শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার ফলে নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টাধর ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় জেলায় ৫ দিনে নারী, শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক।
এদিকে, বন্যায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে স্থানীয়দের ঘর-বাড়ি। পানি নেমে যাওয়ায় এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ভেসে উঠছে। ঘর-বাড়ি, আবাদ ফসল সব হারিয়ে দিশেহারা বন্যাকবলিতরা।
ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ীতে বন্যায় অন্তত সাড়ে ৬ হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত কিংবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবেছে আমন ও সবজির আবাদ। ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে পুকুর ও মৎস্য খামার।
এছাড়া প্রাথমিক হিসাবে বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষিখাতে ৫২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং মৎস্যখাতে ৭০ কোটি ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্বাসন শুরু হবে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের জন্য ২ লাখ টাকা অনুদান দিলেন খালেদা জিয়া
এদিকে, উজানের পানি নেমে গেলেও নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৮ ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি। এসব এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে পানিবন্দিদের রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
শেরপুর খামারবাড়ীর উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, চলতি বন্যায় জেলার ৫ উপজেলায় ৩৮ হাজার ২২৭ হেক্টর আবাদি জমি বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ২২ হাজার ৮৮৭ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার ৩৩৯ হেক্টর জমির ফসল আংশিক নিমজ্জিত হয়। মোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ১৫৭ হেক্টর। যার মধ্যে রোপা আমন আবাদি জমি রয়েছে ৩১ হাজার ২৮৬ হেক্টর, শাকসবজি ৮৬০ হেক্টর এবং বস্তায় আদা চাষ ১১ দশমিক ২৮ হেক্টর জমি। যার উৎপাদিত ফসলের মোট ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ ৬১ হাজার ৯০৮ মেট্রিক টন। যা টাকার অংকে ৫২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। আর সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৫ জন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, বন্যায় জেলার ৫ উপজেলার ৩১ ইউনিয়নে অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ৭ হাজার ৩৬৪টি পুকুর-দিঘি-খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মোট আয়তন ১ হাজার ৩০৬ হেক্টর। এতে ৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিসহ টাকার অংকে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এটা প্রাথমিক হিসাব। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে হয়তো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এমনকি সেটা ১০০ কোটি টাকাও হতে পারে। আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণী পাঠিয়েছি। কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পুনর্বাসন কিংবা প্রণোদনা বরাদ্দ দিলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের সেটা দেওয়া হবে।
শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে প্রায় ১৫/১৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত নদীর বাঁধ ও মহাসড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক ও সেতু-কালভার্টের হিসাব এখনও করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বন্যার্তদের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় ৩ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত ২৩৮৩৯১