মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ফরিদপুরের রাইসা মনির সমাধিতে বিমান বাহিনীর শ্রদ্ধা
ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা মনির (৯) সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এসময় নিহত রাইসার শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুর সোয়া ২টার দিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া দক্ষিনপাড়া শামসুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা গোরস্থানে রাইসা মনির সমাধিতে বিমান বাহিনীর প্রধানের প্রতিনিধি হিসেবে স্কোয়াড্রন লিডার জিহাদুল ইসলাম ও ফ্লাইং অফিসার রুদাবা কামালের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি দল ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে রাইসার কবর জিয়ারত করেন তারা।
এ সময় বিমান বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম রায়হানুর রহমান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজালাল আলম উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন শিক্ষিকা ফারজানা এছাড়া বাজড়া শামসুল উলুম মাদরাসা মসজিদে বাদ জোহর দোয়ার আয়োজন করা হয়। পরে এতিমখানার শিশুদের মাঝে তবারক বিতরণ করেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে নিহত রাইসার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পরিবারটিকে সমবেদনা জানান বিমান বাহিনীর সদস্যরা।
জানা যায়, গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পর থেকে নিখোঁজ ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনি (৯)। দুর্ঘটনার পর থেকে রাইসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটির মুখমণ্ডলের অংশবিশেষ দেখে রাইসা হিসেবে দাবি করেন বাবা শাহাবুল শেখ (৪৪)। বাবার দাবির প্রেক্ষিতে সিএমএইচ থেকে ২২ জুলাই বিকালে লাশের ডিএনএ সংগ্রহ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ডিএনএ রিপোর্টে রাইসার লাশ শনাক্ত হলে গত ২৪ জুলাই দিবাগত রাতে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পরেরদিন শুক্রবার (২৫ জুলাই) ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া দক্ষিণপাড়া শামসুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানা গোরস্থানে রাইসার লাশ দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাইসা মনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের শাহাবুল শেখ ও মীম আক্তারের মেয়ে। তার বড় মেয়ে সিনথিয়াও (১৪) একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ভাই রাফসান (৪) সবার ছোট। আর রাইসা ছিল সন্তানদের মধ্যে দ্বিতীয়। পরিবার পরিজন নিয়ে রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ ঢাকার উত্তরা নয়ানগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। শাহাবুল একটি গার্মেন্টস এক্সেসরিস প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ বলেন, আমার সোনা মনির জন্য আপনারা শুধু দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমার সন্তান রাইসা মনিকে জান্নাতবাসী করেন। আমার আর কি বলার আছে।
তিনি বলেন, ইচ্ছা ছিল মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার, তা আর হলো না।
বিমান বাহিনীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী রাইসা মনির সমাধিতে বিমান বাহিনীর প্রধানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তরা নিহতের বাড়িতে আসেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটির সঙ্গে ছিলাম। রাইসার পরিবারের পাশে সব সময় থাকবে উপজেলা প্রশাসন।
১২৫ দিন আগে
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: বিদেশি চিকিৎসক দলের প্রতি ড. ইউনূসের কৃতজ্ঞতা
সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারত থেকে আগত ২১ সদস্যের চিকিৎসক ও নার্সের একটি প্রতিনিধিদল রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময়ে দ্রুত সাড়া দিয়ে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এই আন্তর্জাতিক মেডিকেল টিম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা দিতে ঢাকায় অবস্থান করছে।
জাতীয় সংকটের সময়ে তাদের পেশাদারিত্ব, সহানুভূতি ও সংহতির প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
‘এই চিকিৎসক দল শুধু দক্ষতা নিয়ে আসেননি, তাদের হৃদয়ও সঙ্গে এনেছেন,’ বলেন অধ্যাপক ইউনূস। ‘তাদের উপস্থিতি আমাদের অভিন্ন মানবিকতা ও দুঃসময়ে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মূল্য নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়’।
এই আন্তর্জাতিক টিম স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে আহতদের— বিশেষ করে শিশুদের— জরুরি চিকিৎসা ও ট্রমা কেয়ার নিশ্চিত করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি টিমগুলোর দ্রুত আগমনে কূটনৈতিক সমন্বয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাদের মিশনে সরকারের সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।
তিনি এই চিকিৎসকদের বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকার অনুরোধ করেন, যেন মেডিকেল শিক্ষায় বিনিময়, প্রতিষ্ঠানিক সহযোগিতা এবং উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অব্যাহত অংশগ্রহণ বজায় থাকে।
পড়ুন: সৌদি আরবকে বাংলাদেশে উৎপাদন খাত গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, এ ধরনের অংশীদারিত্ব জনস্বাস্থ্য এবং জরুরি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম এই দুঃসময়ে সহায়তার জন্য বিদেশি চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সৈয়দুর রহমান জানান, ‘বিদেশি চিকিৎসকরা দ্রুত সাড়া না দিলে অনেক জীবন রক্ষা করা যেত না।’
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের (এনআইবিপিএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এটি আবারও প্রমাণ করলো— চিকিৎসকরা সত্যিকার অর্থে সীমান্তহীন।’
সাক্ষাতে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় মেডিকেল টিম জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনায় তারা বাংলাদেশে এসেছেন এবং দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত পুনর্বাসনে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।
ভারতীয় মেডিকেল দলের প্রধান চিকিৎসক বলেন, ‘বাংলাদেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম কিংবা পুনর্বাসনে যেকোনো প্রয়োজনে ভারত সহায়তা দিতে প্রস্তুত। যেকোনো গুরুতর রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ভারতে দ্রুত তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এনআইবিপিএস-এর ব্যবস্থাপনা ও প্রটোকল পদ্ধতিতে ভারতীয় চিকিৎসকরা সন্তুষ্ট।
১৩০ দিন আগে