১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ মারা যাওয়া ড. রাজী গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য দেশের সব রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকতেন।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে ড. রাজীর মৃত্যবার্ষিকী পালন করেছে।
ড. আলীম আল-রাজী স্মৃতি পরিষদ সকালে বনানী কবরস্থানে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করে। সেই সাথে তার গ্রামের বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়া, মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুর সরকারি কলেজ এবং লাউহাটির ড. আলীম আল-রাজী হাইস্কুলেও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীতে ড. রাজীর জীবন ও কর্ম নিয়ে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি এবং সিটি ল’ কলেজসহ অন্যরা আলোচনা সভার আয়োজন করে। ড. আলীম আল-রাজী হাইস্কুল আয়োজিত আলোচনা সভায় তার জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ড. রাজী ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সংসদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তিনি পাকিস্তান এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসন প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরণ লড়ে গেছেন। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ) এবং পরবর্তীতে তার নিজের দল বাংলাদেশ পিপলস লীগের ব্যানারে দেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
ড. রাজী ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী এবং সামাজিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি নারী অগ্রগতি এবং তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ও তাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যদের বিপক্ষে ১৯৬৭ সালে দায়ের করা ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় বিবাদী পক্ষের নেতৃস্থানীয় কৌঁসুলি ছিলেন খ্যাতনামা আইনজ্ঞ ড. রাজী। তিনি জীবননাশের হুমকিকে উপেক্ষা করে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলা বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের পক্ষে লড়ে গেছেন।
পরোপকারী ড. রাজী সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এবং তার সমস্ত সম্পত্তি মানবকল্যাণে দান করে গেছেন। তিনি তার মূল্যবান বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন লাইব্রেরিকে দান করে যান।
হতভাগ্য দৃষ্টিহীনদের কথা চিন্তা করে ড. রাজী তারই চোখের আলোয় যেন দুজন অন্ধ এ পৃথিবীর রঙ-রূপ দেখতে পারেন সে জন্য মরণোত্তর চক্ষুদান করেন। তার চোখের কর্নিয়া ধারণ করে এখনো পৃথিবীর আলো দেখছেন দুজন হতদরিদ্র মানুষ। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার সাথে সাথে তারা জীবিকাও নির্বাহ করছেন।
ড. রাজী শুধু মরণোত্তর চক্ষুদান করেই ক্ষান্ত হননি। মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকার করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতিও উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে গেছেন।