শুক্রবার বিকালে মামলাটির এজাহার আদালতে আসে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ মামলার এজাহার গ্রহণ করেন।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ
এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।
মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে আদালত।
আদালতে কলাবাগান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (নারী ও শিশু) স্বপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন:কম্বল দেয়ার কথা বলে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
রাজধানীর কলাবাগানে বৃহস্পতিবার ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থীকে ‘যৌন নির্যাতনের’ পর হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (রমনা বিভাগ) সাজ্জাদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগীর প্রেমিক ইফতেখার দিহানের বিরুদ্ধে তার বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, ‘এ লেভেলের ছাত্র দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছি এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও তিন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নিয়েছি।’
আরও পড়ুন: ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’: মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ১
পারিবারিক সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী গ্রুপ স্টাডি করার জন্য কলাবাগানে এক বন্ধুর বাসায় যায়। পরে দিহান মেয়েটিকে ‘ধর্ষণ’ করেন এবং হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিত্সকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেন যে ভুক্তভোগীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।
সাজ্জাদুর বলেন, ‘আমরা এখনও তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নই। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানতে পারব।’
পুরো দেশের চিত্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণ চেষ্টা: প্রধান আসামি ৩ দিনের রিমান্ডে
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণের দায়ে মুয়াজ্জিন গ্রেপ্তার
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।