ছাত্রদল নেতা
মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী হত্যা: ছাত্রদল নেতা রবিনের দায় স্বীকার
রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এলাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন আদলাতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে সেচ্ছায় এ জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জানা গেছে, আসামি তারেক রহমান রবিন রাজধানীর চকবাজার থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক।
এর আগে শুক্রবার (১১ জুলাই) রবিনের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে সেচ্ছায় জবানবন্দি দেন আসামি রবিন।
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড খুবই দুঃখজনক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়। একটি হত্যা মামলা অপরটি অস্ত্র মামলা। এরমধ্যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ৫ দিন এবং তারেক রহমান রবিনকে অস্ত্র মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. সোহাগ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার পর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে আটক করে। পরে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয়।
আরও পড়ুন: মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: তিন আসামিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন যুবদলের
এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যা করার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন।
১৪৫ দিন আগে
সাম্য হত্যা: আসামিদের ধরলেও রহস্য উদঘাটন হবে কবে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ২৭ মে বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এমনকি তাদের মধ্যে দুজন নাকি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ সুস্পষ্ট করে এখনও জানাতে পারেনি ডিএমপি। আবার আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দির সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের মিল নেই বলে দাবি করেছে সাম্যর পরিবার। তাদের দাবি, সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ছাত্রদলও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। সব মিলিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা
সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। এ সময় তারা মেহেদীর গ্রুপের রাব্বির হাতে একটি টিজার গান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) দেখতে পান। টিজার গানটি দেখে সেটি কী— তা জানতে চান সাম্য। এ নিয়ে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর ওই মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি।’
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সে সময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখন চলমান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটিও আমরা নিবিড়ভাবে দেখছি।’
গ্রেপ্তার হওয়া মেহেদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ারটি উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যায় বড় ষড়যন্ত্র থাকলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না: ঢাবি ছাত্রদল
পরিবারের সদস্যের বক্তব্য
তবে পুলিশের দাবির ওপর প্রশ্ন তুলেছেন সাম্যর বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর। এক আসামির আদালতের দেওয়া জবানবন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই নিউজটায় বলে হয়েছে আসামি নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এই খবর যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তো সাম্য হত্যা একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ আকস্মাৎ মারামারির হলে তো দুটো দল প্রস্তুত থাকে না।’
পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেটি বিস্তর তদন্ত করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে আসামির জবানবন্দির কপি চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। পুলিশ জানিয়েছে সেটি আদালত থেকে তুলতে হবে।’
দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, সাম্যকে সুইচগিয়ার দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। দুই গ্রুপের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হত্যার পর আসামিরা পালিয়ে কক্সবাজারে চলে যান। সোমবার (২৬ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে আসামি মো. রিপন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান।
জবানবন্দিতে রিপন বলেন, সাম্যকে হত্যার পর মূল আসামিকে তিনি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দিরের গেটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আরেকটিকে গ্রুপ তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা সবাই কক্সবাজারে পালিয়ে যান।’
তার ‘জবানবন্দি’ অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে দুটি গ্রুপ। ৫ থেকে ৭ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এর মধ্যে দুজন সাম্যকে আঘাত করেন, বাকিরা আশপাশে নজর রাখেন। হত্যাকারীরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি ডিএমপির
সহপাঠীদের বক্তব্য ও পরবর্তী কর্মসূচি
এদিকে, ঘটনাস্থলে থাকা ভুক্তভোগী ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলামের বর্ণনাকে সমর্থন করেছেন। তার দাবি, রাব্বি নামের ছেলেটার হাতেই টিজার গান ছিল।
এর আগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বায়েজিদ বলেছিলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করে।’
ঘটনার আকস্মিকতায় অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
শিশু নাকি তরুণের হাতে টিজার গান ছিল জানতে চাইলে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘তার বয়স খুব একটা বেশি না, ১৮ বা এর কাছাকাছি হবে। তার কাছ থেকেই গানটি কাড়তে গিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে সাম্যর সহপাঠী এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশ এখনও হত্যার মোটিভ বা হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারো হাত আছে কিনা, সেটি বের করতে পারেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটি বের করার জন্য পুলিশকে চাপ প্রয়োগে তৎপর রয়েছি।’
ছাত্রদলের অবস্থান
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ডিবির একাধিক দল গত কয়েক দিনে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মেহেদী হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর রাব্বি’, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন— মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
গত বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাঝে তিনি সাম্য হত্যা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্যর পরিবারও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরাও সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলাম। সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
উদ্যানে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য দমেনি
সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরালো হলেও এর মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত রবিবার (২৫ মে) ছিনতাইয়ের শিকার হন বলে দাবি করেছেন সেখানে ঘুরতে যাওয়া বাপ্পি (১৯) ও তার বন্ধুরা।
তারা ইউএনবিকে জানান, চারটি মোটরসাইকেলে করে ৭-৮ জন তাদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোও লাগানো ছিল বলে দাবি তাদের।
এ ঘটনায় উদ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হালিমকে (৩০) প্রধান আসামি করে শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলে হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেড়াতে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রমনা কালী মন্দিরের পেছনে রাস্তার ওপর আনসার সদস্যের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন বাইকে করে এসে আমাদের জোর করে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। তারা আমাদের পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আমাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরও করা হয়।
এরপর তাদের কাছে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের দুটি ক্যানন ৬ডি ক্যামেরা, ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি ক্যানন ৬ডি মার্ক-২ ক্যামেরা, ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি ক্যামেরার লেন্স, মোট ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি স্মার্টফোন এবং নগদ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইয়ের পর তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা কাজ করছেন।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ না যেতেই আবারও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এর আগে, গত ১৭ মে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজনের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা। এরপর ২৩ মে তাদের ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন— তামিম হাওলাদার (৩০), পলাশ সরদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮), সোহাগ, হৃদয় ও রবিন।
১৮৭ দিন আগে
ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাত ও ভিডিও ফাঁসের অভিযোগ
যশোর জেলা ছাত্রদলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাফার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাত এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ফাঁসের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার আমতলী এলাকার বাসিন্দা মাহিনুর আক্তার মাহি নামের এক তরুণী যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে মাহি ও রাফার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরে রাফা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মাহি রাজি হন এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর রাফার অনুরোধে মাহি যশোরে আসেন। ওই দিন বিকালে মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে রাফা তাকে যশোর আইটি পার্কের পঞ্চম তলার একটি কক্ষে নিয়ে যান এবং সেখানে সন্ধ্যায় বিয়ের আশ্বাসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। এ সময় কৌশলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন রাফা।
আরও পড়ুন: সীমান্তে উত্তেজনা: বাংলদেশের প্রতিবাদ সত্ত্বেও পুশ-ইন অব্যাহত
পরবর্তীতে রাফা তাকে জানায়, তার কাছে কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও আছে—যেগুলো মাহি কথা না শুনলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
ভিডিও ফাঁসের হুমকি দিয়ে মাহির কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন রাফা। টাকা না দিলে ভিডিও ছড়ানোর হুমকি দেন। ভয়ে মাহি যশোর ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে টাকা দেন। পরে আরও কয়েক দফায় মোট ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাহি জানান, ২৩ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বান্ধবী স্বর্ণা খাতুনকে নিয়ে রাফার শংকরপুরের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে সম্পর্কের বিষয়টি জানান। রাফার বাবা-মা সম্পর্ক মেনে নেওয়ার কথা বললেও, রাফা বন্ধুমহলের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন এবং মাহিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
১৯৪ দিন আগে
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলেও এই মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—মূল হত্যাকারী এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে পুলিশের দুই পক্ষ।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাবি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও যে ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হন, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাম্যর সহপাঠীসহ অন্যান্য ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
রহস্য উদঘাটন করেই পুরস্কৃত পুলিশ
এদিকে, দ্রুততম সময়ে সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) শাহবাগ থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট টিমকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ থানার তদন্ত টিমের দ্রুত তৎপরতার কারণে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরুপ ও সামনে আরও ভালো কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্যই এ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।’
পুরস্কার দেওয়ার পরের দিনই (শুক্রবার) সাম্য হত্যায় জড়িত মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—সাম্য হত্যার যিনি মূলহোতা, অর্থাৎ যিনি ছুরিকাঘাত করেছেন, সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা সেই ব্যক্তি ও তার সব সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ অভিযোগ তুলে রবিবার (১৮ মে) আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বর্ণনা ও হত্যাকাণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। পরে খাওয়া শেষে একটি শিশুর হাতে থাকা ‘টিজার গান’ কাড়তে গিয়ে অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, ‘সেদিন আমাদের ইনস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে উদ্যানের গেটের দোকানগুলোতে যাই। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষে সেখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। তার মধ্যেই এই বিপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালনোর চেষ্টা করে।’
‘এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে ছিলেন। তাদের দিকে আমাদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ তাদের একটি বাইকের সঙ্গে আমাদের (বাইকের) ধাক্কা লাগে। এরপরই ওই ব্যক্তিরা আমাদের ওপর তেড়ে আসে।’
আরও পড়ুন: ঢাবির সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৬ দিনের রিমান্ডে তিনজন
ওই ঘটনায় আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরুতে কথা কাটাকাটি হয়, পরে তারা প্রভাব দেখাতে চাইলে আমরাও উত্তেজিত হয়ে যাই। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করে।’
‘১-২ মিনিটের মধ্যেই ঘটনার আকস্মিকতা সামলে দেখি, সাম্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তারপর চোখ যায় তার পায়ের দিকে। দেখি, তার ডান পা রক্তাক্ত। তার পরপরই ধুপ করে পড়ে যায় সে।’কথা বলতে গিয়ে এ সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে বায়েজিদের।
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্য চাই, কিন্তু কেউ সে সময় এগিয়ে আসেনি। পরে একটি ছোট বাচ্চার সাহায্য নিয়ে ওকে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
মূলত তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা এক যুবক বড় ছুরি জাতীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে সাম্যর পায়ে আঘাত করেন। এর পরপরই তিনটি মোটরসাইকেলে করে তাদের ১০-১২ জনের একটি দল দ্রুত পালিয়ে যান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের আঘাতে সাম্যর ডান পায়ের উরুতে গভীর ক্ষত হয়। কাটা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাসপাতালে নিতে নিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই মারা যায় সে।’
পরে এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘উরুর পেছনে শরীরের একটি অন্যতম প্রধান রক্তনালী থাকে, যাকে বলা হয় ফিমোরাল আর্টারি। এটিকে বলতে পারেন দেহের প্রধান রক্তনালীর একটি শাখা রক্তনালী, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে নিজের ধারণার কথা জানান ওই চিকিৎসক।
আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন (বুধবার) সকালে রাজধানীর পৃথক তিনটি স্থান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদারকে (২৮) আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর তাদের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিদের তিনজনই। তারা আদালতকে বলেন, হয়রানি করার জন্য আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রেপ্তারদের অপরাধের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বায়েজিদের দাবি, তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজন আমাদের আক্রমণ করে মারধর করেছেন। তবে মূল হত্যাকারীকে ধরা হয়নি, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইইআর-এর আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম রাফি হত্যাকারীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যে তিনজনকে ধরা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্ত তারা মূল হত্যাকারী নন। সাদা জামা কিংবা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি সাম্যকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওই ব্যাক্তির গায়ের রঙ ফর্সা; তাকে দেখতে মোটেও উদ্বাস্তুর মতো নয়।’
একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফারহান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘হত্যার দিন রাতে আমাদের ইনিস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমরা সাম্য ভাইয়ের সঙ্গেই ছিলাম।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
তার দাবি, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছুরিকাঘাত এবং সোয়া ১২টার দিকে সাম্যকে মৃত ঘোষণা করা হলেও হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থল অরক্ষিত ছিল। ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে ঘটনাস্থলটি রক্ষা করে প্রমাণাদি বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান আসামিকে ধরতে পারল না, অথচ শাহবাগ থানার তদন্ত টিমকে পুরস্কৃত করা হলো। পুলিশের এই ধরনের প্রহসনের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’
পুলিশ কী বলছে
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের ধরতে আমরা শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তল্লাশি অভিযান শুরু করি। পরে শমরিতা হাসপাতাল থেকে একজন ও বিআরবি হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ওই দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তৃতীয়জনকে ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।’
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব!
এদিকে, পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করছে বলে জানালেও রমনা কালী মন্দির ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বায়েজিদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ নাকি তাদের কাছে আছে। অথচ শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান আমাকে পার্সোনালি (ব্যক্তিগতভাবে) ডেকে বলেছেন, পুলিশ মন্দিরের গেট ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি।’
আক্ষেপ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমনা কালী মন্দির একটি ধর্মীয় সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ না পাওয়া ও বাংলা একাডেমির ফুটেজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনের গাফিলতি আছে।’
বায়েজিদের দাবির সত্যতা যাচাই করতে আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি কী পাওয়া যায়নি, সেটা এখন বলা যাবে না। আর এটি তদন্তকারী কর্মকর্তা জানেন। আমি তো এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নই। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বায়েজিদ) সঙ্গে কথা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ অবশ্যই আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর দু-তিন দিন চলে গেছে। আমরা বসেছিলাম না, কাজ করেছি। ঘটনার ক্লু বের করার চেষ্টা করছি।’
পরে এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট হওয়ার যে দাবি, সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আমরা অন্তত ১১টি আলামত জব্দ করেছি। এগুলো নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যার বিচার
সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শনিবার (১৭ মে) ঢাবি প্রশাসন ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে উপাচার্যও সংহতি প্রকাশ করেছেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধীদের আগামীকাল (রবিবার) থেকে রিমান্ড শুরু হবে। দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এ ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ হত্যার বিচার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে।’
উদ্যানের বর্তমান হালচাল
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক একটি স্থানের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তর করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উদ্যানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাম্য হত্যার এক সপ্তাহও এখনও পেরোয়নি, অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণচাঞ্চল্য কমেনি একটুও। আঁধার নামলেও উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে অনেককে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানোসহ একান্তে সময় কাটাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
এসবের মাঝেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চোখে পড়ে। টহলদল দেখলেই লোকজনকে সরে যেতে দেখা যায়, কিন্তু তারা চলে গেলে আবারও উদ্যানে ঢুকছিল মানুষ।
উপদেষ্টার ঘোষণার পর টিএসসি-সংলগ্ন গেটে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন গেট গলে উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায় অনেককে। অনেককে আবার ছবির হাটের গেট এবং টিএসসি-সংলগ্ন গেটের দেওয়াল টপকেও উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত এক আনসার সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উদ্যানের নিরাপত্তা রক্ষায় রাতের শিফটে আমরা মাত্র ৬ জন। এই ছয়জনের পক্ষে এতো বড় উদ্যানে টহল দিয়ে এসব বিষয়ের সমাধান করা কষ্টসাধ্য।’
২০০ দিন আগে
ফেনীতে ছাত্রদল নেতার হামলায় সমন্বয়কসহ আহত ৩
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নারী প্রতিনিধিসহ দুই সাবেক সমন্বয়কের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ফেনী কলেজের বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) রাতে ফেনী সদর হাসপাতাল মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— সাবেক সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, সাবেক সহ-সমন্বয়ক সালমান হোসেন ও প্রতিনিধি নাদিয়া আক্তার খুশি।
এদের মধ্যে মাহফুজ ফেনী শহরের আরামবাগ এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে ও সালমান সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিজয় সিংহ এলাকার বশির আহম্মদের ছেলে এবং নাদিয়া সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আবুল কালামের মেয়ে।
অভিযুক্ত জিল্লুর জেলা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক ও ফেনী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গত ৪ মে তার সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।
হামলার শিকার মাহফুজ বলেন, ‘আমরা তিনজন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এক রোগীকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বের হলে কলেজের কিছু বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে নাদিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে শুরু করে জিল্লুর।
আরও পড়ুন: পতেঙ্গায় নারী ও শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গা আটক
তার ভাষ্যে, ‘নাদিয়াকে গালি দিতে নিষেধ করায় তেড়ে আসে জিল্লুর। পরে সহযোগীদের নিয়ে চাপাতি ও অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
তিনি বলেন, তখন আমরা শান্তভাবে তাকে গালি দিতে নিষেধ করি। এতে তিনি তেড়ে এসে বলে, তোর এত স্পর্ধা। এরপর জিল্লু ও তার সহযোগীরা চাপাতি ও অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
এ ঘটনার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হামলাকারী ছাত্রদল নেতা জিল্লুরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির খবর প্রকাশের পর ওই সাংবাদিককে হত্যা হুমকি দিয়েছিল। এরপরও এই অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তার পক্ষে বিভিন্ন নেতাকে কথা বলতে দেখা গেছে। কি দৈব ক্ষমতা তার।’
সিফাত আরও বলেন, ‘ফেনীর প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয় আমরা দেখতে চাই। পুরোনো সহিংসতার সংস্কৃতি আমরা আর ফিরতে দেব না।’
অবিলম্বে হামলাকারীকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান সিফাত।
এদিকে, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন বলেন, ‘ইতোমধ্যে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জিল্লুরের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এবারও যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মঙ্গলবার রাতে শহরের ট্রাংক রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফেনী জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।
আরও পড়ুন: ফেনীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ফেনীর সময়ে জিল্লুরের চাঁদাবাজি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গত ২৮ এপ্রিল ওই পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজমকে তিনি হত্যার হুমকি দেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ৪ মে জিল্লুরের সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত করে জেলা ছাত্রদল।
২১২ দিন আগে
পটুয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
পটুয়াখালীর কালিকাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যাবসায়ী সরোয়ার তালুকদারের (৩২) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকালে কালিকাপুর ইউনিয়নের পূর্ব হেতালিয়া বাঁধঘাট সংলগ্ন টেঙ্গাতলা এলাকায় তালুকদার বাড়ির ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিজ বসত ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ দেখতে পেয়ে স্বজনরা সদর থানার পুলিশকে খবর দিলে রাতে তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
সরোয়ার তালুকদার টেঙ্গাতলা মরহুম আলতাফ তালুকদার ও হোসনে আরা বেগমের ছেলে।
নিহতের প্রতিবেশী ইসমাইল ফকির, লামিয়া আক্তারসহ স্বজনরা জানান, দুপুরে ফুপুর বাড়িতে খেয়ে এসে আড়াইটার দিকে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান সরোয়ার। সন্ধ্যা ৭টার দিকে চাচাতো বোন মাহিনুর তাকে ঘুম থেকে তুলে দিতে গেলে অনেক ডাকাডাকির পরে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়ির লোকজনকে জানান। এসময় সরোয়ারের চাচা ইউনুস তালুকদার দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তাকে বিছানার উপর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন এবং পুলিশে খবর দেন।
ফুপাতো বোন লুৎফা বেগম বলেন, ঘটনার পরে ঘরে ঢুকে মাঝখানের দরজা এবং দুটো জানালা নিচের দিক দিয়ে ভাঙ্গা দেখতে পেয়েছি এবং সামনের দরজাও সামান্য ধাক্কাতেই খুলে গেছে বলে শুনেছি। আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ঢাবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
প্রতিবেশি মামা সৈয়দ জোমাদ্দার ও নানা হাবিবুর রহমান বলেন, সরোয়ারের সঙ্গে এলাকার কারো কোনো শত্রুতা নেই। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার রাজনৈতিক সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যা করেছে। তার আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই। এটি আত্মহত্যা বলে মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা নয়।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, লাশ ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ডিবি ও সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে কাজ করছে।
২২১ দিন আগে
নিখোঁজের দুদিন পর সেপটিক ট্যাংকে মিলল ছাত্রদল নেতার লাশ
নিখোঁজের দুদিন পর সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে মীর হোসেন ওরফে সাদ্দাম (৩১) নামের এক সাবেক ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের দুর্গাপুর সওদাগরের বাড়ির পাশের নতুন বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: ডুবে যাওয়ার ৬ ঘণ্টা পর শিশুর লাশ উদ্ধার
সাদ্দাম রাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও রাজগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিসানের দোকানের (সোলেমান ট্রেডার্স) ম্যানেজার ছিলেন। তিনি রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মমিনুলের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, দুদিন আগে নিখোঁজ হন সাদ্দাম। এরপর তার পরিবার বিষয়টি মৌখিকভাবে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করে। আজ (শনিবার) সকাল ৬টার দিকে দুর্গাপুর গ্রামের সওদাগরের বাড়ির পাশের নতুন বাড়িতে আম কুড়াতে যায় কয়েকটি শিশু। সেখানে তারা একটি সেপটিক ট্যাংকের ভেতর পলিথিন মোড়ানো অবস্থায় সাদ্দামের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে বিষয়টি দেখে পুলিশকে অবহিত করেন।
আরও পড়ুন: কেরাণীগঞ্জে নারীর মাথাবিহীন খন্ডিত লাশ উদ্ধার
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর ও বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। এদিকে নিহতের গলায় ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ‘হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
২২২ দিন আগে
ফেনীতে ছাত্রদল নেতার ঘর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার
ফেনীর দাগনভূঞায় মো. আশরাফুল হাসান জাবেদ নামের এক ছাত্রদল নেতার বাড়ি থেকে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ককটেল তৈরির ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে বাড়ির নিজ শয়ন কক্ষ থেকে এসব সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই অভিযান চালান।
বিষয়টি যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
মো. আশরাফুল হাসান জাবেদ ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক।
যৌথ বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, শনিবার সকালে ওই যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তার শয়নকক্ষের খাটের পাটাতনের নিচ থেকে এসব সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে আগুন, পানির উৎসের অভাবে নিয়ন্ত্রণে জটিলতা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘ওই ঘরে মাদক রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালাই। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি এবং মাদক ও ককটেল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর আগেই বিষয়টি টের ঘর ছেড়ে পেয়ে পালিয়ে যায় অপকর্মের হোতা মো. আশরাফুল হাসান জাবেদ। পরে তাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।’
২৫৭ দিন আগে
হেরোইনকাণ্ডে শেরপুরে ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি
হেরোইনসহ গ্রেপ্তারের পর শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফরিদ আলমকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) নালিতাবাড়ী পৌরশহরের কালিনগর থেকে হেরোইনসহ যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন ফরিদ আলম।
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে হেরোইনের মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বিষয়টি নিশ্চিত করে শেরপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নিয়ামুল হাসান আনন্দ বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি এবং কোনো নেশাখোরের জায়গা ছাত্রদলে হবে না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার পরিত্যক্ত একটি ঘরে মাদক বেচাকেনা চলছে- এমন খবর পেয়ে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল। অভিযানে আটক হন ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফরিদ আলমসহ চারজন। তাদের দেহ তল্লাশি করে পাঁচ পুরিয়া হেরোইন জব্দ করা হয়। পরে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনা জানার পর শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের নির্দেশে ফরিদ আলমকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় হেরোইন বিক্রির অপরাধে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন
৩৬১ দিন আগে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তাইয়ান আহমেদ ফাহাদ (৩০) নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুইজন।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে রাধিকা-নবীনগর সড়কের ব্রাহ্মণহাতা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফাহাদ জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পৌর এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজছাত্র নিহত
আহতরা হলেন- ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব লিটন সরকার (৩০) ও সদর ইউনিয়নের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান (৪০)।
হাসপাতাল ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির সভায় অংশ নেওয়ার জন্য দুই ছাত্রদল নেতাসহ চারজন দুইটি মোটরসাইকেল করে কসবায় আসছিলেন। ব্রাহ্মণহাতা এলাকায় পৌঁছলে একটি বেপরোয়া অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাইয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দুইজনকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। অভিযোগ সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও ট্রলারডুবিতে নিহত ১২, নিখোঁজ ৫ শতাধিক জেলে
৪৪৬ দিন আগে