ডিভোর্স
ডিভোর্স: কেমন আছেন ঢাকার একক মায়েরা
দেশে বর্তমানে ডিভোর্স বা বিয়েবিচ্ছেদের হার বেড়েছে। অন্তত পরিসংখ্যান সেই কথাই বলছে। এর সঙ্গে ক্রমশ পরিচিত পাচ্ছে একটি টার্ম— সিঙ্গেল মাদার বা একক মা। সন্তান হওয়ার পর ডিভোর্স হলে বেশিরভাগ সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকছে। ফলে নিজের পাশাপাশি সন্তানকে বড় করে তোলার সংগ্রামের ভেতর দিয়েই চলছে একক মায়েদের জীবন।
রাজধানীতে বসবাসরত এমনই কয়েকজন একক মায়ের জীবনের গল্প জানা গেল তাদের মুখে।
তামান্না তিথি (ছদ্মনাম)। ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় থাকেন ৩২ বয়সী এই নারী।
তিথি বলেন, ‘কোনো মেয়েই শখ করে ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে যায় না। আমাদের সমাজে একটা মেয়ের একা থাকাটাই মানুষ বাঁকা চোখে দেখে। আমি ডিভোর্সের পর মানুষ চিনেছি খুব ভালোভাবে।’
‘আপনজনরা দূরে সরে গেছে; নিজের পরিবারও পাশে নেই। তবুও সন্তানকে একটা টক্সিক (বিষাক্ত) সম্পর্কের ভেতর রাখার চেয়ে, স্লো পয়জন গ্রহণ করার মতো ধীরে ধীরে মরে যাওয়ার চেয়ে একবারে কষ্টকে স্বীকার করা ভালো। যেটা ঘটে গেছে, সেটা মেনে নিয়ে চলছি। একা ছেলেকে নিয়ে কষ্ট হয়, তবে মানসিকভাবে শান্তিতে আছি—এটাই অনেক।’
এই নারী মনে করেন, জীবনে সংগ্রাম থাকবেই, উত্থান-পতনও থাকবে। কিন্তু একটা মেয়ে যদি স্বাবলম্বী হয়, তবে তার সঙ্গে কেউ না থাকলেও জীবন অতটা কঠিন হয় না। পায়ের নিচে মাটি থাকা খুব জরুরি।
রেহনুমা দিশা (ছদ্মনাম) থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। সাড়ে ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকেন তিনি।
দিশা বলেন, ‘আমরা (স্বামী-স্ত্রী) একসঙ্গেই ছিলাম, তবে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করেছি (সম্পর্ক) ঠিক করার, কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাডজাস্টমেন্ট (সমন্বয়) হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কখনও মারাত্মক ঝগড়া হয়নি, কিন্তু সব কিছুতে ছিল মতের অমিল। যেটা নিয়ে মনোমালিন্য ছিল, শ্বশুড়বাড়ির মানসিক অত্যাচারও ছিল।’
‘সব মিলিয়ে আর পারছিলাম না। তবে আমার একটা সুবিধা—বাচ্চাকে আমার মা-বাবার কাছে রেখে অফিসে যেতে পারি। কিন্তু সেখানেও অনেকের কটু কথা শুনতে হয়। প্রতিবাদ তো সবাই করতে পারে না আর করে লাভও নেই। তাই নিজের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করি। বাচ্চার জন্য চাকরিটা ধরে রেখার চেষ্টা করি।’
তিনি বলেন, ‘মা-বাবার ওপর আর্থিকভাবে এখন আর নির্ভর করা সম্ভব নয়। এমনিতেই মেয়েকে নিয়ে তাদের কাছে থাকি।’
একেকজন একক মায়ের সংগ্রাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও শব্দটা একই— সিঙ্গেল মাদার।
সিঙ্গেল মাদার টার্মটি বাকি সবার মতো একই হলেও ৩৫ বছর বয়সী এশা করিমের (ছদ্মনাম) জীবনসংগ্রাম আরও কঠিন।
৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন বনশ্রীর একটি বাসায়। পেশাগত কারণে বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয়।
তার কথায়, ‘অনেকদিন ধরে সেপারেশনে (আলাদা) ছিলাম। তখন আমার মেয়েকে দেখার জন্য আরেকটা কিশোরী মেয়েকে রেখেছিলাম। আমি অফিসের কাজে বাইরে থাকলেও ওর কাছে আমার মেয়ে খুব ভালো থাকত।’
কিন্তু ওই মেয়েটি চলে যায় একসময়। পরে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকে নতুন (কাজের) লোক ঠিক করলেও মেয়ে তার সঙ্গে থাকতে সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করে না। ফলে নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এই নারী।
আরও পড়ুন: বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে যা বললেন রাজ
তিনি বলেন, ‘(মেয়ে) প্রচুর কান্নাকাটি করে। একান্ত বাধ্য হয়ে তাকে তার বাবার কাছে আপাতত রেখেছি। সুযোগ পেলেই দেখে আসি বা ছুটির দিনে আমার কাছে নিয়ে আসি। মাত্রই স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। কিছু সময় অফিসের কাজের ফাঁকে স্কুলে গিয়ে দেখে আসি।’
এখন বাবার সঙ্গে থাকলেও তিন-চার মাস পর সেখানে রাখার আর উপায় থাকবে না। এই ভাবনায় এখন থেকেই দুশ্চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে চলছেন তিনি।
‘তখন মেয়েকে কীভাবে রাখব সেটা ভেবে অস্থির লাগে। এদিকে মেয়েকে সপ্তাহের কয়টা দিন দূরে রাখতেও প্রতি মুহুর্তে হাহাকার লাগে। মেয়েকে ভিডিও কল দিলেই বলে— মা, আমাকে তোমার কাছে একেবারে নিয়ে যাও। এটা একটা মায়ের জন্য যে কতটা কষ্টের, তা যারা এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তারা বুঝতে পারবেন। এই কষ্ট আমি অনুভব করি প্রতিনিয়ত।’
‘তবু ওর জন্য বাঁচতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, স্বাবলম্বী হয়ে নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।’
সাজিয়া সাবরিনা (ছদ্মনাম), বয়স ৩৬। সন্তান নিয়ে মা-বাবা, ভাই-ভাবির সংসারে থাকেন মোহাম্মদপুরে। স্বামীর প্রতারণা সামনে আসার পর হঠাৎ করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। চাকরি করেন না, কিন্তু মেনেও নিতে পারেন না। ৪ বছরের মেয়ে ও ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি।
তিনি বলেন, ‘আমি সুশিক্ষিত, কিন্তু ভালো পরিবারে বিয়ে হওয়ায় চাকরিটা করা হয়ে ওঠেনি। নিজেরই তেমন ইচ্ছে ছিল না। আর এই বয়সে চাকরি পাওয়াও কঠিন। দুইটা সন্তানসহ মা-বাবার কাছে বোঝা না হলেও ভাই-ভাবির কাছে যে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই—সেটা বুঝি। সেলাইয়ের কাজ শিখে সেই আয় সংসারে দেই, পাশাপাশি সন্তানদের পড়াই।’
তার কথায়, ‘আত্মসম্মান বাঁচিয়ে ওখান থেকে চলে এসেছি। কিন্তু এখানে কষ্ট করে পড়ে আছি শুধু সন্তানদের কথা ভেবে। এখন বুঝি জীবনের পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। তাই স্বামীর যা কিছু থাকুক, একটা মেয়ের স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরি।’
আরও পড়ুন: শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা সানিয়া মির্জার পরিবারের
‘মেয়ের জন্য ভেবেছিলাম কম্প্রোমাইজ করে থেকে যাই সম্পর্কের টানাপোড়েনের এই সংসারে। কিন্তু যখন দেখি, আমাকে কথার মাধ্যমে নির্যাতন করা দেখে মেয়ে ট্রমাটাইজড (মানসিক চাপে ভোগা) হয়ে যাচ্ছে, তখন সেই সম্পর্কে থাকার চেয়ে বেরিয়ে আসা সম্মানজনক মনে করেছি।’
‘একটা সম্মানজনক পেশায় থাকার পরও অনেককেই এমন মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে দেখেছি।’
তবে দুজন মানুষ আলাদাভাবে ভালো মানুষ হলেও তাদের মতের অমিল হওয়া, অ্যাডজাস্টমেন্ট না হওয়া স্বাভাবিক বলে স্বীকার করে নেন এই নারী। এমন ক্ষেত্রে সন্তানের ভালোর জন্য বিচ্ছেদের পরও কেউ কারও প্রতি অভিযোগ না করে একটা সুস্থ সম্পর্ক রাখা যায় বলে মনে করেন তিনি।
আরও বলেন, ‘আমি কখনোই বিচ্ছেদের পক্ষে না, তবে সম্পর্কে সাবলীল না হলে সেটা কারও জন্যই ভালো কিছু নিয়ে আসে না। সেক্ষেত্রে বেরিয়ে আসাই ভালো। বিচ্ছেদ সবসময় যে নেগেটিভ তা নয়, কিছু সময় মানসিক শান্তি ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
‘অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। তবে সমাজ আগের চেয়ে বদলেছে। আগে ডিভোর্স হলে মেয়েদের শুধু কটুবাক্যই শুনতে হতো। এখন পজিটিভলি সাপোর্ট দেয় সহকর্মী, বন্ধুসহ অনেকেই।’
যা বলছে পরিসংখ্যান
দেশে ডিভোর্সের হার নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে স্থূলবিচ্ছেদের হার শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। তবে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২২ নামের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা বেড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞের মত
বিয়েবিচ্ছেদের কারণ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক এবং উদার মানসিকতার পরিচয় বহন করছে। ডিভোর্সকে শুধু একটা তকমা দিয়েই কারও জীবনকে বিচার করা উচিৎ নয়। সবাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
আগের তুলনায় মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়াও বিচ্ছেদের একটা বড় কারণ বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তার মতে, পরনির্ভরশীলতা মানুষের মনকে দুর্বল করে। শুধু স্বনির্ভর না হওয়ার কারণে অনেকে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বয়ে নিয়ে চলে।
তিনি বলেন, তবে ডিভোর্সের আগে সন্তান থাকলে এখনও তাকে ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান বলা হয়। মানুষ যেমন জীবনের তাগিদে একসঙ্গে থাকে, তেমনি জীবনের প্রয়োজনেই আলাদা হয়। কাজেই এই বিষয়গুলো সন্তানের মনে যেন বিরূপ প্রভাব না ফেলে, তার জন্য ছোট থেকেই তাদের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে। সন্তান যার কাছেই থাকুক, মা-বাবাকে বোঝাতে হবে— তুমি একা নও। যেটা ঘটে গেছে সেটাই স্বাভাবিক বাস্তবতা।
এক্ষেত্রে এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সন্তানদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। মা-বাবার আলাদা থাকা যে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয় এবং হতেই পারে— সেটা সন্তানকে বোঝাতে হবে।
প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আধুনিক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সর্বোপরি, বড় ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলে বিচ্ছেদ কাম্য নয়। একে-অপরের মতের, চিন্তার ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে পারলে বিয়েবিচ্ছেদের মতো বিষয় অনেকাংশেই এড়ানো যায়।
আরও পড়ুন: রাকিবের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানালেন মাহি
৬২ দিন আগে
নাসির-তামিমার বিয়ে: অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি
ডিভোর্স না নিয়ে অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগের মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার শুনানি শেষে ঢাকা অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আদালতে আসামিদের চার্জগঠন (বিচার শুরু) হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
এদিন মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। তামিমা-নাসিরের আইনজীবী মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে শুনানি করেন।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটার নাসির-তামিমার বিয়ে অবৈধ: পিবিআই
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজী নাজিবুল্লাহ হিরু আদালতকে বলেন, তামিমা যথাযথভাবে রাকিবকে তালাক দিয়েছেন। তা কার্যকরের বিষয় কাজী অফিসের। নাসিরের সঙ্গে যখন তামিমার বিয়ে হয় তখন কাবিননামায় তালাকপ্রাপ্ত লেখেন তামিমা। রাকিবকে তামিমা তালাক দিয়েছেন এটা তাদের ব্যাপার। এখানে সুমি আক্তারের (তামিমরা মা) কোনো ভূমিকা নেই। তাই মামলার দায় হতে সবাইকে অব্যাহতির আবেদন জানাচ্ছি।
অন্যদিকে শুনানিতে রাকিবের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ডির্ভোসের পরেও তামিমা-রাকিব একসঙ্গে থেকেছেন। আইনে আছে যিনি তালাক দেবেন তিনি নোটিশ জারি করবেন। কিন্তু তামিমা নোটিশ জারি করেননি। রবং ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়াও তালাকের পর রাকিবের নাম ও পরিচয় ব্যবহার করেছেন তামিমা। এ বিষয়ে তামিমার মা সব জানতেন। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে আবেদন জানাচ্ছি।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক এ বিষয়ে আদেশের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এর আগে, গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
তারও আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটার নাসির হোসেন, তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে ৩১ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করা হয়। সেদিন নাসির ও তামিমার বিয়ে অবৈধ বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটার নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
এরপর মামলার বাদী ও তামিমার প্রথম স্বামী ব্যবসায়ী মো. রাকিব হাসানের পক্ষে তার আইনজীবী ইশরাত জাহান তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত তাদের ৩১ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাকিবকে তালাক দেননি তামিমা। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেয়ায় তামিমা তাম্মী এখনও রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার প্রথম স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ওই দিনই আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর শুনানি শেষে মামলার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
১১৫২ দিন আগে
জীবনের আড়াই বছর মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি: শবনম ফারিয়া
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। একের পর এক খবরের শিরোনামে আসছেন তিনি। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে তার বিবাহবিচ্ছেদের কারণ। যা সামাজিক মাধ্যমে অভিনেত্রী নিজেই জানিয়েছেন।
তবে এ সবকিছু নিয়েই ‘জল ঘোলা’র মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ফারিয়া বেশ কিছুদিন তার ফোন বন্ধ রেখেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে সকল জল্পনার অবসান ঘটালেন তিনি। যেখানে তিনি পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে সবার কাছে পেছনের অনেক কিছুই তুলে ধরেন। যা হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো।
এতোদিন পর এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা আমার জন্য বিব্রতকর। কিন্তু এতো সংবাদকর্মী ভাইদের কল কয়দিন ফোন বন্ধ করে রাখবো? তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু কথা বলতে হচ্ছে...
আরও পড়ুন: মেহজাবীন-রাজীবের প্রেমের গুঞ্জন সত্যি হলো!
প্রথমত আমি একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলাম যেখানে আমি কিছুটা আবেগের বসে ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। শেয়ার করাটা সমস্যা না, সমস্যা হলো আমার পর্দার বাইরের জীবন এতো সাধারণ কিংবা আমার পরিবার এবং চারপাশের মানুষ আমাকে এতোই সাধারণভাবে ট্রিট করে আমি হয়তো বুঝি না যে আমিও সম্ভবত ‘তারকা তালিকায়’ পড়ি এবং আমার একটা কথা নিয়ে আলোচনা হয়! সম্ভবত সেজন্যেই প্রায়ই কিছুটা ব্যক্তিগত কথা লিখে ফেলি।
মূল কথায় আসি - আমি আমার সেই পোষ্টে কোনোভাবেই কোন ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযোগ করিনি। সম্পূর্ণ অভিযোগ ছিল আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে! ডিভোর্স জিনিসটা এতো নোংরা ভাবে না দেখলে হয়তো অনেকগুলো মেয়ের এভাবে জীবন দিতে হতো না!
আমার পয়েন্ট ছিল যেদিন হাতের আঙুল ভাঙে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই বিয়ে অলরেডি টক্সিক হয়ে গেছে! কিন্তু আমরা জীবনের প্রায় আড়াই বছর একটা মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি শুধু মাত্র ‘মানুষ কি বলবে’ এটা ভেবে!
দ্বিতীয়ত আমি বিবাহ্ বিচ্ছেদের পরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমার জীবনে যিনি ছিলেন তাকে সম্মান দেখাতে। যদিও ওনার প্রতি আমার অভিযোগ রাগ ক্ষোভ কোনটারই অভাব নেই। আমি শিওর ওনারও একই অনূভুতি! আমার বিশ্বাস উনিও সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতেই চেষ্টা করেছেন!
এখন আঙুল ভাঙার বিষয়টা অবশ্যই সত্যি, কিন্তু এমন না যে বিষয়টা ও ইচ্ছে করেই করেছে! রাগারাগির এক পর্যায় হাতাহাতি হয়, তারপর আমার আঙুল ভেঙে যায়। তাহলে এখন উনি অস্বীকার কেন করছেন? হটাৎ এমন পাবলিক প্রতিক্রিয়া হলে আপনি কি করবেন?
আপনিও ডিনাই করবেন!
আরও পড়ুন: ৩০ ডিসেম্বর থেকে ‘চরকি’তে দেখা যাবে ‘রেহেনা মরিয়ম নূর’
তৃতীয়ত নিউজ যখন আমার নামের সাথে এসেছে, যার নাম বারবার আসছে তিনি বিষয়টা অস্বীকার করছেন; আর এতো বছর পর যেহেতু কথা উঠছে তখন প্রমাণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা বিল কার কার্ড থেকে পরিশোধ হয়েছে সেগুলো বের করার সুযোগ এখনো আছে। কিন্তু এখনও যেহেতু সেই ব্যক্তির মা কল করলে আমি তাকে এখনও ‘মা’ ছাড়া অন্য কিছু ডাকতে পারি না, তাই মা এবং আমার নিজের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টা এখানেই শেষ করতে চাই!
পুরোনো বিষয় ঘেটে কিচ্ছু পাবো না আমরা দুজন। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা থাকলে বিচ্ছেদের সময়ই আমি এতো প্রেম না দেখিয়ে এসবই বলতাম। হয়তো তখন আমি যেসব সমালোচনা হজম করেছি তা করতে হতো না। লাভটা আমারই হতো।
চতুর্থত, কোথায় যেন সংবাদ দেখলাম এতোদিন পর জানা গেল কি কারনে বিচ্ছেদ হয়েছে আমাদের, এই ঘটনাই নাকি কারন। বুঝলাম এখনও সবার খুব জানার আগ্রহ আমাদের বিচ্ছেদের কারণ কি! আমাদের আসলে সে অর্থে কখনো সংসারই করা হয়নি। কারণ আমাদের নিজেদের কখনো কোন বাসা ছিল না! ওদের তিন বেডের বাসায় ওর মা ওরা চার ভাই, ভাবি, ভাতিজি এবং দুইজন বুয়া থাকতো! সেখানে আমার থাকার জন্য যে ঘর বরাদ্দ্য ছিল সেটার সাথে এটাচড কোন ওয়াশরুম ছিল না। ওর মার বেডরুমে ৭জনের সাথের ওয়াশ রুম শেয়ার করতে হতো। তাই আমি খুব বেশিদিন সেই বাসায় থাকিনি। আমরা তিন বোন এতো ছেলেদের ঘরে এডজাস্ট করতে সমস্যা হতো। তাছাড়া আমার শুটিংয়ের জন্য অনেক কস্টিউম/প্রপ্স অনেক কিছু থাকে। আলাদা একটা কস্টিউম রুমই লাগে! আর আমার মায়ের বাসা আর তাদের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় এবং দুজনেরই বাবা না থাকায় আমরা দুজন দুজনের মার সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম! এর ফলে স্বাভাবিক নিউ ম্যারিড কাপলের মধ্যে যেসব ইন্টিমেসি থাকে তা আমাদের মধ্যে ছিল না! মূলত এই কারণেই আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তে আসি।
পঞ্চমত এতোদিন পরে এ কথা উঠলো কেন?
আরও পড়ুন: নতুন বছরে ঢাকার সিনেমায় নাসিরুদ্দিন শাহ
উত্তর ‘আমার দোষ’! আমি অতি আবেগি হয়ে ঘরের কথা পরকে জানিয়েছি। এভাবে একটা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে লেখার আগে এইটার ফলাফলগুলো আমার ভাবার দরকার ছিল! কিন্তু একটা বিষয় না বললেই নয়, অনেকের মন্তব্য আমার সেই বিচারপতির মতো লাগছে যিনি বলেছিলেন রেপ হওয়ার তিনদিন পর কেন কেইস করেছে? আরও আগে করা উচিত ছিল।
তবে এ বিষয়টা নিয়ে তখনও আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছিলাম যেখানে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যরাই ছিল। কিন্তু পাবলিক প্রোফাইলে এসব লিখলে কি হয় তা তো এবার দেখলামই! জোর করে একজন ভিলেন বানাতে হবেই! অথচ এখান থেকে শিক্ষনীয় হতে পারতো, আমাদের মতো যেন কেউ জীবনের মুল্যবান সময় এভাবে নষ্ট না করে।
এবার আশা করি সবাই সবার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। যেহেতু শুরুটা আমাকে দিয়ে শেষটাও আমি টানতে চাই। সবার দোয়া চাই। আমাদের প্রতি একটু সহনশীল হোন। আমরা দুইজনই আমাদের জীবনে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছি। দুজনই নতুন করে জীবন শুরু করার মানসিকতার মধ্য যাচ্ছি! আমার কোন বিষয়ে দয়া করে ওই ভদ্রলোককে টানবেন না! শুনেছি উনি এখন ভাল আছেন। শান্তিমতো ঘুমাচ্ছে। ওনাকে শান্তিমতো ঘুমাতে দেন।
১১৮৮ দিন আগে
তালাকনামায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পাঠানো তালাক নোটিশ দেওয়ার সময় স্ত্রী সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা লেখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তালাক নোটিশের নির্ধারিত ফরম কেন তৈরি করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
সম্প্রতি এক নারীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: বিয়ে-তালাক ডিজিটালাইজেশন করতে হাইকোর্টের রুল
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ তিন জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত কোনো ফরম নেই। কাজীরা একটি ফরম তৈরি করে তালাক দেওয়া কাজ চালাচ্ছেন। যেই ফরমে নারী সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা লেখা হচ্ছে, যা আপত্তিকর। সে কারণেই বাদী এ রিটটি দায়ের করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার প্রবাসী রাখী কে জামান। তিনি বর্তমানে কানাডার উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে তিন তালাক এখন অপরাধ
আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে রাকিব মুক্তাদির জোয়ারদারের সাথে বিয়ে হয় রাখী কে জামানের। পরে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাখীকে তালাক নোটিশ পাঠান রাকিব মুক্তাদির জোয়ারদার।
ওই নোটিশের একাংশে বলা হয়, ‘স্ত্রী, স্বামীর অবাধ্য– যাহা শরিয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাহার উক্ত চাল-চলন পরিবর্তন করার জন্য আমি নিজেই বহুবার চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু অদ্যবধি তাহার কোনও পরিবর্তন সাধিত হয় নাই। ’
এ ধরনের শব্দ নারীর প্রতি অবমাননাকর, অমানবিক, অযৌক্তিক ও অবৈধ উল্লেখ করে গত ২ জুন হাইকোর্টে রিট করেন রাখী।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে তালাকের পর শ্যালিকাকে জোরপূবর্ক ‘ধর্ষণ’
পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নোটিশে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার একজন নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর। পরবর্তীতে বিয়ে করার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো নানা ধরনের জটিলতার মুখে পড়তে হয়।
রিটে বলা হয়, মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ এবং মুসলিম বিয়ে এবং তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী এ ধরনের শব্দের ব্যবহার স্পষ্টভাবে নারীর মানবাধিকার ও তার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। একই সঙ্গে সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ৩২ অনুচ্ছেদেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
১৩৬৩ দিন আগে
সিসিকে ১০ মাসে তালাকের আবেদন বেড়েছে ৮ গুণ
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) আইন শাখায় দুই হাজার ৩৩৬টি তালাকের আবেদন জমা পড়েছে যা গত বছরের পুরো সময়ের তুলনায় আট গুণ বেশি।
১৫৪৯ দিন আগে
যথেষ্ট কারণ না থাকলে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্তে আসতাম না: ফারিয়া
সদ্য বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া তারকা অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া রবিবার ফেসবুকে নিজের পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, কারণ না থাকলে তিনি বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতেন না।
১৫৭৪ দিন আগে
খুলনায় প্রতি মাসে শতাধিক বিবাহ-বিচ্ছেদ, সংসার ভাঙার ঘটনায় এগিয়ে নারীরা
নারী অধিকার রক্ষায় ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি চলমান থাকলেও খুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা।
১৮৩৮ দিন আগে