নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুরের ফুলি বিবির সম্পত্তি বলতে ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই ‘বাড়িটিই’। সেটিও চলে গেল নবগঙ্গার পেটে।
সর্বশান্ত ফুলি বিবি যেন দুঃখের অনুভূতিও হারিয়ে ফেলেছেন। উদাসভাবে চেয়ে থাকতে থাকতে বলেন, ‘এই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমিও নেই, যে সেখানে একটু মাথা গোঁজার মতো জায়গা পাব। আমার বাড়ি গিলে নিয়েছে নবগঙ্গা নদী।’
হঠাৎ আবার সচেতন হয়ে উঠেন। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘কোথায় থাকব, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকব। আকাশের নিচে ছাড়া আমার থাকার কোনো জায়গা নেই।’
একই অবস্থা নবগঙ্গার ভাঙনের শিকার তবিবুর শেখের। তিনি বলেন, ‘আমার সারাজীনের কষ্টের ফসল আমার এই বাড়িটুকু তাও নদীতে চলে গেছে। অনেক কষ্টে আমি বাড়িটা করেছিলাম। আমার আর কিছুই থাকল না। জানি না এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব।’
বসতবাড়ি আর ও আঙিনার সবজি খেতটুকুই ছিল হাসি বেগমের সম্বল। এসব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
হাসি বেগম বলেন, ‘আমার আার কিছুই নেই সব নদীতে চলে চলে গেছে। আশ্রয় নেওয়ার মতো এখন আমার রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই। রাতে ঘুম নেই ঠিকমতো খাবার নেই, কীভাবে রাত দিন পার করছি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’
শুধু কাঞ্চনপুর নয়, নবগঙ্গার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে কালিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। গত ১৫ দিনের অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা, ফসলি জমি, কাঁচাপাকা ঘর, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কালিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসত বাড়ি, বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
বারইপাড়া মাহাজন সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে হাজার হাজার একর ফসসি জমি, ভেসে যাবে শত শত মাছের ঘের।
কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফ মুক্তার বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কে দিন পার করছি। আমাদের এই রাস্তা যদি ভেঙে যায় তাহলে আমাদের বাড়িসহ বাকি সবগুলো বাড়ি নদীতে চলে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের এলাকার সব পুকুর ঘেরসহ ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই এই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।