স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পাঠানো তালাক নোটিশ দেওয়ার সময় স্ত্রী সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা লেখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তালাক নোটিশের নির্ধারিত ফরম কেন তৈরি করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
সম্প্রতি এক নারীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: বিয়ে-তালাক ডিজিটালাইজেশন করতে হাইকোর্টের রুল
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ তিন জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত কোনো ফরম নেই। কাজীরা একটি ফরম তৈরি করে তালাক দেওয়া কাজ চালাচ্ছেন। যেই ফরমে নারী সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা লেখা হচ্ছে, যা আপত্তিকর। সে কারণেই বাদী এ রিটটি দায়ের করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার প্রবাসী রাখী কে জামান। তিনি বর্তমানে কানাডার উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে তিন তালাক এখন অপরাধ
আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে রাকিব মুক্তাদির জোয়ারদারের সাথে বিয়ে হয় রাখী কে জামানের। পরে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাখীকে তালাক নোটিশ পাঠান রাকিব মুক্তাদির জোয়ারদার।
ওই নোটিশের একাংশে বলা হয়, ‘স্ত্রী, স্বামীর অবাধ্য– যাহা শরিয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাহার উক্ত চাল-চলন পরিবর্তন করার জন্য আমি নিজেই বহুবার চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু অদ্যবধি তাহার কোনও পরিবর্তন সাধিত হয় নাই। ’
এ ধরনের শব্দ নারীর প্রতি অবমাননাকর, অমানবিক, অযৌক্তিক ও অবৈধ উল্লেখ করে গত ২ জুন হাইকোর্টে রিট করেন রাখী।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে তালাকের পর শ্যালিকাকে জোরপূবর্ক ‘ধর্ষণ’
পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নোটিশে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার একজন নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর। পরবর্তীতে বিয়ে করার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো নানা ধরনের জটিলতার মুখে পড়তে হয়।
রিটে বলা হয়, মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ এবং মুসলিম বিয়ে এবং তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী এ ধরনের শব্দের ব্যবহার স্পষ্টভাবে নারীর মানবাধিকার ও তার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। একই সঙ্গে সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ৩২ অনুচ্ছেদেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।