যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুই বার অভিশংসিত হলেন।
এর আগে, ২০১৯ সালে ক্ষমতার অপব্যবহারে ইউক্রেন কেলেঙ্কারির কারণে কংগ্রেসে প্রথম দফা অভিশংসিত হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও পরে সিনেটের ভোটাভুটিতে জিতে যাওয়ায় সেসময় পদ রক্ষা করতে পেরেছিলেন ধনকুবের এই প্রেসিডেন্ট।
হাউজের ভেতরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের উপস্থিতিতে ২৩২-১৯৭ ভোটে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। তার নিজের দল রিপাবলিকানের ১০ জন সদস্যও ট্রাম্পের বিপক্ষে গিয়ে ভোট দিয়ে তাকে অভিশংসিত করে।
গত নভেম্বরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়তে হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
রিপাবলিকান ট্রাম্পকে এখন সেনেটে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি আবারো ক্ষমতায় আসার সুযোগ চিরতরে হারাতে পারেন।
তবে তার মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও তাকে এখনই হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হচ্ছে না। কারণ এই সময়ের মধ্যে সেনেট আবার গঠন করা সম্ভব নয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর তাকে অভিশংসন করার জন্য ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে প্রথম পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মঙ্গলবার অনুরোধ জানায় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ। যদিও হামলার ওই ঘটনায় কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: অস্থির সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চিফের হঠাৎ পদত্যাগ
ক্যাপিটল হামলার আগে একটি সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের অভিযোগে আনা হয়। এমনকি নির্বাচনে জালিয়াতির বিষয়ে তিনি যে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন অনেক রিপাবলিকান নেতা এখনো তা চ্যালেঞ্জ করছেন।
ট্রাম্পকে অপসারণের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে প্রতিনিধি পরিষদ। প্রস্তাবটি ২২৩-২০৫ ভোটে অনুমোদিত হয়।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে সশস্ত্র বিক্ষোভ সম্পর্কে সতর্ক করল এফবিআই
এর আগে ‘বিশৃঙ্খলায় উসকানির’ অভিযোগে গত সোমবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে গত সপ্তাহের ভয়াবহ অবরোধের পরে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে দেশটির ওয়াশিংটনসহ ৫০টি শহরে সশস্ত্র বিক্ষোভ পরিকল্পনার বিষয়ে সতর্ক করেছে এফবিআই।
আরও পড়ুন: ক্যাপিটল হিলে সংঘর্ষ: ভিডিওতে নৃশংসতা প্রকাশের পর আরও অনেকে গ্রেপ্তার
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য বুধবার অধিবেশন চলার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল হিলে ঢুকে পড়ে।
যা ঘটেছিল ক্যাপিটল হিলে
দিনের শুরুতে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক 'আমেরিকা বাঁচাও' নামক একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।
নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে অভিশংসনের পরিকল্পনা ডেমোক্র্যাটদের
পরবর্তীতে রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হলেও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা যায়।
জো বাইডেন ঘটনাকে একটি 'বিদ্রোহ' বলে আখ্যায়িত করেন, আর ট্রাম্প একটি ভিডিও বার্তায় তার সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেন।
এছাড়া শোরগোলের মধ্যে বাইডেনের জয় অনুমোদন করার জন্য কংগ্রেস অধিবেশন স্থগিত করা হয়। এটি ছিল আমেরিকার সংসদের দুই কক্ষ- হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি সভা এবং সেনেট-এর যৌথ অধিবেশন।