বৈদেশিক-সম্পর্ক
ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ফিরতে ঢাকার সহযোগিতার প্রশংসা দিল্লির
ভারতীয় ৬ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে যে 'চমৎকার সহযোগিতা’ পেয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত আমাদের ৬ হাজার ৭০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে চমৎকার সহযোগিতা পেয়েছি।’
আরও পড়ুন: ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সচল, জরুরি নয় এমন কর্মীদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমোদন: স্টেট ডিপার্টমেন্ট
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতায় তারা তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য তারা 'গভীরভাবে' কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে সম্পর্ক দৃঢ়, উষ্ণ ও অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। ‘এভাবেই আমরা দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দেখি।’
তিনি বলেন, ভারতের হাইকমিশন সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট বা বিমানবন্দরে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন: চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের হাইকমিশন ও সহকারী হাইকমিশনের বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন পরিচালনা করছে এবং সেখানে থাকা আমাদের সব লোক, শিক্ষার্থী ও আমাদের নাগরিকরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা যেকোনো সহায়তার অনুরোধ করলে, তা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে অনুভব করে। ‘আমরা আশাবাদী, দেশের পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
ভারত বাংলাদেশের ঘটনাবলী 'নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ' করছে এবং ভারত দেশটির চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে মনে করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মূল্যবোধ নবায়নের আশাবাদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের
সহিংসতা বন্ধ করে দেশে ইন্টারনেট ফেরানো ও দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের আহ্বান
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে চলা অচলাবস্থার ঘটনায় জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরানো ও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোপুরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে আক্রমণ, হুমকি বা চাপ না দিয়ে ঘটনাবলীতে পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকে অবশ্যই জনগণের তথ্য অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আটক, জোরপূর্বক গুম, হত্যা বা অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের সংখ্যা পূর্ণ স্বচ্ছতা ও যথার্থতার পাশাপাশি প্রমাণের সঙ্গে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা
সতর্ক করে তারা বলেন, বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি প্রত্যাহারে আদালতের সাম্প্রতিক রায় সঠিক পথ নির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তা যথেষ্ট হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনগণের আস্থা ফিরে পেতে সরকারকে দায় নিতে হবে এবং দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে তদন্তের একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা হলেন- মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংহতিবিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া বেইলিয়েট; গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা প্রচারবিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ জর্জ ক্যাটরুগালোস; বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিঞ্জ; বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত মার্গারেট স্যাটার্থওয়েট; মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত আইরিন খান; উন্নয়নের অধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক সূর্যদেব; শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদক ফরিদা শহীদ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার অধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক জিনা রোমেরো; মানবাধিকার রক্ষীদের পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মেরি ললর; চেয়ার প্রতিবেদক আউয়া বাল্ডে; ভাইস চেয়ার গ্যাব্রিয়েলা সিট্রোনি; গ্রাসিনা বারানভস্কা এবং জোরপূর্বক বা অনিচ্ছাকৃত অন্তর্ধান সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ আনা লরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ।
আরও পড়ুন: চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়েবভিত্তিক মোবাইল ফোন যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সংবাদ পরিবেশন ও তথ্যে প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
এই সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগও বিঘ্নিত হয়েছে। কার্যত বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এরপর ২৩ জুলাই কিছু কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মূল্যবোধ নবায়নের আশাবাদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নিরীহ মানুষের প্রাণহানিসহ সাম্প্রতিক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের ফলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধের নবায়ন ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষে ঢাকা ত্যাগ করার প্রস্তুতিকালে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যান্ডেলে তার উপলদ্ধি ও আশার কথা তুলে ধরেন। এতে তিনি ন্যায়বিচারের গুরুত্ব এবং বাংলাদেশ যে মূল নীতিগুলোর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার শক্তিশালীকরণের উপর জোর দেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনাবলির দিকেও আলোকপাত করেছেন রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গাড়ি রেখে সিএনজিতে ইইউ রাষ্ট্রদূত
রাষ্ট্রদূতের বার্তাটি ঐক্য ও সহনশীলতার আহ্বান জানিয়েছে। এতে যারা চড়া মূল্য দিয়েছে তাদের সম্মান জানানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হাওর-উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে: ইইউ রাষ্ট্রদূত
এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক, আমি মর্মাহত: মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনের পর জাপানের রাষ্ট্রদূত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে গত কয়েকদিন ধরে চলা সহিংসতা মেট্রোরেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পরিদর্শন করে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, তিনি মর্মাহত। মেট্রোরেল স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বুধবার (২৪ জুলাই) ঢাকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে আমি হতবাক। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকা এমআরটির মারাত্মক ক্ষতিতে আমি মর্মাহত। এটা আমার কাছে খুবই হৃদয়বিদারক মনে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ক্ষয়ক্ষতি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশি ও জাপানি- সংশ্লিষ্ট সবাই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ঘাম ও শ্রম দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি মেট্রো ট্রেনে যেসব যাত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে, তাদের হাসিমুখ আমি কখনো ভুলতে পারব না। তাই হামলার কারণে মেট্রোরেলের পরিচালনা স্থগিত করা দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন: মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল বন্ধ, পুলিশ বক্সে আগুন
রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতদের পাশাপাশি শোকাহত পরিবার ও তাদের বন্ধুবান্ধব এবং আহতদের প্রতি গভীর দুঃখ ও সমবেদনা জানান।
কিছু লোক এই ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ঢাকা মেট্রোরেলসহ তাদের সার্বিক সহায়তাকে সমর্থন করে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
ইওয়ামা বলেন, ‘আমি ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা সংস্কারসহ এই দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করে যাব।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরিস্থিতির আর অবনতি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশের জনগণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসিমুখে তাদের দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন: অপরাধীদের রুখতে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে: মেট্রোরেলে তাণ্ডব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগের বিষয়ে একটি পক্ষপাতহীন, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে তার কার্যালয় প্রস্তুত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এ সহায়তার আশ্বাস দেন।
বিবৃতিতে তুর্ক বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি বিক্ষোভে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না- এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
‘ভবিষ্যতেও কোনো প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষার জন্য দেশের নিরাপত্তা খাতের দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপক সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের আহ্বান
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে। এর ফলে (দেশের জনগণের মাঝে সরকারের প্রতি) আস্থার জায়গা ফের উন্মুক্ত হতে পারে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অর্থবহ এবং যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের দিকে পরিচালিত করবে।’
সহিংসতায় উস্কানি দেয় বা ভিন্ন মতালম্বীদের ওপর দমনপীড়ন শুরু হয়- এ ধরনের সমস্ত কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে দেশের রাজনৈতিক কলাকুশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসব কারণে দেশ সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়েছিল, সেসব অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সংলাপের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহের বিক্ষোভ দমনে দমনপীড়নের বিষয়ে আমি জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণ বিবরণী প্রকাশ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
তিনি দাবি করেন, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সরকারি নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশে ১৭০ জনের বেশি নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন; অনেকে নিখোঁজও রয়েছেন।
তিনি জানান, সহিংসতায় অন্তত দুজন সাংবাদিক নিহত ও বহু মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে শত শত মানুষকে, যাদের মধ্যে বিরোধী দলের নেতারাও রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান দেখতে চায় বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদাররা: হোয়াইটলি
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেন, ‘নিহত, আহত বা আটকদের পরিবারের সুবিধায় সরকারের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘দেরি না করে সরকারকে পূর্ণ ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধার করতে হবে, যাতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসহ সকল মানুষ অবাধে ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যোগাযোগ করতে পারে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সচল, জরুরি নয় এমন কর্মীদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমোদন: স্টেট ডিপার্টমেন্ট
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সচল রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 'জরুরি নয় এমন কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের' অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, 'বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের কনস্যুলার ও অন্যান্য সেবা দিতে দূতাবাস খোলা রয়েছে।’
তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা অবশ্যই তাদের প্রথম অগ্রাধিকার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনতে পারে: হাছান মাহমুদ
বুধবার (২৪ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মিলার বলেন, 'যদি কোনো মার্কিন নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন এবং তারা যদি কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে চান, তাহলে আমরা আমাদের দূতাবাসে যোগাযোগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মিলার বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, 'কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ঢাকায় আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
শিগগিরই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মিশনের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ ছাড়ার প্রয়োজন নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি বিরাজ করছে না যাতে তাদের (বিদেশিদের) বাংলাদেশ ছাড়তে হবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ বিঘ্ন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে চলমান পরিস্থিতিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ উল্লেখ করে ভারত আশা প্রকাশ করেছে যে, শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত মনে করে, বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা আশাবাদী যে, পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
জয়সওয়াল বলেন, ‘ভারতীয় শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের সাহায্য করায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার আমরা গভীর প্রশংসা করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘(পশ্চিমবঙ্গের) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি বলতে চাই, তার সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তার বক্তব্য কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।’
এর আগে, গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবার এটিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে অভিহিত করে।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের মুখপাত্র সেদিন নয়া দিল্লিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের তারা সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
উল্লেখ্য, ভারতের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১৫ হাজার নাগরিক বাংলাদেশে বসবাস করেন।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভে দুই মৃত্যু নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ভিত্তিহীন দাবির’ সমালোচনা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কেও তারা অবগত।
বাংলাদেশে বসবাসরত শিক্ষার্থীসহ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি পরামর্শমূলক নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির সরকার। তাদের নিরাপত্তা ও যেকোনো প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা কার্যকর হেল্পলাইনও চালু করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন নিয়মিত আপডেট জানাবে।
ইতালির রাষ্ট্রদূতের নামে ভুয়া এক্স অ্যাকাউন্ট অপসারণ
ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রোর নাম ব্যবহার করা ভুয়া একটি অ্যাকাউন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ইতালির রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তার নামে এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে।
ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের প্রোফাইল থেকে যে বার্তা এসেছে তার জন্য রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো দায়ী নয়। ওই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সাম্প্রতিক আন্দোলন-সংক্রান্ত কিছু ছবি ও বার্তা শেয়ার করা হয়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ব্রুনেই ও ইতালির রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ
দূতাবাসের কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানায়, ভুয়া অ্যাকাউন্টটি সরিয়ে ফেলতে ঢাকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানায় ইতালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ায় এবং রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো ও দূতাবাসের কর্মীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ায় ঢাকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তুরস্ক ও ইতালির রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
ইন্ডিয়া টুডে এনইর মিথ্যা নিউজের প্রতিবাদ দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এনইর অনলাইন ও এক্স অ্যাকউন্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন।
গত ২১ জুলাই ইন্ডিয়া টুডে এনই “Indian students flee Dhaka amid violent clashes, PM Sheikh Hasina airlifted” শিরোনামে একটি সংবাদ অনলাইনে প্রকাশের পাশাপাশি তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে এ সম্পর্কিত একটি পোস্ট করে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাঠানো এক প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, 'আমরা ইন্ডিয়া টুডে এনইসহ সব সংবাদমাধ্যমকে সতর্ক থাকার এবং ইস্যুটির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় বস্তুনিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদন নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’
গত ২২ জুলাই হাইকমিশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে লিখিত প্রতিবাদ পাঠান মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ।
নিবন্ধটি বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এক্স পোস্টে লেখা হয়েছে: ‘বিভিন্ন প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকায় তার বাসভবন থেকে হেলিকপ্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার বর্তমান অবস্থান এখনো অজানা।’
বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও ওই প্রতিবেদন ও পোস্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তারপরও এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ-বিদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ওই প্রতিবাদের বলা হয়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এই ভুল সংবাদ ও পোস্টে আমি চরম হতাশা প্রকাশ করছি। আপনারা ভালো করেই জানেন, চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারণে আমাদের দেশ একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
হাইকমিশন বলেছে, ‘যেকোনো দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে এ ধরনের ভুল তথ্য ও গুজবনির্ভর সংবাদ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে; এমনকি সংকটে ইন্ধন যোগাতে এবং পরিস্থিতিকে আরও বিশৃঙ্খল করে তুলতে পারে।’
অধিকন্তু, সংবেদনশীলতার বিষয় মাথায় না রেখে এ ধরনের প্রতিবেদন করা কেবল জনগণ ও সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না; বরং যেকোনো সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে ২১ জুলাই ঐতিহাসিক রায় দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির কোটা বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
হাইকমিশন জানায়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার জনগণ ও সম্পত্তির সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর ফলে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ধ্বসযজ্ঞের চিত্র দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত হয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, তারা এ ধরনের তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা জানাতে ‘শেইম’, ‘শেইম’ উচ্চারণ করে বলেছেন- এটি তোমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি।’
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালে বিদেশি মিশনপ্রধান ও কূটনীতিকদের নিয়ে সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত ও পুড়ে যাওয়া রাজধানীর চারটি স্থাপনা পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা জানান।
ড. হাছান বলেন, ‘আজকে আমরা ডিপ্লোম্যাটিক মিশনগুলোর বাংলাদেশে কর্মরত কূটনীতিকদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান- সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মিরপুর ১০ মেট্রোরেল স্টেশন ও বিটিভি ভবনের মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল তাদের আরও কয়েক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডেটা সেন্টার। কিন্তু রাস্তায় প্রচুর যানজট ও বৃষ্টির কারণে অনেক বেশি সময় লেগেছে। তবে তারা মিরপুরের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন; সেখানে কীভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি ফুটওভার ব্রিজও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনে যেভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেখানে ১২ তলা পর্যন্ত আগুন দিয়েছে; সাততলা পর্যন্ত তারা উঠে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করাই ছিল বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিভি হচ্ছে টেলিভিশনের আঁতুর ঘর। আজকে যারা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চালান, তাদের অনেকের হাতেখড়ি হয়েছে বিটিভিতে। এই অঞ্চলের এবং বাংলা ভাষার প্রথম টিভি চ্যানেল বিটিভি। ১৯৬৪ সালে এটি স্থাপিত হয়। ভারতে তখনও টেলিভিশন চ্যানেল হয়নি। সেখানে যেভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ, সারি সারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে!’
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের পাশের গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এগুলো জনগণের সম্পত্তি। তাদের হামলা তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে।’
‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল জ্বালিয়ে দেয়নি, কিন্তু এরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে, এরাও একই কায়দায় মানুষের সম্পত্তি, রাষ্ট্রের সম্পত্তি পুড়িয়েছে।’
ড. হাছান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে আমাদের মিশনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। সেখানে পাকিস্তানিরা যোগ দিয়েছিল। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেটি আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। একইভাবে আমাদের বিভিন্ন মিশনের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানে বিএনপি-জামায়াত চক্র পাকিস্তান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই সহায়তা নিয়ে এসব জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে কূটনীতিকরা যাওয়ার পর অনেকেই বলেছে- দিস ইজ শেইম, শেইম। অনেকেই আমার কাছে তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছে, সবাই বলেছে- ইটস ইওর ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার, উই আর উইথ ইউ।’
কূটনৈতিক অঙ্গনে এ সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও উঠে আসে মন্ত্রীর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি মিশনগুলোর কাছে নোট পাঠিয়েছিলাম যে, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি নিয়ে যেন বিদেশি দূতাবাস বা কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি না পাঠায়। তারা সেটি মেনে চলেছে। আজকে তারা গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। সেজন্য গণমাধ্যমকে সেখানে ডাকিনি।’
আরও পড়ুন: সপ্তাহজুড়ে সংঘর্ষের পর স্বাভাবিক হচ্ছে বাংলাদেশ, নিহত প্রায় ২০০: এপি
এসময় গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘অতীতে এ ধরনের কিছু ঘটলেই আমাদের কুটনীতিকদের উদ্বুদ্ধ করা হতো কথা বলার জন্য। এবার আপনারা (গণমাধ্যম) সেটি করেননি, সেজন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত আর বাংলাদেশি শ্রমশক্তি না নেওয়ার কথাটি সম্পূর্ণ গুজব। আজকেও ইউএই রাষ্ট্রদূত এটি নিশ্চিত করেছেন।’
প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ফিলিস্তিনসহ রাশিয়া, চীন, জাপান, তুরস্ক, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ব্রুনাই, মিশর, আলজেরিয়া ও আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ, ইউএনডিএসএস, আইইউটি, আইএফডিসির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের ৪৯ জন কূটনীতিক এ পরিদর্শনে অংশ নেন।
এসময় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।