চামড়া ব্যবসায়ী
ঈদুল আজহার আগে লবণের মূল্যবৃদ্ধি, দুশ্চিন্তায় নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা
হালিম খান, নাটোর, ১৫ মে (ইউএনবি)— আর কয়েক সপ্তাহ পরই কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আজহা। এই সময়ে এসে বেড়ে গেছে লবণের দাম। এতে করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার বাজার নাটোরের চকবৈদ্যনাথ মোকামের ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
এ ছাড়া, গরুর চামড়ায় নতুন ভাইরাসের আক্রমণ ব্যবসায়ীদের এ চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। ভাইরাসের কারণে কেজি দরে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে লবণজাত চামড়া। গরুকে মাত্রাতিরিক্ত ফিড (প্রক্রিয়াজাত খাবার) খাওয়ানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গরুর চামড়ায় ভাইরাসের আক্রমণ হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
দেশে এবার পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হওয়ায় চাষীদের স্বার্থে সম্প্রতি লবণ আমদানি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এই সুযোগে অপরিশোধিত লবণের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে চামড়া শিল্পে। ১০ টাকা কেজির লবণ ১৫ টাকায় কিনে চামড়ায় ব্যবহার করায় খরচ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে চামড়া ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল জানান, গত সপ্তাহে ৭০ কেজির প্রতি বস্তা লবণের দাম যেখানে ছিল ৭ শ’টাকা, হঠাৎ করেই সেই লবণের দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি লবণের দাম ৫ টাকা বেড়ে গেছে। ১০ টাকা কেজি লবণ দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকায়। অথচ দেশে এবার পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে।
তিনি বলেন, লবণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চামড়ার খরচ বাড়বে। আর এ ব্যায় সংকোচনে খুচরা পর্যায়ে লবণবিহীন চামড়ার দাম কমে যাবে বলে ধারণা এই ব্যবসায়ীর।
এদিকে, লবণের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে গরুর চামড়ার ভাইরাস। ভাইরাস-আক্রান্ত চামড়া লবণজাত করার পর ব্যবসায়ীরা পড়ছেন সবচেয়ে বেশি লোকসানের মুখে। লবণজাত এসব চামড়া ১০/১৫টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপরও কখনো কখনো ক্রেতা মিলছে না।
চকবৈদ্যনাথ মোকামের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘খামারগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ফিড খাওয়ানোর কারণে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গরুর চামড়ায় ভাইরাস ও লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিচ্ছে। এসব চামড়া লবণজাত করার পর মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার ট্যানারিতে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়েও দেখা যাচ্ছে চামড়ায় ছিদ্র ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। ফলে ট্যানারি মালিকরাও পড়ছেন লোকসানে।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার কোরবানি ঈদে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ ধরনের চামড়া কিনে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে পারেন। কারণ অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া চেনেন না। আবার অনেকে ভালোভাবে না দেখেই চামড়া কিনে নেন।’
আরও পড়ুন: প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত লবণ রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানির সময় মৌসুমি ব্যাবসায়ী ভাইরাসে আক্রান্ত একটি চামড়া ৭০০ টাকা দিয়ে কিনে মোকামে আনার পর আড়তদার সেই চামড়ার দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকার বেশি দেবেন না। তখন আবার ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হবে।’
২২৮ দিন আগে