এশিয়া
বিশ্ববাসীর মূল্যায়ন: অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন ইস্যুতে ফোকাস করতে জি২০’র প্রতি আহ্বান
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আস্থা বাড়ানোর জন্য জি২০ গ্রুপের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামনে আসা সমস্যা মোকাবিলায় পুনরায় মনোযোগ দেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির নেতারা একত্রে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করবেন এবং বিশ্ব যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে, সেগুলো মোকাবিলা করার বিষয়ে ঐকমত্য হবে।
বহুপাক্ষিকতা রক্ষা করা
নয়দিল্লিরি জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির সেন্টার অব চাইনিজ অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের চেয়ারপার্সন বি.আর. দীপক বলেছেন, বর্তমান বিশ্বের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থায় বহুপাক্ষিকতার অভাব।
তিনি বলেন, ‘কিছু দেশ; বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলো সুরক্ষাবাদ, নিজ দেশের বাসিন্দাদের স্বার্থ রক্ষার নীতি ও একচেটিয়া প্রভাবের নীতিগুলো মেনে চলছে এবং সম্ভবত উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ধরনের বহুপাক্ষিকতায় বিশ্বাস করে, তারা তাতে বিশ্বাস করে না।’
তিনি আরও বলেন, বহুপাক্ষিকতা হলো জি২০ এর মূল এজেন্ডাগুলোর মধ্যে একটি। আশা করছি গ্রুপটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিকতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাবে।
১৯৯৯ সালে গঠিত হওয়া জি২০ হলো আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম।
এটি ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিয়ে গঠিত। যা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের পটভূমিতে জি২০ অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈঠকগুলো আরও ভালোভাবে সংকট সমন্বয়ের জন্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের স্তরে উন্নীত করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৭টি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের থিম- ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’ (এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ)।
এবারের সম্মেলনে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, ডিজিটাল উদ্ভাবন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ভারতে জি-২০ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে অগ্রগতি প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলোর জন্য একটি অভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে ইনু বলেন, যদিও জি২০ সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, তবে সাধারণ কিছু বিষয়ে অগ্রগতির জন্য এক হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই আইনপ্রণেতা বলেন, অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর উপর রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর প্রভাব পড়া উচিত না। অনেকগুলো দেশের উপর আরোপিত বাণিজ্য বিধিনিষেধ, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন অবশ্যই আলোচনা মূল কেন্দ্রে থাকবে
ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক অস্থিরতা, গভীরতর ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজন এবং উদীয়মান অর্থনীতি ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঋণের চাপ বৃদ্ধিসহ একাধিক চ্যালেঞ্জ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক আপডেট অনুসারে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের আনুমানিক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ৩ শতাংশে নেমে যাওয়ার অনুমান করা হচ্ছে।
ইনু বলেন, বিশ্বের প্রধান উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধিত্বকারী একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম হিসেবে, জি২০-কে টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নর্থ-সাউথ সহযোগিতার প্রসার করতে হবে।
দীপকের দৃষ্টিতে, গ্লোবাল সাউথের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যাগুলোকে কার্যকর অর্থায়ন এবং প্রযুক্তির সহায়তায় সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভবত আরও সহযোগিতা দেখতে পাব। গ্লোবাল নর্থ থেকে এই দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তরসহ নীতি ও তহবিলের আরও সমন্বয় দেখতে পাব।’
দ্য অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক অ্যালান বেহম বলেছেন, বিশ্ব শাসনে জি২০ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বেহম বলেন, ‘এই দেশগুলো মানুষের অগ্রগতিতে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। তাদের অর্থনীতির প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অর্থনীতিও প্রসারিত হয়।’
চীনের সক্রিয় ভূমিকা
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়নে জি২০’র অগ্রণী ভূমিকাকে সমর্থন করে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির আহ্বান জানায়।
ইনুর মতে, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (ইউএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর দুর্বল।
তিনি জি২০-এ আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির জন্য চীনের সমর্থনেরও প্রশংসা করেন।
ইনু বলেন, ‘চীন জি২০ এর মধ্যে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে এবং গ্লোবাল সাউথের স্বার্থের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।’
ইন্দোনেশিয়ার পদজাদজারান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহযোগী অধ্যাপক তেকু রেজাসিয়াহ আশা করেন, চীন অবকাঠামো, গবেষণা ও উন্নয়ন, ওষুধ, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়নে তার সুবিধাগুলো ব্যবহার করে বর্তমান গ্লোবাল সাউথ সহযোগিতার শূন্যতা পূরণের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রচার করবে।
ইনু বলেন, চীন বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বিশ্বাস করেন, চীন এই বছরের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ‘খুব ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে’।
ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপকে সংযুক্ত করে রেল ও শিপিং প্রকল্প ঘোষণা করবেন বাইডেন-মোদি
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার মিত্ররা শনিবার একটি শিপিং করিডোর ঘোষণার পরিকল্পনা করছে যা ভারতকে-মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত সংযুক্ত করবে। গ্রুপ অব-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি সম্ভাব্য গেম চেঞ্জার হিসেবে এটি ঘোষণা করা হবে।
প্রেসিডেন্টের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার বলেছেন, একটি শিপিং এবং রেল পরিবহন করিডোরের জন্য প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জি-২০ -এর অন্যান্য দেশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্টের অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে প্রকল্পটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন। রেল এবং শিপিং করিডোর দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি পণ্যসহ বৃহত্তর বাণিজ্য সক্ষম করবে। এটি চীনের নিজস্ব বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর আরও উচ্চাভিলাষী কাউন্টারগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, যা বিশ্বের আরও বেশি দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায়।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা-মোদি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেননি: মোমেন
ফিনার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রকল্পের জন্য তিনটি বড় যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি প্রথমে বলেছিলেন যে করিডোরটি জ্বালানি সরবরাহ এবং ডিজিটাল যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে জড়িত দেশগুলোর মধ্যে সমৃদ্ধি বাড়াবে। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব মেটাতে সাহায্য করবে। এবং তৃতীয়, ফিনার বলেছেন যে এটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছড়ানো ‘অশান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতার’ ‘পরিবেশ হ্রাসে’ সাহায্য করতে পারে।
ফিনার বলেন, ‘আমরা এটিকে জড়িত দেশগুলোর কাছে এবং বিশ্বব্যাপী উচ্চ আবেদন হিসাবে দেখি, কারণ এটি স্বচ্ছ, একটি উচ্চ মানসম্পন্ন এবং এটি জবরদস্তিমূলক নয়।’
আরও পড়ুন: মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে শত শত নিহত
ফিনার জি-২০ এ বাইডেনের এজেন্ডাও তুলে ধরেন। শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনটি ‘এক পৃথিবী’প্রতিপাদ্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও বিনিয়োগের জন্য চাপ দেওয়ার জন্য প্রতিপাদ্যটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছেন।, যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ প্রণোদনা। বাইডেনও এই বিষয়টি তৈরি করতে চান যে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ অন্যান্য অনেক দেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে, যেগুলোকে তাদের ঋণের উপর উচ্চ সুদের হারের পাশাপাশি বৃহত্তর খাদ্য ও জ্বালানি ব্যয়ের মোকাবিলা করতে হয়েছে।
দ্বিতীয় অধিবেশন‘এক পরিবার’সম্পর্কে বাইডেন এই অংশটি বিশ্বব্যাংকের জন্য অতিরিক্ত তহবিলের জন্য কংগ্রেসে তার অনুরোধ নিয়ে আলোচনা করতে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছেন যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন ঋণের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তৈরি করতে পারে।
ফিনার বলেছেন, হোয়াইট হাউস আরও বিস্তৃতভাবে একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম হিসাবে জি-২০ কে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। যেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উপস্থিত হচ্ছেন না। তবুও, চীন এবং রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করছে এবং এটি জি-২০ এর পক্ষে ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি তৈরি করা কঠিন করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন: বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সম্প্রদায় গঠন ও ঐক্য জোরদারে অঙ্গীকার আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতি সংস্থার (আসিয়ান) ৪৩তম শীর্ষ সম্মেলনে এর সম্প্রদায়, ঐক্য ও কেন্দ্রীয়তা শক্তিশালী করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
'আসিয়ান ম্যাটারস: এপিসেন্ট্রাম অব গ্রোথ' প্রতিপাদ্য নিয়ে ৩ দিনব্যাপী আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বুধবার জারি করা ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের চেয়ারম্যানের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আসিয়ানের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি, আজকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং এর জনগণ, অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য প্রাসঙ্গিক থাকতে শক্তিশালী ও কর্মতৎপরতা, শক্তিশালী সক্ষমতা ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকারিতায় সজ্জিত একটি সংস্থা হিসেবে আসিয়ানকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
আরও পড়ুন: সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে একমত মোদি-শি জিনপিং
এতে আরও বলা হয়, আসিয়ান দেশগুলো এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে তাদের অভিন্ন প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তারা আঞ্চলিকতা ও বহুপাক্ষিকতাকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং জাতিসংঘ সনদ, আসিয়ান সনদ এবং শান্তি, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার অঞ্চলের ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত মূল নীতি, অভিন্ন মূল্যবোধ ও রীতিনীতি মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
সম্মেলনে আসিয়ান কনকর্ড চতুর্থ, আসিয়ান নেতাদের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এর নেতাদের ঘোষণাসহ বেশ কয়েকটি নথি গৃহীত হয়েছে।
আসিয়ান কনকর্ড চতুর্থ এই অঞ্চল এবং এর জনগণের জন্য সংস্থাটির গুরুত্ব নিশ্চিত করতে অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সংহত করে এবং এই অঞ্চল ও এর বাইরেও প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিরাজ করছে।
সামুদ্রিক সহযোগিতা, যোগাযোগ, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এবং অর্থনীতির ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আসিয়ান ভুক্ত দেশগুলো তাদের অংশীদারদের ব্যবহারিক ও বাস্তব সহযোগিতায় নিয়োজিত হতে আরও উৎসাহিত করার অঙ্গীকার করেছে।
আরও পড়ুন: জি২০ সম্মেলনে যোগ দেবে না শি, তবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে: চীন
মহামারি পরবর্তী আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি প্রয়োজন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আরসিইপি চুক্তি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট।’
এতে আরও বলা হয়, সংস্থাটি আসিয়ান লোকাল কারেন্সি ট্রানজেকশন টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠা এবং আসিয়ানের জন্য রিজিওনাল পেমেন্ট কানেকটিভিটি সম্পর্কিত রোডম্যাপ সম্পন্নকে স্বাগত জানিয়েছে।
আসিয়ান দেশগুলো পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে টেকসই পর্যটনের গুরুত্বও উল্লেখ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৬ সালে ফিলিপাইন আসিয়ানের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে বলেও জোটের সদস্যরা একমত হয়েছেন।
১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আসিয়ান। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
আরও পড়ুন: আগামী ৫ ও ৭ সেপ্টেম্বর হচ্ছে আসিয়ান ও পূর্ব-এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন
জি২০ সম্মেলনে যোগ দেবে না শি, তবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে: চীন
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতে এই সপ্তাহের গ্রুপ অব-২০ (জি২০) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে বেইজিং বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দুই এশিয়ান জায়ান্টের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) চীন ঘোষণা করেছে, প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং নয়াদিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জি২০ সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
সীমান্ত বিরোধের কারণে চীন ও ভারতের সম্পর্ক এখনও হিমশীতল। এমনকি বছর তিনেক আগে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষেও জড়ায় এই দুই পরাশক্তি। সে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় এবং চার চীনা সেনা নিহত হয়েছিল।
এমনকি সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দুই পক্ষ কামান, ট্যাঙ্ক, ফাইটার জেট এবং কয়েক হাজার সামরিক কর্মী মোতায়েন করেছে।
বিরোধের উল্লেখ না করে বা প্রেসিডেন্ট শি’র অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণ উল্লেখ না করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, চীনা নেতারা ‘সর্বদাই ভারতের এই বছরের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনকে সমর্থন করেছেন এবং জি২০ শীর্ষ সম্মেলন সফল করতে সকল পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত।’
মাও একটি দৈনিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে চীন-ভারত সম্পর্ক স্থিতিশীল রয়েছে এবং সকল স্তরে সংলাপ ও যোগাযোগ বজায় রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চীন-ভারত সম্পর্কের বৃহত্তর এবং ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের জন্য ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে বাংলাদেশিদের: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
বাণিজ্য, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং চীনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
ভারত ও চীন উভয়ই একে অন্যের সাংবাদিকদের বহিষ্কার করেছে এবং একসময় এক দেশের প্রচুর শিক্ষার্থী অন্য দেশে পড়তে যেত, কিন্তু এখন শিক্ষা বিনিময় শূন্যের কোঠায়।
ভারত সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে এবং কম্পিউটার, ইস্পাত তৈরি, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই দুই দেশ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে।
ভবিষ্যতে সংঘর্ষের সম্ভাবনা কমানোর জন্য চীনা ও ভারতীয় সামরিক কমান্ডাররা গত মাসে বৈঠক করেন এবং লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বরাবর শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার’ প্রতিশ্রুতি দেন।
লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল পশ্চিমে লাদাখ থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের চীন ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে পৃথক করেছে। অবশ্য চীন সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশের মালিকানা দাবি করে।
জি২০-এ যোগ না দিয়ে শি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার একটি সুযোগ প্রত্যাখান করেছে। যখন চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এছাড়া, চীন আরও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে শি নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার নেতাদের বৈঠকেও যোগ দেবেন না।
আরও পড়ুন: যারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের ‘উপযোগী নয়’ বলে দাবি করছে, তারা কখনোই রাখাইন যায়নি: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
অগ্রাধিকারমূলক ঋণ, জিডিআই ও সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন তহবিলের উপযুক্ত ব্যবহার করবে বাংলাদেশ: প্রত্যাশা চীনা রাষ্ট্রদূতের
এবার সূর্য গবেষণায় মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করল ভারত
চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের কাছে সফলভাবে অবতরণের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সূর্য নিয়ে গবেষণা করতে প্রথম মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে ভারত।
আদিত্য-এল১ মহাকাশযানটি দক্ষিণ ভারতের শ্রীহরিকোটা স্পেস সেন্টার থেকে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যানের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে একটি পয়েন্ট থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য উড্ডয়ন করে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) বলেছে, মহাকাশযানটি সূর্যের করোনা, ক্রোমোস্ফিয়ার, ফটোস্ফিয়ার এবং সৌর বায়ু পর্যালোচনার জন্য ৭টি পেলোড (স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগের যন্ত্র) দিয়ে সজ্জিত।
২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের মহাকাশযান অবতরণ করে। ফলে এই অংশে প্রথম অবতরণের স্বীকৃতি পেল দেশটি।
আরও পড়ুন: অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত কী করতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ চন্দ্রযান-৩: ভারতীয় মন্ত্রিসভা
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চাঁদে ভারতীয় মহাকাশযান অবতরণের অঞ্চলে পানির মজুদ থাকতে পারে।
২০১৯ সালে চাঁদে অবতরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে এই মাইলফলক অর্জন করল ভারত।
ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী মনীশ পুরোহিত বলেন, ভারতের সফল চাঁদে অবতরণ এবং সূর্য অধ্যয়নের মিশন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ইসরোর ভাবমূর্তি পরিবর্তন করবে।
ইসরো বলেছে, আদিত্য-এল১ পৃথিবী-সূর্য সিস্টেমের এল১ পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হয়েছে। এই পয়েন্ট থেকে সূর্যের অবাধ গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে সৌর ক্রিয়াকলাপ এবং মহাকাশের আবহাওয়ার ওপর এগুলোর প্রভাব পর্যবেক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চন্দ্রযান-৩: ইসরো
টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় এক নিবন্ধে মহাকাশ বিজ্ঞানী বি আর গুরুপ্রসাদ বলেন, একবার নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে পারলে স্যাটেলাইটটি উচ্চতর সৌর ক্রিয়াকলাপ থেকে পৃথিবীতে পাওয়ার গ্রিড ধ্বংস করার সম্ভাবনা রাখা কণা ও বিকিরণের আক্রমণের নির্ভরযোগ্য পূর্বসতর্কতা সরবরাহ করতে পারবে। উন্নত সতর্কতা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কাঠামোর মেরুদণ্ড ও মহাকাশ স্টেশনে বসবাসকারীদের রক্ষা করতে পারে।
মনীশ পুরোহিত বলেন, ‘এই সাতটি পেলোড আমাদের দৃশ্যমান সম্ভাব্য সমস্ত বর্ণালী (স্পেকট্রাম), অতিবেগুনী ও এক্স-রে রশ্মি আছে এমন অবস্থানে থেকে সূর্যকে একটি নক্ষত্র হিসেবে পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছে।… পুরো বিষয়টি এমন যে আমরা একটি কালো ও সাদা ছবি থেকে সূর্যের রঙিন, হাই-ডেফিনিশন ৪কে রেজ্যুলেশনের ছবি পেতে যাচ্ছি। ফলে সূর্যে যা ঘটছে তা আমাদের কাছে আর অজানা থাকবে না।’
আরও পড়ুন: ইসরো চন্দ্রযান-৩: ভারতের চন্দ্র বিজয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
চীনে ৯ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পর টাইফুন সাওলার আঘাত
হংকং এবং দক্ষিণ চীনের উপকূলীয় অন্যান্য অংশে ব্যবসা, পরিবহন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস স্থগিত করে প্রায় ৯ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পর টাইফুন সাওলা শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ চীনে আঘাত হেনেছে।
গুয়াংডং প্রদেশের আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, শক্তিশালী ঝড়টি রাত সাড়ে ৩টার দিকে হংকংয়ের দক্ষিণে ঝুহাই শহরের একটি দূরবর্তী জেলায় আঘাত হানে। এটি গুয়াংডং উপকূল বরাবর প্রায় ১৭ কিলোমিটার (১০ মাইল) বেগে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, যা সমুদ্রের দিকে যাওয়ার আগে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়।
শুক্রবার, প্রতিবেশী ফুজিয়ান প্রদেশের এক লাখ মানুষ ও গুয়াংডং-এর ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৮০ হাজারেরও বেশি মাছ ধরার জাহাজ বন্দরে ফিরে এসেছে।
কর্মজীবী মানুষরা বাড়িতেই অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন স্কুল বছরের শুরুর পরের সপ্তাহে স্থগিত করা হয়। হংকংয়ের শেয়ার বাজারে লেনদেন শুক্রবার স্থগিত করা হয়। এছাড়া মূল আঞ্চলিক ব্যবসা এবং ভ্রমণ কেন্দ্রে প্রায় ৪৬০টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার ফলে শত শত লোক বিমানবন্দরে আটকা পড়ে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় আঘাত হানতে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিলারি
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি জানিয়েছে, চীনের মূল ভূখণ্ডে রেল কর্তৃপক্ষ শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুয়াংডং প্রদেশে প্রবেশ বা ছেড়ে যাওয়া সমস্ত ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে।
হংকং অবজারভেটরি ১০ নম্বর হারিকেন সতর্কতা জারি করেছে, যা শহরের আবহাওয়া ব্যবস্থার অধীনে সর্বোচ্চ সতর্কতা। ২০১৮ সালে হংকংয়ে সুপার টাইফুন মাংখুট আঘাত হানার পর এটি ছিল প্রথম ১০ নম্বর সতর্কতা।
অবজারভেটরি জানিয়েছে, সাওলা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯৫ কিলোমিটার (১২১ মাইল) বেগে বাতাস বয়ে নিয়ে রাত ১১টার দিকে আর্থিক কেন্দ্রটির সবচেয়ে কাছে চলে আসে। শুক্রবার শহরের সিম সা সুই শপিং ডিস্ট্রিক্ট থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দক্ষিণে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ঝড়ের আইওয়াল, যা তার চোখকে ঘিরে ছিল, রাতারাতি শহর জুড়ে অগ্রসর হচ্ছিল, যা অঞ্চলটির জন্য ‘একটি উচ্চ হুমকি’ তৈরি করেছিল। শনিবার সকাল পর্যন্ত বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
অবজারভেটরি উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক বন্যার বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং বলেছে যে মাংখুট যখন শহরের বিল্ডিংগুলোকে এবং গাছ ভেঙে ফেলেছিল তখন পানির সর্বোচ্চ স্তর একই রকম হতে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, রাজধানী বেইজিংয়ের দূরবর্তী পার্বত্য অঞ্চলসহ বেশ কিছু লোক মারা যাওয়াসহ চীন বিভিন্ন অঞ্চলে তার সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যার সম্মুখীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্রিসে দাবানলে ১৮ জনের লাশ উদ্ধার
হংকংয়ে প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে প্রায় ৪০০ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে এবং ফেরি ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিচু এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করার আশায় তাদের দরজায় বালির বস্তা রেখেছিল।
অনেকগুলো গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে সাতজন আহত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করে। শনিবার সব স্কুলে ক্লাস স্থগিত রাখার কথা ছিল।
নিরাপত্তারক্ষী শার্লি এনজি সহ কিছু বাসিন্দাকে শুক্রবার কাজ করতে যেতে হয়েছিল। এনজি বলেন, মানুষ ঝড়ের মোকাবিলার জন্য খাবার প্রস্তুত করে মজুত করছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আশা করি যে টাইফুন যেন কোন ক্ষতির কারণ না হয়।’
নিকটবর্তী জুয়ার কেন্দ্র ম্যাকাও-এর আবহাওয়া কর্তৃপক্ষও বন্যার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শনিবার সকালে নিচু এলাকায় পানির স্তর দেড় মিটার (৫ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। হংকং, ম্যাকাও এবং ঝুহাই শহরের সংযোগকারী আন্তঃসীমান্ত সেতুটি দুপুরের দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যাকাও নেতা হো ইয়াত সেং ক্যাসিনো কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
আবহাওয়া প্রশাসন জানিয়েছে, আরেকটি ঝড় হাইকুই ধীরে ধীরে পূর্ব চীনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সাওলার প্রভাবের সঙ্গে মিলিত হয়ে গুয়াংডং, ফুজিয়ান এবং ঝেজিয়াং প্রদেশের কিছু অংশে প্রবল বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এটি পূর্বাভাস দিয়েছে হাইকুই রবিবার তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানবে।
হংকং এবং ম্যাকাওতে বিমান পরিষেবার পাশাপাশি বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হারিকেন ইডালিয়ার আঘাতে তলিয়ে গেছে ফ্লোরিডার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
দুটি ঝড় সত্ত্বেও তাইওয়ানকে ভয় দেখাতে চীনের সামরিক বাহিনী শুক্রবার রাতে এবং শনিবার ভোরে আরও অভিযান পরিচালনা করে। তাইওয়ান একটি স্বশাসিত গণতান্ত্রিক দ্বীপ, যেটিকে বেইজিং প্রয়োজনে জোর করে চীনা সার্বভৌমত্বের অধীনে আনতে চায়। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাইওয়ানের চারপাশে ছয়টি চীনা সামরিক বিমান ও তিনটি নৌযান শনাক্ত করা হয়েছে।
এটি বলেছে যে দ্বীপের সশস্ত্র বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিমান, নৌবাহিনীর জাহাজ এবং ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে সতর্ক করে দিয়েছে। তবে চীনা জাহাজ বা বিমানগুলো তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে বা তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
বুধবার সাওলা তাইওয়ানের ঠিক দক্ষিণে অতিক্রম করে চীনের মূল ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হয় এবং এর বাইরের ব্যান্ডগুলো ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে আঘাত হানে।
এছাড়া চলতি সপ্তাহের শুরুতে ফিলিপাইনেও টাইফুন আঘাত হানে। বন্যার কারণে দ্বীপপুঞ্জের উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
আরও পড়ুন: চীনে টাইফুন সাওলা ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
চীনে টাইফুন সাওলা ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) টাইফুন সাওলা ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা সংকেত জারি করেছে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ভারতের গণমাধ্যম এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীনভিত্তিক গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, টাইফুন সাওলার প্রভাবে দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তাই দেশটির চার-স্তরের ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
টাইফুন সাওলার জন্য চীনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থা স্থগিত রয়েছে। এমনকি স্কুলগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত কী করতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ চন্দ্রযান-৩: ভারতীয় মন্ত্রিসভা
টাইফুন সাওলা ঘণ্টায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং ধীরে ধীরে গুয়াংডং প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, চীনের রাজ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও খরা ত্রাণ সদর দপ্তর টাইফুন প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নিতে ফুজিয়ান ও গুয়াংডং-এ সহায়তা কর্মী পাঠিয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র বলেছে, টাইফুন সাওলা শুক্রবার গুয়াংডং প্রদেশ এবং হংকং স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিজিয়নের (এইচকেএসএআর) উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে।
চীনের জাতীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় (স্থানীয় সময়) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সাওলার পাশাপাশি টাইফুন হাইকুই ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম থেকে উত্তরের দিকে ধেয়ে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে পূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগোচ্ছে, আর ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় (স্থানীয় সময়) উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আরেকটি টাইফুন কিরোগি ধেয়ে আসছে।
টাইফুন পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে স্কুলের প্রথম দিন এবং উৎপাদন, ব্যবসা এবং পরিবহন স্থগিত করাসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন অঞ্চলের সমস্ত কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে শেনজেন বাওআন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকল দেশয়ি ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে শেনজেন টাইফুনের সতর্কতা স্তর বাড়িয়ে হলুদ স্তরে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুয়াংডং-এর খরা, প্রাদেশিক বন্যা, খরা ও টাইফুন নিয়ন্ত্রণ সদর দপ্তর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় তার জরুরি সতর্কতা বাড়িয়ে লেভেল ১-এ নিয়েছে।
টাইফুনের প্রভাব বিবেচনা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) থেকে পরবর্তী বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১২১টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।
ন্যাশনাল মেরিন এনভায়রনমেন্টাল ফোরকাস্টিং সেন্টার সব জাহাজকে সতর্ক থাকতে এবং ঝুঁকি এড়িয়ে চলাচল করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ৯ সেনা নিহত
গোপনে আদানি গ্রুপের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ৯ সেনা নিহত
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৯জন সেনাসদস্য নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে।
সামরিক ও তিনজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, দেশে জঙ্গি সহিংসতা ক্রমে বাড়ছে এটা তার লক্ষণ।
সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বান্নুতে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলায় পাঁচ সেনা আহত হয়েছে।
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, আহতদের সংখ্যা ২০।
কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দাবি করেনি।
তবে পাকিস্তানি তালেবানদের সন্দেহ করা হচ্ছে।
কারণ তারা ২০২২ সাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বারবার হামলা করছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে এ অঞ্চল বিদ্রোহীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে পিকআপে বাসের ধাক্কা, আগুন ধরে নিহত ২০
এমনকি তারা প্রকাশ্যে আফগানিস্তানে বসবাস করছে।
বান্নু উত্তর ওয়াজিরিস্তানের প্রাক্তন জঙ্গি ঘাঁটির কাছে অবস্থিত। কয়েক বছর আগ পর্যন্ত যেটি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।
কয়েক বছর আগে দেশটির সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়, এই অঞ্চলের সব জঙ্গিঘাটি নির্মূল করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে ফের উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান নামে পরিচিত স্থানীয় তালেবানরা এই এলাকায় ফের সংগঠিত হচ্ছে।
পাকিস্তানি তালেবান একটি পৃথক গোষ্ঠী হলেও আফগান তালেবানদের সহযোগী।
২০২১ সালে মার্কিন ও ন্যাটোবাহিনী তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের পর আফগান তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে গির্জা ও খ্রিস্টানদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১২৯
পাকিস্তানে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহত ৩০, আহত ৬০
গোপনে আদানি গ্রুপের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দুই ব্যক্তি গ্রুপের কোম্পানিগুলো থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের স্টক কিনেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করে গোপনে এসব শেয়ার কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজারের নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানির অন্তত ২৫ শতাংশ শেয়ার জনসাধারণের ক্রয়ের জন্য রাখা হয়।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই ব্যক্তি ‘দ্বীপদেশ মরিশাসের একটি অস্বচ্ছ বিনিয়োগ তহবিল’ ব্যবহার করে এসব শেয়ার কিনেছেন। পাবলিক শেয়ার প্রায় ১৪ শতাংশই তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত ওসিসিআরপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা একাধিক ট্যাক্স হেভেন, ব্যাংক রেকর্ড ও আদানি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ ইমেলের ফাইলগুলোর উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
প্রতিবেদনে দুই বিনিয়োগকারীর নাম বলা হয়েছে নাসের আলি শাবান আহলি ও চ্যাং চুং-লিং।
বলা হয়েছে, আদানি পরিবারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা গ্রুপের কোম্পানিতে পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: আদানি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বিনিয়োগকারী ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চারটি আদানি কোম্পানিতে বড় পরিমাণে শেয়ার লেনদেন করেছেন।
যদিও আদানি গ্রুপ প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে তার তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আইন মেনে চলছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির স্টক ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
তবে এপি স্বাধীনভাবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরিশাস তহবিলের মাধ্যমে দুই ব্যক্তি আদানি স্টক কেনা-বেচা করেছিলেন এবং ‘এর মাধ্যমে যথেষ্ট লাভ করেছিলেন।’
এতে বলা হয়েছে, এই ধরনের কাজ আইনের লঙ্ঘন কি না সেই প্রশ্নটি আহালি ও চ্যাং আদানি গ্রুপের প্রোমোটারদের পক্ষে কাজ করছে কি না তার উপর নির্ভর করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘যদি ওই দুজন আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আইন অনুমোদিত ৭৫ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের মালিক।’
জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শর্ট-সেলিং হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম আদানি গ্রুপ ও তার প্রধান গৌতম আদানিকে ‘স্টক ম্যানিপুলেশন’ এবং ‘অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির’ জন্য অভিযুক্ত করেছিল। আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
আরও পড়ুন: হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুসারে, সেই অভিযোগগুলোর পরে আদানি গ্রুপ ও গৌতম আদানি ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদ হারিয়েছে।
এক সময়ে এশিয়ার সর্বোচ্চ ধনী গৌতম আদানি বর্তমানে আনুমানিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তালিকায় ২০তম স্থানে রয়েছেন।
৬১ বছর বয়সী আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
সমালোচকরা বলছেন, আদানির সাফল্যের বেশিরভাগই তার সরকার এবং মোদির সান্নিধ্য থেকে এসেছে। মোদিও মাঝে মাঝে আদানি জেট ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছেন।
যদিও বরাবরই সরকারের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আদানি।
হিন্ডেনবার্গের দাবির পরে বিনিয়োগকারীরা আদানির থেকে কিছুটা মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায় অবকাঠামো, কয়লা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং মিডিয়াসহ তার সংস্থাগুলো কয়েক বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য হারিয়েছে।
মার্চ মাসে দেশের বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে, আদানি গ্রুপ নিয়ম লঙ্ঘন বা স্টক মূল্যের হেরফের করেছে কি না তা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন ভারতের শীর্ষ আদালত।
স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, বোর্ড গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল, তাদের তদন্ত প্রায় সম্পূর্ণ এবং অফশোর ডিলের একটি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুকেশ আম্বানিকে হারিয়ে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি
অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত কী করতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ চন্দ্রযান-৩: ভারতীয় মন্ত্রিসভা
চন্দ্রযান-৩ এর সফল প্রেরণে যাদের অবদান ছিল তাদের প্রত্যেকের প্রশংসা করে করেছে ভারতীয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভায় বলা হয়, প্রবল ইচ্ছা, অধ্যবসায় ও অবিচল নিষ্ঠার সঙ্গে ভারত কী অর্জন করতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ হলো চন্দ্রযান-৩।
২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করতে ভারতীয়রা নিজেদের আবারও উৎসর্গ করবে বলে আস্থা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।
ভারত সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের এই যুগে বিজ্ঞানের প্রতি তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।
চন্দ্রযান-৩ মিশনের ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপনে দেশবাসীর সঙ্গে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বলেছে, এ সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতে আগ্রহের শিখা জ্বালিয়েছে এই সাফল্য এবং আমাদের দেশে অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: ইসরো চন্দ্রযান-৩: ভারতের চন্দ্র বিজয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয় এখন ভারতীয় স্বদেশি স্টার্ট-আপে পরিণত হয়েছে। যা ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (এমএসএমই) খাতবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য আরও উন্মুক্ত হবে। এতে লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ করে দেবে।
ভারতের এই অগ্রগতির শিখা সবসময় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের জীবনকে আলোকিত করার চেষ্টা করবে।
ভারতীয় মন্ত্রিসভা বিশ্বাস করে, মহাকাশ ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি শুধু স্মরণীয় বৈজ্ঞানিক অর্জন নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু। যা অগ্রগতি, আত্মনির্ভরশীলতা ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে। এটি উদীয়মান নতুন ভারতের প্রতীকও বটে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও আবহাওয়াবিদ্যা থেকে শুরু করে কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও সুযোগ তৈরি করতে আমাদের সহনাগরিকদের এই পদক্ষেপগুলো কাজে লাগানোর আহ্বান জানাই।’
ভারতীয় মন্ত্রিসভাও বিজ্ঞানীদের অসাধারণ কৃতিত্বের প্রশংসা করেছে।
মন্ত্রিসভা ২৩ আগস্টকে 'জাতীয় মহাকাশ দিবস' হিসেবে পালনের সুপারিশ করেছে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রিসভা বলেছে, ধন্যবাদ আমাদের বিজ্ঞানীদের। কারণ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ হচ্ছে ভারত। নির্ভুলভাবে চাঁদে অবতরণ নিশ্চয়ই স্মরণীয় অর্জন।
আরও পড়ুন: চাঁদে ভারতের চন্দ্রযানের সফল অবতরণ উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদিকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
এতে আশা প্রকাশ করা হয়, চাঁদ থেকে 'প্রজ্ঞান' রোভারের পাঠানো তথ্যভাণ্ডার জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং চাঁদ ও এর বাইরের রহস্য সম্পর্কে যুগান্তকারী আবিষ্কার ও চিন্তাভাবনার ক্ষেত্র প্রশস্ত করবে।
ভারতীয় মন্ত্রিসভা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবনের অন্বেষণের যুগে ভারতের বিজ্ঞানীরা জ্ঞান, নিষ্ঠা ও দক্ষতার উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন।
চন্দ্রযান-৩ ও সাধারণভাবে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির সাফল্যে বিপুল সংখ্যক নারী বিজ্ঞানীদের অবদানে মন্ত্রিসভা গর্বিত। যা আগামী বছরগুলোতে নারী বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তার দূরদর্শী ও অনুকরণীয় নেতৃত্ব এবং মানব কল্যাণ ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির প্রতি তার অবিচল অঙ্গীকারের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়। বিজ্ঞানীদের সামর্থ্যের প্রতি তার বিশ্বাস এবং ক্রমাগত উৎসাহ সবসময় তাদের আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে।
আরও পড়ুন: আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চন্দ্রযান-৩: ইসরো