পুরাতনকে পেছনে ফেলে নব উদ্যমে এগিয়ে চলার বার্তা নিয়ে দেশে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। ভিন্ন আঙ্গিকে এবার চলছে বর্ষবরণের আয়োজন। বর্ণিল আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়েছে এবারের ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এবারের প্রতিপাদ্য—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের আয়োজন নতুন আঙ্গিক পেয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়েছে।

এবারের শোভাযাত্রায় ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নিচ্ছেন। শোভাযাত্রায় রয়েছে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ ও সাতটি ছোট মোটিফ।

প্রথমবারের মতো এ বছর বাঙালির পাশাপাশি দেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গারোসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষেরও নববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক পরিসরে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

পহেলা বৈশাখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন একটি বছর শুরু করা নয়, এটি একটি নতুন সময়ের সূচনা। পুরোনো সব ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে, নতুন আশায় ও সবার মঙ্গল কামনায় জমে উঠবে নববর্ষের উৎসব।

জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আজ স্বাগত জানাবে নতুন বছরকে। সমস্বরে ধ্বনিত হবে— এসো হে বৈশাখ, এসো এসো……. 

এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে পহেলা বৈশাখ দিনটি উদযাপনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে সরকারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সরকারি ছুটি।

ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে প্রভাতি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এবারে অনুষ্ঠানের মূলভাব ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। 

সরকারের নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। 

এ ছাড়াও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে ড্রোন শো। 

এদিকে এই উৎসব ঘিরে যেন কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যেও ঢাবির চারুকলা অনুষদের তৈরি ‘স্বৈরাচারের মুখাবয়ব’ মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রবিবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশ, র‌্যাবসহ গোয়েন্দাবাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।