অর্থনীতির মূলধারা
শিল্প-সংস্কৃতিকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার অঙ্গীকার আমীর খসরুর
ক্ষমতায় গেলে আগামী দিনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতিকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময়ে ‘সৃষ্টিশীল শিল্প’ নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমাদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে জনমিতিক সুফল কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য সবাইকে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি চার তারকা হোটেলে তরুণদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে আমীর খসরু এমন কথা বলেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে গণতন্ত্রই যথেষ্ট না, যদি অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ন করা না যায়, তাহলে কোনো রাজনীতি কাজ করবে না, গণতন্ত্রও কাজে লাগবে না। সবার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যেমন করতে হবে, তেমনই সমানাধিকার দিতে হবে। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জনগণের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আগামী বাংলাদেশের সমস্ত কার্যক্রম প্রত্যন্তাঞ্চলের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নেতা। এ সময়ে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি বা সৃষ্টিশীল শিল্পের একটি ধারণা দেন তিনি।
ক্রিয়েটিভ শিল্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘এটিতে হবে বাংলাদেশের সব মানুষ, তাঁতি, কামার-কুমার, চারুশিল্পী, ডিজাইনার, সঙ্গীতশিল্পী—সবাইকে অর্থনীতির মধ্যে নিয়ে আসা। যেমন, আমাদের হরেক ধরনের সঙ্গীত আছে—ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, লালনগীতি—এগুলো আমরা এখনো মূলধারায় নিয়ে আসতে পারিনি। বাংলাদেশে অনেক সঙ্গীত হারিয়ে যাচ্ছে।’
‘আবার বিশ্বে হস্তশিল্পের অনেক দাম। কিন্তু আমরা এগুলোকে কাজে লাগাতে পারিনি। এদের সবাইকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসতে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির কর্মসূচি নেব। তাদের যে কাঁচামাল দরকার, সেগুলো তাদের দিতে হবে। তাদের সহায়তা করতে হবে, পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ দিতে হবে, বিপণনের প্ল্যাটফর্ম দিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা, সংস্কারের অঙ্গীকার আমির খসরুর
থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, থাকসিন সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আমাদের দেশটিতে নেওয়া হয়েছিল, সেখানকার ‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’ দেখাতে। তারা প্রতিটি গ্রামকে শনাক্ত করেছে এভাবে যে সেখানকার কোন পণ্যটি ভালো। এই গ্রামে এই পণ্যটি ভালো তৈরি হয়, ওই গ্রামে অন্যটি—কাজেই ওই পণ্যটির ডিজাইন, রফতানি ও ব্র্যান্ডিং সহায়তা দেব। তারা এমন পরিকল্পনা করে এগিয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন ও আলিবাবার মতো তারা নিজেদের পণ্যগুলোকে ব্র্যান্ডিং করেছেন।
আমীর খসরু বলেন, লোকজনকে আমরা এমন প্ল্যাটফর্ম করে দেব, যেন গ্রামে-গঞ্জে বসে তারা পণ্য রফতানি করতে পারেন। তাদের ঢাকা শহর কিংবা চট্টগ্রামে যাওয়ার দরকার পড়বে না।
‘আমরা নাটক ও থিয়েটার উপভোগ করি। কিন্তু সেটাকে আমরা প্রমোট করতে পারি না। সেটিকে আর্থিকীকরণ করতে পারিনি। কিন্তু লন্ডনের থিয়েটারের মতো ঢাকার থিয়েটারও হতে পারে, চট্টগ্রামেও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এটা কেবল বিনোদন না, বিপুল কর্মসংস্থানও তৈরি হবে এটা করতে পারলে। এগুলোও অর্থনীতি। কেবল তৈরি পোশাক শিল্প কিংবা উৎপাদন খাতই অর্থনীতি না। বিগত দিনে এই অর্থনীতি আমরা কাজে লাগাইনি।’
‘সঙ্গীতের সীমান্ত নেই, আমরা বাংলাদেশে বসে ইংরেজি, স্প্যানিশ গান শুনি। এখনকার ছেলে-মেয়েরা কোরিয়ান নাটক দেখায় সবসময় মগ্ন থাকে। তার মানে হলো, শিল্প-সংস্কৃতির কোনো সীমান্ত নেই। এগুলো মূলধারার অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে হবে।’
এ সময়ে দেশের সর্বত্র আইটি ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ হিসেবে আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাগত সুফলে আছি। অর্থাৎ পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে তরুণ ও কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি। এটাই আমাদের সম্পদ। কিন্তু এটিকে যখন আর্থিকীকরণ করতে পারব, তখনই এটা সম্পদ হবে। আর এ জন্য কাজ করতে হবে, লেখাপড়ার পাশাপাশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। দক্ষতার অভাবে দেশের জনমিতিক সুফলটা আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।
৯৯ দিন আগে