ফগার মেশিন
খুলনাবাসী ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় চিন্তিত, ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রতি ওয়ার্ডে মশা নিধনে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর ফলে পুরো এলাকায় ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগরীর বাসিন্দারা জানান, ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়া ধোঁয়ার গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। সবার চোখমুখ জ্বালাপোড়া করে। এ অবস্থায় শিশুরা ছোটাছুটি করতে থাকে। ছোট-বড় সবার স্বাস্থ্যের জন্যই এ ধোঁয়া ক্ষতিকর।
খুলনা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, ফগার মেশিনের ধোঁয়া অবশ্যই স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। আগামীতে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে আশ্বাস দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ইইউ, দক্ষিণ এশিয়ার নীতি নির্ধারক-বিশেষজ্ঞদের আলোচনা
ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জানিয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) অধ্যাপক ড. মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ‘ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানোর একটা নিয়ম আছে। সেটা অনুসরণ করলে ওষুধটা মূল জায়গায় পড়ে। এটি অনুসরণ করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, একাধিকবার এ ধোঁয়ার সংস্পর্শে গেলে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। প্রতিনিয়ত এ ধোঁয়ার সংস্পর্শে গেলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। এটি ওষুধ ছিটানোর সময় কাছে গিয়েও হতে পারে কিংবা ছিটানোর পর ঘরের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকেও হতে পারে। এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।’
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন মশার ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেন, শিশুদের জন্য তো বটেই, বড়দের জন্যও ক্ষতিকর। তাই ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর সময় সতর্ক হতে হবে। সিটি করপোরেশনের কর্মীদেরও সতর্ক হতে হবে।
পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন মাসাস-এর নির্বাহী পরিচালক শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। এটি কেবল দায়িত্বশীলরাই করবে।
তিনি বলেন, ‘এমন ভাবা ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল, নাগরিক নেতা, পরিবার অর্থাৎ সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মশার ওষুধ ক্ষতিকর আমরা সবাই জানি। তারপরও অসচেতনতার কারণেই গুরুত্ব দিই না। যে কারণে ওষুধ ছিটানোর সময় শিশুরা ধোঁয়াকে খেলনা ভেবে খেলায় মেতে ওঠে। তাদের নিষেধ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: মানবাধিকারের ওপর দারিদ্র্যের প্রভাব পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সফর করবেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
এক্ষেত্রে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামীমা সুলতানা বলেন, প্রথম পদক্ষেপ হলো সচেতনতা। ওষুধ ছিটানোর সময় পরিবর্তন, যেমন বিকালে ওষুধ না ছিটিয়ে যখন মানুষজন ঘরে থাকবে তখন ছিটাতে হবে।
তিনি আও বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। কারণ অধিকাংশ সময় দেখা যায়, বিকালে ওষুধ ছিটানো হয়। তখন শিশুরা খেলতে বাইরে বের হয়। সন্ধ্যার পর ছোটবড় সবাই ঘরে থাকে। তখন ছিটানো যেতে পারে।
এ ব্যাপারে খুলনা সিটি করপোরেশনের সংরক্ষণ (কনজারভেন্সি) বিভাগের প্রধান আব্দুল আজিজ বলেন, মশা নিধনে ফগার মেশিনে ব্যবহার করা ওষুধ জটিল কোনো প্রভাব না ফেললেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, তাই আগামীতে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন হালদার বলেন, শুধু শিশুদেরই না, মশার ওষুধের ধোঁয়া সবার স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
নগরীর টুটপাড়ার বাসিন্দা আকাশ শাহ বলেন, প্রতি সপ্তাহে বিকালে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটিয়ে যান। এতে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, বড়রা নাকে-মুখে কাপড় দিলেও শিশুরা ছোটাছুটি করে। তাই শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
ফগার মেশিনের শব্দ শুনলেই শিশুরা ঘর থেকে বেরিয়ে যায় উল্লেখ করে খুলনা মহানগরীর গোবরচাকার জব্বার মোল্লা বলেন, ধোঁয়ার কুন্ডলীর মধ্যে খেলায় মেতে ওঠে শিশুরা। অনেক পরিবার সচেতন না বিধায় শিশুদের নিষেধ করে না।
আরও পড়ুন: সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি বিশেষজ্ঞদের
১ বছর আগে
কুমিল্লায় মশা নিধনে আরও ১৮টি ফগার মেশিন কিনবে কুসিক
কুমিল্লা, ২৮ আগস্ট (ইউএনবি)- সারাদেশে এখনও মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ২৭টি ওয়ার্ডে মশা মারার জন্য মাত্র নয়টি ফগার মেশিন রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে কুসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মশা নিধনের জন্য আরও ১৮টি ফগার মেশিন ক্রয় করা হবে।
৫ বছর আগে