে না: ডিএমপি কমিশনার
সকাল সোয়া ছয়টায় আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে ছায়ানটের আয়োজনে রাজধানীর রমনা বটমূলে শুরু হয় বর্ষবরণ। নারী-পুরুষের সম্মিলনে প্রায় দেড়শ শিল্পীর সুরবাণীতে নতুন বছরকে আবাহন জানানো হচ্ছে সেখানে।
ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশপ্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে তাদের অনুষ্ঠান।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিকে দিকে এমন সব আয়োজনে মেতে উঠবে দেশের মানুষ। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্কৃতিবান মানুষের উদ্যোগে উৎসবের আকার ধারণ করবে বর্ষবরণ।
কোথায় কী আয়োজন
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ আনন্দ উৎসবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে সরকারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সরকারি ছুটি।
মূলত চৈত্র সংক্রান্তিতে বর্ষবিদায়ের মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে এই আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো এ বছর বাঙালির পাশাপাশি দেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গারোসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষেরও নববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক পরিসরে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: নববর্ষ ১৪৩২: পরিবর্তন ও নতুনত্বের আবহ
সরকারের নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলার আয়োজন করবে।
তিন পার্বত্য জেলা এবং অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলগুলোর শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সমন্বয় করবে শিল্পকলা একাডেমি। পাশাপাশি রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে বৈসাবি উৎসব উদযাপন করবে। এ ছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বিদেশি মিশনগুলো।
আজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে সব জাদুঘর ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য সেসব স্থানে প্রবেশে লাগবে না কোনো টিকিট। বর্ষবরণ উপলক্ষে দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলবে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত।
সরকারের গৃহীত কর্মসূচি অনুযায়ী, বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের পরিবর্তে সংবাদপত্রগুলোতে পয়লা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ফিচার প্রকাশ করা হয়েছে এবার। এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো নববর্ষের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ও চিত্রিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
আরও পড়ুন: দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সব সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন এবং বাণিজ্যিক ও কমিউনিটি রেডিওতে শোভাযাত্রা সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
এদিকে এই উৎসব ঘিরে যেন কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যেও ঢাবির চারুকলা অনুষদের তৈরি ‘স্বৈরাচারের মুখাবয়ব’ মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রবিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশ, র্যাবসহ গোয়েন্দাবাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, শাহবাগ, রমনা, হাতিরঝিলসহ যেসব জায়গায় জনসমাগম হবে, সেখানে র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর পাশাপাশি পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে গেট, হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম, অস্থায়ী পাবলিক টয়লেট ও অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯ দিন আগে