আলজেরিয়া
ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ স্বীকৃতি দিচ্ছে আলজেরিয়া
ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আইন প্রণয়ন করতে চলেছে ফ্রান্সের এক সময়ের উপনিবেশ আলজেরিয়া।
স্থানীয় সময় রবিবার (২৩ মার্চ) একটি খসড়া আইন প্রণয়নের লক্ষে দেশটির পার্লামেন্টে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। খসড়াটি চূড়ান্ত হলে সেটি সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এই পদক্ষেপ ফ্রান্স ও আলজেরিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে, ঐতিহাসিক অপরাধের জন্য ফ্রান্সকে ক্ষমা চাইতে আলজিয়ার্স অনেকবার চাপ দিলেও তা গ্রাহ্য করেনি প্যারিস। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই এবার ফরাসি শাসকদের নানা অপকর্মকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলেছে আলজিয়ার্স।
১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ১৩২ বছর ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল আলজেরিয়া। সে সময় ফরাসিরা আলজেরিয়ার মানুষের ওপর নানা অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে বলে অভিযোগ ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত এই দেশটির।
এ বিষয়ে গত সপ্তাহে আলজেরিয়ার পার্লামেন্টের এক বৈঠকে আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় ‘ফরাসিদের অত্যাচার আলজেরিয়ানদের স্মৃতিতে এখন অম্লান’ বলে অভিহিত করেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার ব্রাহিম বুঘালি।
১৩২ বছরের ফরাসি শাসনামলে আলজিরিয়ানরা যা কিছু সহ্য করেছে, সেই সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের স্মৃতির বিষয়। কেউ কেউ হয়তো এটিকে চাপ প্রয়োগের একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করতে পাারেন, কিন্তু বিষয়টি তা নয়।’
আরও পড়ুন: তুরস্কে ধরপাকড় উপেক্ষা করে এরদোগানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে
এই আইন প্রণয়নকে দেশটির নাগরিকদের অসামান্য ত্যাগের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের (ঔপনিবেশিক) শাসকরা যেসব অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছিলেন, সেসব সত্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসাটা দেশটির ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন ব্রাহিম।
আলজেরিয়ার আইনপ্রণেতাসহ ইহিতাস ও আইন বিশেষজ্ঞরা এই (আইন প্রণয়নের) উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছেন। এর আগে, ফ্রান্সকে ঔপনিবেশিক অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তুলেছিলেন তারা।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে ফরাসিরা যেসব অপরাধ সংগঠিত করেছিল, সেসব নিয়ে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন তারা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ১৮৪৫ সালে সংঘঠিত দাহারা গণহত্যা ও সাহারা মরুভূমিতে পরিচালিত পরমাণু পরীক্ষা।
আলজেরিয়ার ঐতিহাসিক তথ্যমতে, ১৮৪৫ সালে একটি গুহার মধ্যে অবস্থানরত কয়েক শ’ মানুষকে ধোঁয়া দিয়ে বের করে এনে হত্যা করেছিল ফরাসি সেনারা, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল।
ফরাসিদের আরেক ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, আলজেরিয়ার সাহারা মরুভূমিতে অবস্থিত অংশে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৬ সালের মধ্যে ১৭টি পারমাণবিক পরীক্ষা। এতে স্থানীয় জলবায়ুতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে এখনও অঞ্চলটির বাসিন্দারা ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এমন আরও অনেক অপরাধের বর্ণনা রয়েছে তালিকায়।
সম্প্রতি যে আইনটি প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এমন একটি আইনের দাবি ১৯৮৪ সালের দিকেও করা হয়,কিন্তু বারবার পদক্ষেপ পেছানোর ফলে সেটি আর বাস্তব রূপ পায়নি।
এরপর ২০০১ সালেও এই রকম আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তবে তাও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৫ সালে ফরাসিদের প্রণীত একটি আইনকে কেন্দ্র করে নতুন করে এই দাবি জোরালো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ, শিক্ষার্থীকে আত্মসমর্পণে মার্কিন পুলিশের চিঠি
ওই বছর নিজেদের শিক্ষাক্ষেত্রে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলকে ইতিবাচক হিসেবে পড়ানোর জন্য একটি আইন প্রণয়ন করে ফ্রান্স। এতে ক্ষুব্ধ হয় আলজেরিয়ার মানুষ। পাল্টা হিসেবে তারা আইনের মাধ্যমে ফরাসি শাসনকে অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার দাবি তোলেন।
এরপর ২০২১ সালে আলজেরিয়ার শতাধিক আইনপ্রণেতা দাবি তোলেন, ঔপনিবেশিক শাসনামলে সংগঠিত অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্যারিসের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যেতে পারবে না আলজিয়ার্স। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করতে সরকাররের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এদিকে, বিগত কয়েকমাস ধরে ঐতিহাসিক অভিযোগ, অভিবাসন নীতিতে মতবিরোধ, পশ্চিম সাহারা নিয়ে মরক্কোর সঙ্গে আলজেরিয়ার বিরোধে রাবাতকে ফ্রান্সের সমর্থন দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে আলজিয়ার্স-প্যারিস কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে।
দীর্ঘস্থায়ী এই কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রসঙ্গে শনিবার (২২ মার্চ) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দেলমাজিদ তেববুনে বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিষয় সমাধানে ‘একমাত্র রেফারেন্স পয়েন্ট’ হিসেবে থাকবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বা তার মনোনীত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এছাড়া ফরাসি সরকারকে ঔপনিবেশিক অপরাধ স্বীকার করে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার জন্য অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছে আলজেরিয়া। অতীতের তিক্ততা মিটিয়ে স্থিতিশীল ও গঠনমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য এ উদ্যোগ উভয় দেশের জন্যই অপরিহার্য বলে মনে করে দেশটির সরকার।
১২ দিন আগে
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত আব্দুল হাই
আলজেরিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ আব্দুল হাইকে সরকার থাইল্যান্ডে দেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
১৫৭০ দিন আগে
আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত জুলকার নাইন
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে উপ-হাইকমিশনার হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মাদ জুলকার নাইনকে সরকার আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
১৫৭০ দিন আগে
বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য দুদেশের মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন গঠনের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৮৫৮ দিন আগে