প্রধানমন্ত্রীর-কার্যালয়
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে সজাগ থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
আগামীতে কেউ যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আর বিকৃত করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে চেতনায় জাগ্রত করতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত চেতনাকে যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ বিকৃত করতে না পারে সেজন্য সবাই সজাগ থাকুন।’
শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের নির্বাচিত চিত্রকর্ম নিয়ে “এ রেট্রোস্পেকটিভ ১৭৯৭৩-২০২৩” শীর্ষক বিশেষ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে মাসব্যাপী একক শিল্প প্রদর্শনীতে শাহাবুদ্দিনের ১৪০টি নির্বাচিত শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন: জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা বলেন, চিত্রকর্ম মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। তিনি বলেন, ‘শিল্পকর্মগুলো মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও চেতনা জাগ্রত করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও ইতিহাস- সবকিছুই মুছে যাওয়ার পর কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও লেখকরা তাদের রচনায় চেতনা ধরে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু তারা সে সময় চেতনা ধরে রেখেছিলেন, তাই আমরা, রাজনীতিবিদরা, পরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক উপায়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশ গড়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরতে শুরু করেছে, যা একটি বড় অর্জন।
মাসব্যাপী প্রদর্শনীর সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তার শিল্পকর্ম বাংলাদেশের প্রকৃতি, দেশের মানুষের অবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিফলিত করে।
তিনি আরও বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন । এখনো তার শিল্পকর্মগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা ও চেতনা প্রতিফলিত হয়। এটি আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করে। তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এখনও সেই অনুভূতি বহন করেন।’
প্রদর্শনী পরিদর্শনে এসে জনগণ দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ তিনি তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী “শাহাবুদ্দিন, এ রেট্রোস্পেকটিভ ১৯৭৩-২০২৩” শিরোনামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে রেট্রোস্পেকটিভের উদ্বোধন করেন এবং প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত শাহাবুদ্দিনের একক চিত্রকর্ম পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপু, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক খলিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান।
আরও পড়ুন: আপনার অর্জন খুবই আকর্ষনীয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বাইডেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে আলোচনা চলছে
মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করুন: জনপ্রতিনিধিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
মাদকের বিস্তার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কেউ যাতে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে না জড়ায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩ উপলক্ষে তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের ৫ হাজার ৪৭৪টি স্থানীয় সরকার সংস্থা- ১২টি সিটি করপোরেশন, ৬১টি জেলা পরিষদ, ৩২৯টি পৌরসভা, ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ এবং ৪ হাজার ৫৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে এবং মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদান করছে।
তিনি বলেন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার উন্নয়নে যা যা করা দরকার সরকার তা করবে।
তিনি জনপ্রতিনিধিদের মনোযোগ দিতে বলেছেন, যাতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যথাযথ পরিষেবা দেয় এবং সচেতনতা সৃষ্টি করে, বিদেশি চাকরিপ্রার্থীরা যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত না হয় এবং তারা ব্যাংকগুলো থেকে; বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে জামানত দিয়ে ঋণ নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদের খাদ্য উৎপাদনে কাজ করতে এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে জনগণকে উৎসাহিত করতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যা সম্পদ আছে তা ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি সবাইকে সেই অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান করছি।’
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু বলে নিজেদের অবজ্ঞা করবেন না: হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনবার সরকার গঠনের পর স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। ‘এ কারণেই গ্রাম-পর্যায় পর্যন্ত আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি।’
এখনো অনেক গ্রামে মাটির রাস্তা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল যদি আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে তারা এসব রাস্তারও উন্নয়ন করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গ্রামকে শহরের মতো গড়ে তোলা হবে।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিদের সঠিকভাবে সেবা দিয়ে জনগণের ভরসা ও আস্থা অর্জনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আপনারা তৃণমূলের মানুষ তথা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাই জনগণের কল্যাণে কাজ করা আপনার, আমার এবং সবার (জনপ্রতিনিধি) দায়িত্ব। জনগণের জন্য কাজ ও সেবা করে তাদের ভরসা ও আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যেতে হবে। আপনাদের ভরসা ও আস্থা অর্জন করতে হবে, যাতে জনগণ আবার আপনাদের ভোট দেয়।
আজকের উন্নয়নের সাফল্য দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ জনগণকে সজাগ থাকতে বলেন। যাতে তার ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলের মতো অর্জনকে কেউ নষ্ট করতে না পারে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি, যা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে, তা অব্যাহত রাখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশ' নির্মাণ এবং ২০৩০ সালের এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে বৈশ্বিক মঞ্চে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও স্থানীয় সরকার সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও সিলেটের পাঁচ সিটি করপোরেশনের মেয়র; চট্টগ্রাম ও পিরোজপুর দুই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; পটুয়াখালীর দুমকি ও চট্টগ্রামের রাউজান, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও রংপুর সদরের চারটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; দুটি পৌরসভার মেয়র- নীলফামারী সদর ও নাটোর সদর; ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের দুই সদস্য; জুড়ী উপজেলা (মৌলভীবাজার) ও মোহাম্মদপুর উপজেলা (মাগুরা) থেকে দুই ভাইস চেয়ারম্যান; আটটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা হলেন- নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন (রাউজান উপজেলা, চট্টগ্রাম), গোলাপগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি, চাঁদপুর সদরের বাগাদী, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়কাশিয়া বিরামপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া, মোড়লগঞ্জের তেলেগাতী, লালগঞ্জ উপজেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলা, সিলেটের সুরমা ও নরসিংদীর রায়পুরার পাড়াতলী ইউনিয়নসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: ‘লুটেরাদের’ ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: দ. আফ্রিকায় প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
একনেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার ১৯ প্রকল্প অনুমোদন
মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে একটি প্রকল্পসহ মোট ১৮ হাজার ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন ‘আজ বৈঠকে ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট আনুমানিক ব্যয় ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।’
পাস করা প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মধ্যে ১২ হাজার ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে দেওয়া হবে। আর পাঁচ হাজার ৫৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা আসবে বৈদেশিক সহায়তা হিসাবে বহিরাগত উৎস থেকে এবং বাকি ৪৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে ১২টি নতুন প্রকল্প এবং সাতটি সংশোধিত প্রকল্প।
তিনটি বৃহত্তম প্রকল্প হলো ৪ হাজার ২৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ‘মোংলা বন্দর সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প; দুই হাজার ৭৬২ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়‘চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলের ট্রান্সমিশন অবকাঠামো এবং কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’ প্রকল্প; এবং দুই হাজার ৬৮১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টের জরুরি সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন: একনেকে ১৩,৬৫৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন
এম এ মান্নান বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত এক বিলিয়ন জলবায়ু তহবিল থেকে তহবিল পেতে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নকশা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু তহবিল থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পানির প্রবাহ ও চ্যানেলের বন্যার পানি অপসারণ নির্বিঘ্ন করতে নিচু এলাকা ও হাওরে আরও সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের প্রতি নির্দেশ দেন।
বৈঠকের শুরুতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত অংশগ্রহণের জন্য উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে কারণ এটি বিশ্বমঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ও দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে।
তিনি বলেন, একনেক আরও উল্লেখ করেছে যে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর বৈশ্বিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে।
বৈঠকে ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ স্থান করে নেবে বলে উল্লেখ করা হয়।
আগস্টে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়ে মান্নান বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং সরকার এ বিষয়ে অনেক সচেতন। "আমরা অতীতের মতো এটিকে সম্বোধন করব," তিনি বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: একনেকে ১২ প্রকল্পের অনুমোদন
অন্য ৯টি নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ৫৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে‘ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া-কারেরহাট সড়ক প্রশস্তকরণ (ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক) (জেড-১০৩১) এবং ফেনী নদীর উপর শুভপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প; এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে রায়েরবাজার এলাকায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ; ১৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘উৎপাদনশীল এবং সম্ভাব্য কাজের সুযোগ (স্বপ্ন) - ২ অংশ’ প্রকল্পের সুবিধাভোগী নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি; ১১০ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে মাজার মসজিদ নির্মাণ’ প্রকল্প; ২৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কর্মসূচি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প; ৩০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদীমাতৃক চারণ এলাকায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন; ৬২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা শাখা নদীর ভাঙন থেকে হিজলা উপজেলার পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প; ৮৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা প্রকল্প এবং ৮২৭ দশমিক ০২ কোটি টাকায় চাঁদপুর সিটি রক্ষা ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
আরও পড়ুন: একনেকে ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়সহ ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন
সাতটি সংশোধিত প্রকল্প হলো- ‘জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রস্থে উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় ১০৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা (বর্তমানে ব্যয় বেড়েছে ৮৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা); ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের গুদারাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় ১৪৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (বর্তমানে ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা); ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ও ড্রেন) (তৃতীয় সংশোধিত ‘ প্রকল্পের ব্যয় ৭০০ কোটি ৬০ লাখ টাকা থেকে বাড়ানো ছাড়া; ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ এবং কুতুবদিয়া দ্বীপের শতভাগ নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুতায়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় ২২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা (বর্তমানে ৬৪৭ কোটি ১২ লাখ টাকা);‘সার সঞ্চয় ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ৫৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা থেকে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা হ্রাস; এক হাজার ৯৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (বর্তমানে ৬ হাজার ৯৬ কোটি টাকা) অতিরিক্ত ব্যয় সহ ‘অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প; এবং ৩৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা (বর্তমানে এক হাজার ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা) অতিরিক্ত ব্যয় সহ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
আরও পড়ুন: একনেকে ৮৮টি পৌরসভায় নগর শাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ৬,৩৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতির স্বাধীনতাকে সম্মান করে ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতির স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে ফ্রান্স। বিশেষ করে চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে।
তিনি বলেন, ‘আমরা উভয়েই আশা করি বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন ও সুশাসনের উপর ভিত্তি করে এই নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘ফ্রান্স দেশের জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃশ্যমান ও ধারাবাহিক অগ্রগতিতে ফ্রান্স সরকারের আস্থাও প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জিএসপি প্লাস স্কিমের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য সুবিধায় বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রেখে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্স।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় আমরা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং আমরা কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স এই অঞ্চলের (এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-প্যারিস দুটি সমঝোতা স্মারক সই
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ফ্রান্স অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকে অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়াও তারা আমাদের কৌশলগত নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে উন্নত এবং বিশেষ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের নেতৃত্বকে স্বাগত জানায় এবং একটি টেকসই তহবিল গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর আহ্বানের প্রশংসা করে।
এ ছাড়া তিনি বলেন, বৈঠকে ফ্রান্সের সঙ্গে শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত আদান-প্রদান নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ফ্রান্স সরকার ও ফ্রান্সের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, শিগগিরই এই সফরের বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হবে এবং দুই দেশের সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন, যা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিকশিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন, তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে আলোচনা চলছে
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টা ৩৮ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে পৌঁছান।
তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৮ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর থেকে রওনা হন। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেল বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রী গত শুক্রবার তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে গিয়েছিলেন।
তিন দিনের সফরে হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে তার সরকারি বাসভবনে মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন।
তাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে দুই দেশ ‘কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা’, ‘সাংস্কৃতিক বিনিময়’ এবং ‘দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের সরলীকরণ’- বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
জি২০ সম্মেলনে ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’- এর অধীনে দুটি বক্তৃতা দেন।
আরও পড়ুন: জি২০ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী
একই দিনে প্রধানমন্ত্রী আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
রবিবার সকালে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গেও বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
১০ সেপ্টেম্বর জি২০ সম্মেলনের শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনেও যোগ দেন যেখানে ‘জি২০ নিউ দিল্লি লিডারস ডিকলারেশন’ গৃহীত হয়।
ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল এবং এই রাষ্ট্রপতির মেয়াদে, ভারত বাংলাদেশসহ মোট ৯টি অতিথি দেশকে শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
বাকি ৮ দেশ হলো- মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আরও পড়ুন: সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন: জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জি২০ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে রবিবার দেশের উদ্দেশে নয়াদিল্লি ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনটি রবিবার শেষ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৮ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
বিকাল সাড়ে ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি পৌঁছান।
আরও পড়ুন: সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন: জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সফরকালে শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনে তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন।
দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে উভয় দেশের মধ্যে ৩টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
সেগুলো হলো- কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা; সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সহজীকরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ সেপ্টেম্বর জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে 'এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ' শীর্ষক সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্যের অধীনে বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন এবং দু’টি ভাষণ দেন।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শেখ হাসিনা রবিবার সকালে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
জি২০ সম্মেলনের শেষ দিন ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনেও যোগ দেন যেখানে ‘জি২০ নিউ দিল্লি লিডারস ডিকলারেশন’ গৃহীত হয়।
ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় এবং এই সভাপতিত্ব সময়ে ভারত বাংলাদেশসহ মোট ৯টি অতিথি দেশকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়।
বাকি ৮ দেশ হলো- মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি২০ সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন: জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব পরিবারের সমান সদস্য হিসেবে আমাদের অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার সংকল্প করতে হবে।’
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ভারতের নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে জি২০ লিডারস সামিট ২০২৩-এ এক অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আগামী দিনে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে জি২০ নেতাদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ করেছেন।
আরও পড়ুন: জি২০ সম্মেলনে যোগ দেবে না শি, তবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে: চীন
সুপারিশগুলো হলো:
প্রথম- টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন জি২০ সহ সকল বহুপক্ষীয় উদ্যোগের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিৎ।
দ্বিতীয়- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য জি২০ এর উচিৎ শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখা এবং একতরফা ট্যারিফ অগ্রাধিকার এবং ট্রিপস ছাড়ের সম্প্রসারণকে সমর্থন ও সহজতর করা, যাতে নির্বিঘ্ন ও টেকসই রূপান্তর নিশ্চিত করা যায়।
তৃতীয়- কৃষিপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মসৃণ, সময়োপযোগী ও প্রত্যাশিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে জি২০ ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতির বাজার উন্মুক্ত রেখে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।
চতুর্থ- শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে নারীকে (বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক) সমান মনোযোগ দিতে হবে।
পঞ্চম- বিশ্বব্যাপী মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য অংশীজনদের সহায়তায় দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিদেশীয় সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখে একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি জি২০ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হয়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট সারা বিশ্বের মানুষের জীবনযাপনের ওপর অসহনীয় অবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা এক পৃথিবী, এক পরিবারের কথা বলি; আমরা কি তা প্রমাণের মতো কিছু করছি? প্রতি রাতে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, না খেয়ে ঘুমায়। যেখানে, বিশ্ব প্রতি বছর সামরিক খাতে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, সেখানে মাত্র ২৬ ঘণ্টার জন্য সামরিক ব্যয় হয় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে সবচেয়ে নাজুক সম্প্রদায়ের খাবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
এছাড়াও তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বছরে নষ্ট হওয়া খাদ্য দিয়ে ২ বিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানো যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে ধনী দেশগুলো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো দরিদ্রদের জন্য সাহায্য কমিয়ে দিচ্ছে।’
বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র্য ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে, চরম দারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের জন্য একটি 'হোল অব সোসাইটি' (একটি নির্দিষ্ট দেশ বা এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সমগ্র গোষ্ঠী) পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ ২০২১ সালে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শিক্ষার হার ২০০৬ সালের ৪৫ শতাংশ থেকে গত দেড় দশকে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, যেখানে গড় আয়ু ২০০৬ সালে ৫৯ বছর থেকে এখন ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮৪ থেকে কমে এখন ২১ এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩৭০ থেকে ১৬১ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।
জাতিসংঘ একটি রেজুলেশন গৃহীত করে এই প্রচেষ্টাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী চ্যাম্পিয়ন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স রিপোর্ট-২০২২ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত দেশ তথা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে চাই।’
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি২০ সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ১০ মিনিট) ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে বেলা ১১টায় বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তার বড় বোন শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বৈঠকের জন্য তার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে কৃষি গবেষণা, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এবং বাংলাদেশ ও ভারতীয় রুপির (দুই দেশের সাধারণ মানুষের) মধ্যে লেনদেন সহজীকরণ বিষয়ে ৩টি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
৩ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম সেন্টারে 'এক পৃথিবী, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ' প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হতে যাওয়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের দুটি অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
আরও পড়ুন: জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ প্রধানমন্ত্রীর
তিনি গ্লোবাল সাউথে জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ইউরোপে চলমান যুদ্ধের কারণে জ্বালানি, খাদ্য ও সার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আলোকপাত করবেন। তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।
মোমেন বলেন, সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শনিবার সফররত আরও ৪ থেকে ৫ নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। ভারত সম্মেলনটির সভাপতি দেশ। জি-২০ হচ্ছে ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি ফোরাম।
১০ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে নয়াদিল্লি ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান করুন: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী
জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ প্রধানমন্ত্রীর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট) নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বৈঠকের জন্য তার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে কৃষি গবেষণা, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এবং বাংলাদেশ ও ভারতীয় রুপির (দুই দেশের সাধারণ মানুষের) মধ্যে লেনদেন সহজীকরণ বিষয়ে ৩টি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
৩ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম সেন্টারে 'এক পৃথিবী, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ' প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হতে যাওয়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের দুটি অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
তিনি গ্লোবাল সাউথে জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ইউরোপে চলমান যুদ্ধের কারণে জ্বালানি, খাদ্য ও সার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আলোকপাত করবেন। তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু বলে নিজেদের অবজ্ঞা করবেন না: হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
মোমেন বলেন, সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শনিবার সফররত আরও ৪ থেকে ৫ নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। ভারত সম্মেলনটির সভাপতি দেশ। জি-২০ হচ্ছে ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি ফোরাম।
১০ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে নয়াদিল্লি ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা করতে পারে ঢাকা-ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী
সংখ্যালঘু বলে নিজেদের অবজ্ঞা করবেন না: হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
হিন্দু সম্প্রদায়কে তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে বিবেচনা না করে, বাংলাদেশে সমান অধিকার ভোগ করে তাদের জীবনডাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আপনি কেন নিজেকে সংখ্যালঘু বলবেন? এখানে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কিছু নেই। বরং এখানে সব নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। সংখ্যালঘু হিসেবে নিজেকে ছোট করবেন না। যখন এই দেশের মানুষ তখন আপনি কেন এমন মনে করছেন?’
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পবিত্র জন্মাষ্টমী উপলক্ষে তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রাঙ্গণে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যারা এই মাটিতে জন্মেছে, তারা এই মাটির সন্তান এবং এই মাটির নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার আছে। "সুতরাং, আপনি সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবেন।’
আরও পড়ুন: কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা করতে পারে ঢাকা-ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সর্বদা বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে সামাজিক সংহতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে যেখানে একজন আরেকজনকে হেয় করবে না এবং সব মানুষ সমান অধিকার উপভোগ করে জীবনযাপন করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি সব জায়গায় কিছু স্বার্থান্বেষী লোক আছে, যারা কিছু সমস্যা তৈরি করতে চায়। সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে যাতে কেউ সমস্যা তৈরি করতে না পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কিছু লোক আছে, যারা বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে। তিনি বলেন, “আমি সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বারবার দমন-পীড়নের শিকার হয়।
তিনি বলেন, আমরা আবারও সংবিধান সংশোধন করে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্য সমান অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। হাসিনা তার দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার জন্য এবং বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা পুনরুদ্ধার করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু তারা আমাদের ভোট দিয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, তাই আমরা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আবারও অসাম্প্রদায়িক চেতনা পুনরুদ্ধার করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা সুযোগ পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে।
ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনা পুনরুদ্ধার করেছে এবং একটি স্লোগান ঘোষণা করেছে যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই আপনারা সবাই নিজ নিজ ধর্ম যথাযথভাবে পালন করুন। (সরকারি) চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল, কিন্তু এই বৈষম্য এখানে আর নেই।’ তিনি বলেন, সরকার সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করে।
আরও পড়ুন: ফেরদৌস আরার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী