চতুর্থ দফার দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে পতেঙ্গা বোটক্লাবের জেটি থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
এর আগে, গত সোমবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছেন দুই হাজার ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। তাদের মধ্যে ৪৮৫ জন নারী, ৫৭৭ জন পুরুষ ও ৯৪৮টি শিশু রয়েছে।
নৌ বাহিনীর রিয়ার এডমিরাল মোজাম্মেল হক জানান, সোমবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্প থেকে চতুর্থ দফার দ্বিতীয় দিনে ভাসানচরে নিতে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে আনা হয়। রাতে তারা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠের অস্থায়ী ক্যাম্পে ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে পৌঁছেছে ২০১৪ রোহিঙ্গা, উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের পথে আরও ৮৭৯ জন
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী-পুরুষ, শিশুসহ নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে পৌঁছে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত ৭, ৮, ৯, ১০ নম্বর ক্লাষ্টারে তাদেরকে রাখা হয়। প্রথম ধাপে ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু ৮১০ জন, পুরুষ ৩৬৮ জন, নারী ছিলেন ৪৬৪ জন।
পরে গত ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজার থেকে আরও এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে ১৩০ জনের বেশি হলেন প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বজন। গত বছরের ৮ মে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভাসতে থাকা ২৭৭ রোহিঙ্গাদের আরও একটি দলকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে বোটে ভাসমান অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা দলটিতে ৯২ জন পুরুষ, ১৫৭ জন নারী ও ২৮টি শিশু ছিল।
গত ২৯ জানুয়ারি ভাসানচরে এসে পৌঁছান এক হাজার ৭৭৬ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে পুরুষ ৪০৪ জন, মহিলা ৫১০ জন এবং ৮৬২টি শিশু রয়েছে। ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও এক ১ হাজার ৪৬৭ জন রোহিঙ্গা এসে পৌঁছায়। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৪৭ জন, মহিলা ৪০৫ জন এবং ৭১৫টি শিশু ছিল।
আরও পড়ুন: ভাসানচর: ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছেন রোহিঙ্গারা
রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় ইইউ
রোহিঙ্গারা ভাসানচরে খুশি, তবুও তারা মিয়ানমারে ফিরতে চায়
এদিকে, চতুর্থ দফায় মোট ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়ার কথা রয়েছে।
হাতিয়ায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ভাসানচরে ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হয়।
ওই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও আগেই শেষ হয় সব অবকাঠামো নির্মাণ। হাতিয়া থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এতে এক লাখ রোহিঙ্গা বাস করতে পারবে।
নোয়াখালীর এই দ্বীপটি বাস উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।
আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে বেসামরিক প্রশাসনের প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবন, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: তুর্কি রাষ্ট্রদূত