কসমস
ঢাকায় কিশোর মাহবুবনী: যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বৈরথে ভূ-রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে
আগামী ১০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার’ মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। যা বিশ্বের কয়েক বিলিয়ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এর সম্ভাব্য সব ধরনের প্রভাব মোকাবিলায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে কসমস ডায়ালগের সর্বশেষ সংস্করণে মূল বক্তব্য দেয়ার সময় প্রখ্যাত লেখক, কূটনীতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কিশোর মাহবুবনী এসব কথা বলেন।
সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির সাবেক ডিন মাহবুবনী বলেছেন, ‘আপনারা যেখানেই থাকেন না কেন, আপনারা যাই করেন না কেন, আপনাদের জীবন এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দ্বারা প্রভাবিত বা ব্যাহত হবে। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিতে পারি।’
কসমস গ্রুপের জনহিতকর বিভাগ ‘কসমস ফাউন্ডেশন’ তার চলমান রাষ্ট্রদূতের বক্তৃতা সিরিজের অংশ হিসেবে এই সংলাপের আয়োজন করছে।
কসমস ফাউন্ডেশন, কসমস গ্রুপের জনহিতকর শাখা ‘কসমস ফাউন্ডেশন’ এর বিশিষ্ট বক্তাদের বক্তৃতা সিরিজের অংশ হিসেবে ‘ইমার্জিং এশিয়ান নেশনস ইন গ্লোবাল জিওপলিটিক্স: ইমপ্লিকেশনস ফর বাংলাদেশ’- শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করেছে। যার সভাপতিত্ব করেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
নর্ডিক দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে আরও শক্তিশালী অংশীদারিত্ব করতে আগ্রহী: কসমস ডায়ালগে রাষ্ট্রদূতেরা
ঢাকায় নিযুক্ত নর্ডিক রাষ্ট্রদূতেরা বলেছেন যে তাদের দেশগুলো আগামী ৫০ বছর ও তার পরেও বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘শক্তিশালী ও টেকসই’ অংশীদারিত্ব করতে চায়, যেখানে বৃহত্তর সহযোগিতার লক্ষ্যে সুযোগ অন্বেষণে প্রধান খাতগুলো থাকবে-জলবায়ু, সবুজ রূপান্তর, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সুস্থ মহাসাগর, লিঙ্গ সমতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ।
কসমস ডায়ালগে যৌথভাবে প্রস্তুত মূল বক্তব্য প্রদানকালে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিক্টর সভেনডসেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেনও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব, বহুপক্ষীয়তা, বৈশ্বিক সংহতি, আন্তর্জাতিক আইন ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
কসমস গ্রুপের জনহিতকর বিভাগ ‘কসমস ফাউন্ডেশন’ তার চলমান রাষ্ট্রদূতের বক্তৃতা সিরিজের অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ-নর্ডিক সম্পর্ক: ভবিষ্যতের জন্য পূর্বাভাস’ শীর্ষক ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ইউএনবি’র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হবে।
বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত পণ্ডিত-কূটনীতিক ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
এছাড়া, আলোচনায় আরও যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও ড. লাইলুফার ইয়াসমিন।
ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত পিটারসেন বলেন, ‘এই ৫০ বছরে আমরা একসাথে একটি উল্লেখযোগ্য যাত্রা করেছি। আমাদের অংশীদারিত্ব চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের মধ্যদিয়ে হয়েছে। আর আমরা দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, এটা বলা ন্যায্য হবে যে নর্ডিকরা বাংলাদেশের বিশ্বস্ত অংশীদার ও বন্ধু হয়ে থাকতে চায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-নর্ডিক সম্পর্ক নিয়ে কসমস ডায়লগ বৃহস্পতিবার
কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
এক গোলটেবিল বৈঠকে বুধবার বক্তারা বলেছেন, কর্মক্ষম মানবসম্পদ, খাদ্য উৎপাদন ও ভৌগোলিক অবস্থানে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে জ্বালানি অনুসন্ধান বাড়ানোর পাশাপাশি প্রচলিত ও নবায়নযোগ্য (জ্বালানির) বৈচিত্র্যপূর্ণ নীতির ওপর জোর দিয়েছেন।
তারা বলছেন, এসব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও টেকসই নীতির অভাবে দেশ নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধানে গত দেড় দশকে পিছিয়ে পড়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে কসমস ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) যৌথ আয়োজনে ‘এ ওয়ার্ল্ড ইন টার্মায়েল: দ্য ফলআউট ফ্রম দ্য ইউক্রেন কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান ও বিআইপিএসএসের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) এএনএম মুনিরুজ্জামান এই আলোচনা সঞ্চালনা করেন।
এতে আলোচক হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে সালমা তারিন এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসি বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলেও অর্থনীতির অবস্থা খারাপ নয়: অর্থমন্ত্রী
বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড সম্পর্ক নিয়ে কসমস ডায়ালগের প্রিমিয়ার বুধবার
‘বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড সম্পর্ক: ভবিষ্যতের জন্য পূর্বাভাস’ শীর্ষক একটি সংলাপের আয়োজন করছে কসমস গ্রুপের জনহিতকর শাখা কসমস ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ সময় বুধবার সন্ধ্যায় (৭টা) কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে ভার্চুয়াল এই সংলাপের প্রিমিয়ার হবে।
এই সংলাপটি কসমস ফাউন্ডেশনের চলমান ‘অ্যাম্বাসেডরস লেকচার সিরিজ’-এর অংশ।
সংলাপে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ন্যাথালি চুয়ার্ড তার মূল বক্তব্যে আলোচনা করবেন- সম্পর্কের (বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড) সূচনা, কীভাবে দুই দেশ ৫০ বছরের দীর্ঘ যাত্রা অতিবাহিত করেছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের (দুই দেশের ) ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তা তুলে ধরবেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখবেন।
অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন প্রখ্যাত কূটনীতিক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া আলোচক প্যানেলে থাকবেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম,মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আনিস এ খান এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
২০২২ সালকে বাংলাদেশ এবং সুইজারল্যান্ড উভয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এবছর দেশ দুটি তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে।
সুইজারল্যান্ড এটিকে (৫০ বছরের বন্ধন) একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছে। এটি দুই দেশের ‘দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী’ অংশীদারিত্বকে প্রমাণ করে এবং এটি তাদের যৌথ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত।
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কসমসের ভার্চুয়াল সভা বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আশাবাদী মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজনাহ মো. হাশিম বলেছেন, ঢাকা ও কুয়ালালামপুর শিগগিরই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করবে বলে তিনি আশাবাদী।
কসমস ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে তার মূল বক্তব্য দেয়ার সময় রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এফটিএ ছাড়াও ভবিষ্যতের সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো ‘অবশ্যই ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি বলেন, দুই দেশের জন্য এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানো; কারণ তা পরবর্তী দশক বা তারও বেশি সময়ে সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে আমি আবারও আশা করি যে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষরিত হবে।
কসমস গ্রুপের জনহিতকর শাখা কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই সংলাপটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রিমিয়ার হয়।
এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা বক্তাদের
কসমস আতেলিয়ার৭১ এর আয়োজনে 'আর্টিস্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম'
বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের জন্য স্টুডিও-ভিত্তিক শিল্প চর্চাকে উৎসাহিত করে প্রিন্টমেকিং-এর মাধ্যমকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে 'আর্টিস্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম'-এর মাধ্যমে নতুন ও প্রতিভাবান শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে কসমস আতেলিয়ার৭১।
সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারের কসমস আতেলিয়ার৭১-এ শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান ডিসেম্বর মাসব্যাপী চলবে। বছরে সাধারণত দু’বার অনুষ্ঠিত হয় এই 'আর্টিস্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম'।
দেশের চারজন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী ও ভিজ্যুয়াল শিল্পী-ইকবাল বাহার চৌধুরী, ফারজানা রহমান ববি, কামরুজ্জোহা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু কালাম শামসুদ্দিন এবারের রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। এচিং অ্যাকোয়াটিন্ট, উড ইন্টাগ্লিও, ড্রাইপয়েন্ট, কোলাগ্রাফ-এই চারটি মাধ্যম তারা নিজ নিজ থিমের ওপর ভিত্তি করে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: 'ইনসাইড আউট’: শিশুদের জন্য গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী পেইন্টিং ও অরিগামি ওয়ার্কশপ
পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ-তুরস্ক ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যত’ গড়বে: রাষ্ট্রদূত তুরান
বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেছেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক সহযোগিতার বিস্তৃত ক্ষেত্র নিয়ে কাজের মাধ্যমে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
তুর্কি রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আমরা সব বড় শক্তির সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি, তবে নির্দিষ্ট কোনও পক্ষে অবস্থান নেইনি। আমি মনে করি, আমাদের এই নিরপেক্ষ অবস্থান বাংলাদেশের সঙ্গে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
কসমস সংলাপে তার মূল বক্তৃতা দেয়ার সময় ‘ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতার’ এই টানাপোড়েনের মধ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে ঢাকা-তুরস্ক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত তুরান।
বৃহস্পতিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও তুরস্কের প্রচেষ্টা নিয়ে ‘বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক: ভবিষ্যতের জন্য পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং এই সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করেন।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ‘সোনালী’ সুযোগ দেখছেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার
বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে অস্ট্রেলিয়া ‘উদ্যমীভাবে কাজ করতে চায়’ উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেছেন, বৃহত্তর ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশের ‘সোনালী’ সুযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতার (টিফা) প্রস্তাবিত সুযোগগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে আমার পূর্বাভাস জিজ্ঞাসা করেন-আমি আবারও বলি, ভবিষ্যতটি হবে সোনালী সময়।’
হাইকমিশনার অবশ্য বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেগুলোকেও মোকাবিলা করা দরকার বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সেই সোনালী ভবিষ্যতের সুবিধা নিয়ে একসাথে এমনভাবে কাজ করা দরকার যা এই চ্যালেঞ্জগুলোকে ‘গঠনমূলকভাবে’ মোকাবিলা এবং দেশগুলোর কল্যাণে সহায়তা করে।
‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার তার মূল বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
শনিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করে।
কসমস ফাউন্ডেশন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের আয়োজন করে আসছে।
সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টিফা চুক্তি স্বাক্ষর
নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ‘রোহিঙ্গা ইস্যু’ এজেন্ডায় থাকবে: ইইউ
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি রেনসে তিরিঙ্ক বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং আফগানিস্তান সঙ্কটের মতো নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটি এজেন্ডা থেকে হারিয়ে যাবে না।
বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমার কাছে ম্যাজিক রেসিপি বা ক্রিস্টাল বল নেই যে কীভাবে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে এটি (রোহিঙ্গা ইস্যু) এজেন্ডা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে না।’
বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে রোহিঙ্গা ইস্যু অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমি এটি অনুসরণ করতে থাকব।’
‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক: ভবিষ্যত সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) মূল বক্তা হিসেবে ইইউ দূত এসব কথা বলেন।
কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন অ্যাম্বাসডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এছাড়াও আলোচক প্যানেলে সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জিয়াদি সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ফাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
এনায়েতুল্লাহ খান ক্রমবর্ধমান মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব, কোভিড -১৯ মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তানে সঙ্কটের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি মানুষের মন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত, চীন ও জাপান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে আমি মনে করি না।
খান ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, মিয়ানমারের সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানে ইইউ বাংলাদেশকে কী সহায়তা করতে পারে।
জবাবে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রথমে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে যা সত্যিই এই অলোচনার ক্ষেত্রে এক বিরাট ধাক্কা।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তৎপরতা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুর্ভাগ্যবশত তারা সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছে এবং এটি খুব ইতিবাচক নয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং জাপানের সাথে অংশীদার হিসেবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যোগাযোগ করছি। এটি আমাদের সব সময় এজেন্ডায় থাকে।’
আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইইউ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার সহায়তায় উল্লেখযোগ্য তহবিল প্রদান করে আসছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বড় ধরনের সহিংসতার পর দেশটি থেকে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বতর্মানে কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এছাড়া এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মহামারি এবং রোহিঙ্গা- দুটি বিষয় এখন বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগ এবং এই দুটি বিষয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির সাথে জড়িত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ইউরোপের মূল্যবোধ-আইনের শাসন, সরকার পদ্ধতি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমারের সাথে ইইউর সম্পর্কের বিষয়টি আসলে তা মিলানো যায় না।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করে ইইউ
তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি না ইইউ পার্লামেন্ট কেন বর্তমান মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ভট গণতন্ত্রকে সহায়তা করে। ইইউ মিয়ানমারের নির্বাচনেও সহায়তা করেছে। সামরিক কর্মকর্তারা যখন সংসদে বসেন তখন এটা গণতন্ত্র থাকে না। ইইউকে আরও কঠিন হওয়া উচিত ছিল এবং এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।
তিনি বলেন, কিন্তু যখন মিয়ানমারের কথা আসে ৯০০ এর বেশি মানুষ হত্যার পরও ইইউ এখনও মিয়ানমারের সাথে প্রায় একই ধরনের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। আপনারা কেবল কিছু সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন যারা কখনও ইইউ দেশগুলোতে যায় না এবং তাদের কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। আপনারা খুব সম্প্রতি মিয়ানমারকে ঋণ পরিশোধেও সহায়তা করেছেন।
কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ভূ-রাজনীতির এই টানাপোড়েনের সময়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখে দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনলাইন সংলাপে তারা দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং এই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করেন।
আরও পড়ুন: সন্ধান মেলেনি পদ্মায় নিখোঁজ চীনা প্রকৌশলীর
‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষৎতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সম্পর্ক উন্নয়নে পাঁচ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ চীনা রাষ্ট্রদূতের বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মূল বক্তব্যে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করি।’ রাষ্ট্রদূত লি পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন যেখানে বাংলাদেশ ও চীন বর্তমান অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে পারে। এগুলো হলো মহামারি রোধে সহযোগিতা আরও বাড়ানো, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাৎক্ষণিক উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা এবং বহুপাক্ষিকতা বহাল রাখা।চীনা রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, মহাসচিব শি জিমিংয়ের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) শিগগিরিই তার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী এবং আরও প্রাণবন্ত করতে সিপিসি বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: তিন নভোচারী নিয়ে চীনের প্রথম মহাকাশ যাত্রা
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া
উদ্বোধনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্র দুটির জনগণের মধ্যে যোগাযোগের যে ব্যাপ্তি ও প্রসার রয়েছে তা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। এ সময় তিনি অনেক আগে তার নেওয়া চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করেন।ওয়াং ইয়েকে অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, তিনি (ওয়াং ইয়ে) আমাকে বলেছিলেন, চীনের মূলনীতি হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক সুশীল এবং উভয় পক্ষের অংশীদাররা এই সম্পর্ককে আরও প্রশস্ত ও গভীর করতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী চীনের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যন্য রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব উত্থানে এর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “চীনের উত্থান সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের বড় ঘটনা। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুততম সময়ে প্রথম হতে প্রস্তুত। ডঃ চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চেয়ে চীনের দৃষ্টি আরও বেশিকিছুর দিকে। ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেটি জানান দিচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে সর্বদাই উদীয়মান শক্তি এবং বর্তমানে এগিয়ে যাওয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থাকে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব আশা করে যে এ ধরনের সংঘাত এড়ানো যায় এবং শেষ পর্যন্ত বড় শক্তিগুলো যেমন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। চীনের স্বপ্ন বলতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যা বলেছেন তা এভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৯৭ ভাগ পণ্য রপ্তানিতে বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে চীন: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কূটনীতিকে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হিসাবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তির প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক এবং বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ সার্মথ্য এবং সংকল্পের পরিচয় দিয়েছে।’সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্লেষকরা অবশ্যই এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পকের ওপর দৃষ্টি রাখতে চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে একটি স্বাস্থ্যকর বিকাশ হিসাবে দেখছি যা সকলের, বিশেষত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উপকার করতে পারে।’যেহেতু রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তাই শমসের মনে করেন যে বিষয়টি সবার মাথায় রাখা খুব জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে আমরা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। আমরা কেবল দ্বিপক্ষীয়ভাবে নয়, এশীয় প্রশান্ত মহাসগারীয় সীমান্তের ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী।’তিনি রাষ্ট্রদূত লি এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদকে ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকতায় প্রতিস্থাপন করা উচিত। ‘আমি মনে করি এই বিষয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং একসাথে আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ ভাইরাস কমপক্ষে আরও বেশ কিছু সময়ের জন্য থাকবে।’চীনা বিশেষজ্ঞ ড. জু বলেছেন, ‘সাধারণ লক্ষ্য এবং পারস্পরিক সুবিধার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিজস্বতা অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা চীনা ও বাংলাদেশিরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভরসাপূর্ণ বন্ধুত্ব ভাগ করে নিয়েছি; যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করছে।’ ড. জু আশা প্রকাশ করেন যে সহযোগিতার অভিজ্ঞতা দু'দেশকে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যাশার সাথে হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভূ-রাজনীতির টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না, কারণ তাদের দূরদৃষ্টি অনুযায়ী আগামী দিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্কে পরিণত হবে। এই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কের আওতায় কীভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নিজস্ব ভিত্তিতে রক্ষা করতে পারে তা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা এবং নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব আরও জটিল হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে চীনের অগ্রাধিকারযোগ্য বাজারে প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শুরু
কূটনৈতিক সর্ম্পকের বাইরেচীনা বিশেষজ্ঞ ড. নিং শেংনান বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হিসাবে আর্বিভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কেবল তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেই নয়, একই উন্নয়ন ফিলোসফির মধ্যে নিহিত। চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই শ্রমঘন শিল্প থেকে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়ন বিরোধী এই শক্তিশালী তরঙ্গের মুখোমুখি হয়ে চীন ও বাংলাদেশের যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান করা এবং একে রক্ষা করা প্রয়োজন।সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই পূর্বাভাস এমন একটি পথের সন্ধান দিচ্ছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীন ভবিষ্যতে চমৎকার সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।ড. রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য কমপক্ষে তিনটি প্রয়োজনীয় শর্ত রয়েছে যা হল: দুই দেশের মধ্যে উৎপাদন নেটওর্য়াক তৈরি, ঝুঁকি-ভাগ করে নেওয়ার ভিত্তিতে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির স্থানান্তর।সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’-বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ-চীন: একই স্বপ্ন দেখেচেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান তার সমাপনী বক্তব্যে চীনের রোড এবং বেল্ট ইনিশিয়েটিভের কথা উল্লেখ করেন, যা দূর ও নিকটবর্তী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিশ্রুতি বহন করে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মধ্যে চীনের উন্নয়ন বাংলাদেশিদের কাছে গর্ব এবং আনন্দের অন্যতম উৎস। আমরা জানি যে চীনের জনগণের একটি স্বপ্ন আছে; বাংলাদেশের জনগণেরও সেই স্বপ্ন রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টায় রয়েছি আমরা।