ইতিমধ্যে গত তিন দিন ধরে পুলিশ পরিবেষ্টিত খুলনা বিএনপি মহানগর কার্যালয়। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাই পলাতক। এমনকি নির্বাচনে অংশ নিতে এতদিন যারা মাঠে সরব ছিলেন সেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও এলাকা ছাড়া।
মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অভিযোগ, গত ২৬ অক্টোবর থেকে হঠাৎ করেই নগর ও জেলাজুড়ে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। এ পর্যন্ত ১৫৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে আরও ৩টি মামলা হয়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে মহানগরীতে বিএনপির বক্তব্যে ১৫টি ‘গায়েবী’ মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় শত শত নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। মূলত ধরপাকড়ের কারণেই মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ সিনিয়র নেতারা এলাকায় যেতে পারছেন না।
জানা গেছে, জেলার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে বিএনপির একক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। তার বাড়ি বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর গ্রামে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এলাকায় যেতে পারেননি তিনি।
আমির এজাজ খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি তো দূরের কথা ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতাও এলাকায় থাকতে পারছে না। কাল রাতে এক কর্মী মোবাইলে ছবি পাঠালো সে গোয়ালঘরে পালিয়ে আছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার দলীয় নেতারা এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে, আর আমরা নিজ ঘরেও ঘুমাতে পারছি না। এটা কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে?’
নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনজন, তাদের কেউই এলাকায় নেই। এর মধ্যে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলামের নামে গত ৩ নভেম্বর নতুন করে নাশকতার আরেকটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক রয়েছেন তিনি।
অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলে, ‘হাইকোর্ট থেকে জামিনে থাকার পরও পুলিশ নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। জামিনের কাগজ দেখানোর পর পুলিশ বলছে-জামিন তো একটি মামলাতে, থানায় আরও মামলা আছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কোনো নেতাই এলাকায় থাকতে পারছে না।’
অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘আমার ফেস্টুন বিলবোর্ড ভেঙে ফেলেছে। লিফলেট বিতরণ করার সময় ছাত্রদল ও যুবদল নেতাদের আটক করেছে। আমি এলাকায় ঢুকলে নিরাপত্তার দায়িত্ব তারা নেবে না-বলে জানিয়েছে। এলাকায় ফেরার পরিবেশ নেই।’
রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে বিএনপির একক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুর বারী হেলাল। তার বাড়ি রূপসা উপজেলায়। তিনি ১৪৭টি মামলায় জামিন লাভের পর বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার অনুসারীরা সবাই নির্বাচনী এলাকা ছাড়া।
আজিজুর বারী হেলাল বলেন, ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের সহযোগী সবাই পলাতক। এলাকায় ফেরার পরিবেশ নেই।’
ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. মামুন রহমান বর্তমানে লন্ডনে। সেখানে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে নাশকতার আরও দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনিও এলাকায় আসছেন না।
২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতের নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনিও এলাকায় নেই। এ ছাড়া কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে বিএনপির অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা। বেশকিছু দিন ধরে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী আমির তার নির্বাচনী কার্যক্রম জোরদারভাবে চালায়ে আসছিলেন। গত ২৭ অক্টোবর কারান্তরিত হওয়ায় সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত তিন নির্বাচনে এ আসনটি বিএনপি জোট জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিল।
খুলনার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে এখনও প্রকাশ্যে রয়েছেন খুলনা-২ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘গায়েবী মামলা, ধরপাকড় চালিয়ে মাঠ ফাঁকা করার পর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের পূর্বলক্ষণ।’
তবে বিএনপি নেতাদের ধরপাকড় ও গায়েবী মামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোনালী সেন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে আটক বা মামলা করা হচ্ছে না।’