বাংলাদেশ
খেলাধুলাই যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, 'আমি চাই আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি শিশুদের খেলাধুলায় আরও আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘কারণ খেলাধুলা মানুষকে শারীরিক ও মানসিক শক্তি প্রদান করে এবং নিয়মানুবর্তিতা, আনুগত্য ও দেশপ্রেমের শিক্ষা দেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলার মাধ্যমে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং সারা বিশ্বের কাছে আরও ভালোভাবে পরিচিত করা যায়।
আরও পড়ুন: সম্ভাবনা সত্ত্বেও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে ঘাটতির কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিশ্ব দরবারে খেলাধুলায় তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ এ বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে সেই দলের পাঁচজন খেলোয়াড় উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বছর ব্যাপী খেলাধুলার সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে।
তিনি বলেন, 'আমরা প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি এবং একাডেমি করে দিচ্ছি।’
তিনি অন্যান্য খেলাধুলার পাশাপাশি দেশের ঘরোয়া খেলাধুলায় সমান সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ঘরোয়া খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম টেপুরগাড়ি বিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধ উপভোগ করেন।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে জামালপুরের মাতৃগঞ্জ চরগোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রংপুরের মিঠাপুকুর তালিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পরাজিত করে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম টেপুরগাড়ি বিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট বিজয়ী হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের সদস্যদের মাঝে পুরস্কার ও পদক বিতরণ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সমবায় গঠনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি গ্রহণযোগ্য নয়: ড. আইনুন নিশাত
বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, ছাত্ররা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এখন ছাত্ররাজনীতির কথা শুনলে ভয় হয়। ছাত্ররাজনীতিতে র্যাগিং, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার কাম্য নয়। ছাত্র রাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার এফডিসিতে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য ব্যাপক পড়াশোনা করতে হয়। তাই লেজুড়ভিত্তিক অপরাজনীতি বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ বিঘ্নিত করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বুয়েট অ্যালামনাই সদস্যদের মতেও সেখানে ছাত্র সংসদ থাকতে পারে কিন্তু লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি নয়। আদালত ছাত্ররাজনীতির পরিধি নির্ধারণ করে নির্দেশনা প্রদান করলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সে আলোকে আচরণবিধি প্রণয়ন করতে পারে।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়ের পর বুয়েটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া
তিনি বলেন, বিইউপি, এমআইএসটি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মতামত ও দাবি—দাওয়া শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির সম্পর্ক দৃশ্যমান হওয়ায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে চলমান যে পরিস্থিতি চলছে তা ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও অ্যালামনাইসহ সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা উচিৎ। বুয়েটের ছাত্র সংসদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
তিনি বলেন, বুয়েট যেহেতু একটি বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাই বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র সংসদ তাদের মতো করেই হওয়া উত্তম। আববার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলেও ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। আনুষ্ঠানিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকার পরও আমরা দেখেছি বুয়েটে ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ সকল প্রকার জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। পরীক্ষা হয়েছে, ক্লাস হয়েছে, ল্যাব চলেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য দেখিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার অধিকার আদায়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি বুয়েট শিক্ষক সমিতির
তিনি আরও বলেন, বিশেষায়িত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এখন আরও বেশি শক্তিশালী। ঈদের ছুটির পর বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনে একাত্বতা দেখে আমাদের বুঝে নিতে হবে তারা কি চায়। পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে শিক্ষকরা অপেক্ষা করলেও কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের এই নীরব প্রতিবাদ বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ।
কিরণ আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ছাত্র রাজনীতি মানে কয়েকটি স্লোগান নয়, ছাত্র রাজনীতি মানে অহেতুক আন্দোলন নয়, ছাত্র রাজনীতি মানে লেজুড়বৃত্তি নয়। ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া। যেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সমস্যা নিয়ে ছাত্ররা সমবেত হবে। ভয়েস রেইস করবে, গণতন্ত্র সুরক্ষা দেবে। শিক্ষা—দীক্ষায় পরিপূর্ণতা অর্জন করে ভালো মানুষ হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করবে। ভালো আমলা হবে, রাজনীতিবিদ হবে, ব্যবসায়ী হবে, সমাজসেবক হবে। যার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি পরিপূর্ণতা প্রকাশ পাবে। আমরা সেই ছাত্র রাজনীতি চাই না যে ছাত্র রাজনীতি অস্ত্রবাজী করবে, খুনা—খুনি করবে, হল দখল করবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু করার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ এখন আমরা এমন কোন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাবো না যেখানে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা চলছে। বরং প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, সিট দখল, গণরুম নির্যাতন, র্যাগিং, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তারের সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ক্ষমতা, সম্পদ, টাকা পয়সা, তদবির বাণিজ্যই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সহায়ক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক দিপক কুমার আচার্য, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মল্লিক, সাংবাদিক শারমিন নীরা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার পরিবেশ দুটিই থাকা উচিত: ড. হাছান মাহমুদ
ডেঙ্গুতে আরও ১৭ জন আক্রান্ত
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। তবে এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন আরও ৫ জন রোগী।
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। এদের মধ্যে পুরুষ ১১ জন ও নারী ১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৯৫২ জন।
এদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৯৬৯ জন ও নারী ৭৪৩ জন।
বাংলাদেশে জলবায়ু সহিষ্ণু পানি ব্যবস্থাপনায় ৭১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা জোরদার করতে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি সই করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকায় এই চুক্তি সই হয়। এতে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং এডিবির পক্ষে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এই ঋণ চুক্তিতে সই করেন।
এডিমন গিন্টিং বলেন, 'বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে এডিবির নতুন প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এই প্রকল্প।’
এডিবির কর্মকর্তা গিন্টিং আরও বলেন, 'এই অঞ্চলে আমাদের পূর্ববর্তী সফল প্রকল্পগুলোর উপর ভিত্তি করে নতুন প্রকল্পটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি করবে। একই সঙ্গে নারী ও দুর্বল গোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করবে। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য হ্রাস করবে।’
পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য জলবায়ু-সহনশীল সমন্বিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চরের প্রকল্পটি ৬ লাখেরও বেশি মানুষকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি জলবায়ু-সহনশীল বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন এবং সেচ (এফসিডিআই) ব্যবস্থা চালু করবে এবং লবণাক্ত অনুপ্রবেশও হ্রাস করবে।
এডিবি জানায়, এফসিডিআই অবকাঠামো শক্তিশালী করতে এবং চারটি সাববেসিনের ড্রেনেজ উন্নত করতে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান গ্রহণ করা হবে।
প্রকল্পটি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অন্যান্য কমিউনিটি অবকাঠামো নির্মাণ করবে।
প্রকল্পটি স্থানীয় মালিকানা বৃদ্ধি এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করবে।
এটি সুবিধাগুলোর নকশা, নির্মাণ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পানি ব্যবস্থাপনা গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতা জোরদার করবে এবং যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
নারী সদস্যপদকে টার্গেট করে চারটি উপপ্রকল্প এলাকায় পানি ব্যবস্থাপনা সংগঠন গঠনে সহায়তা বাড়ানো হবে।
প্রকল্পটি পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় উন্নয়ন, পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তত্ত্বাবধান এবং এর কার্যক্রমে জলবায়ু অভিযোজন সমন্বিত করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের ভিত্তিতে জলবায়ু ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ চরম আবহাওয়া এবং ধীরগতির জলবায়ু ঘটনাগুলোর ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতার মুখোমুখি হচ্ছে।
কার্যকর অভিযোজন ব্যবস্থার ঘাটতি, জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা এবং গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলো- বিশেষত যেসকল নারীরা তাদের জীবিকার জন্য জলবায়ু সংবেদনশীল কৃষি অনুশীলন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে এমন চরম ঘটনাগুলোর কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষির মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ হারাতে পারে।
রাশিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি সমতা-বন্ধুত্ব: রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ইউরেভিচ রুদেনকো বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি ছিল বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমতা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ১৯৭২-৭৪ সময়কালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মাইন অপসারণ ও ডুবে থাকা জাহাজ উত্তোলনে তৎকালীন সোভিয়েত নৌবাহিনী যে সফল অভিযান চালায়, এ বছর তার ৫০ বছর পূর্তিতে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে তা উদযাপন করা হবে বলে ঘোষণাও দেন তিনি।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৫ অক্টোবর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাডিমির পুতিন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকন্দ্রের জন্য প্রথম পারমানবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করেন রুদেনকো।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার ব্যাপারে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
দুই দেশের মধ্যে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনে এর আকার ও পরিধি আরও বাড়বে বলে আশা করেন।
আরও পড়ুন: জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দক্ষ জনবল নিতে চায় রাশিয়া: প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী
তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া তথা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ-রাশিয়া উভয়েই জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় দুই দেশই একসাথে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ছিলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী কর্নেল জেনারেল আলেকজান্ডার ফোমিন এবং মস্কো সিটি গভর্নমেন্টের মন্ত্রী সের্গেই চেরেমিন। এ ছাড়া মস্কোতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ষাটের অধিক দেশের রাষ্ট্রদূত, স্টেট ডুমার সদস্য, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান ’ভিশন ২০৪১’ এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট ও উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে অধিক হারে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান।
রমজান মাসের কারণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ঈদ-উল-ফিতর এর পরে আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে: জেলেনস্কি
দেশে আরও ১২ জনের করোনা শনাক্ত
দেশে শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি।
তবে এ সময় নতুন করে ২০ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৮২৮ জনে।
এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্তের হার ৪ দশমিক ০১ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩০২ জনে।
বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে কানাডার বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়তা করবে এফআইপিএ: হাইকমিশনার
সম্প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (এফআইপিএ) সইয়ের বিষয়ে কারিগরি দিকগুলো আলোচনা করতে কানাডাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান।
এফআইপিএ আলোচনা শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রস্তাব কানাডার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আস্থা জোরদার করবে বলে মনে করেন তিনি।
একই সঙ্গে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্য প্রতিনিধির নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলকে আসন্ন ঢাকা সফরকে স্বাগত জানান তিনি।
কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি অটোয়ার হিল্টন গার্ডেন হোটেলে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
হাইকমিশনার বলেন, ঢাকা ও টরন্টোর মধ্যে সরাসরি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু করতে পারায় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যে গতিশীলতা এসেছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অন্য সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের কথাও তুলে ধরেন তিনি। উভয় দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক লাখেরও অধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানদের অবদানের প্রশংসা করেন।
পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সংলাপের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত খুনি নুর চৌধুরীকে ডিপোর্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত দিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করতে ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে কানাডা সহায়তা করবে বলৌ আশা প্রকাশ করেন হাইকমিশনার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদীয় সচিব রবার্ট অলিফ্যান্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কানাডার সমর্থন এবং পরবর্তীকালে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ভাবনা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মডেল হিসেবে কাজ করছে।
রবার্ট অলিফ্যান্ট মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে মানবিক কারণে অস্থায়ী আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ দেশে টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-সহ অন্যান্য ফোরামে কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।
পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি কানাডার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের অবদানের কথাও স্বীকার করেন।
কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের (সিবিপিএফজি) চেয়ারপার্সনসহ অন্যান্য সংসদ সদস্য ও সিনেটরগণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, পবিত্র রমজান মাসের কারণে ২৬ মার্চ-২০২৪ তারিখের পরিবর্তে ১৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে কানাডার সিনেটর, সংসদ সদস্য, অটোয়াস্থ কূটনৈতিক মিশনসমূহের প্রধান এবং বাংলাদেশি-কানাডিয়ানসহ দেড় শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
চরফ্যাশনে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে মো. বায়েজিদ(৬) ও মারিয়া সুলতানা (৪) নামে দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে শশিভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের ভাসানচর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শিশু দুটি ভাসানচর গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার সন্তান।
শিশু দুটির মামা ফয়েজ উল্লাহ জানান, দুপুরের দিকে বায়েজিদ ও মারিয়া বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে গেলে তারা দুজনই পানিতে ডুবে যায়। তাদের দুজনকে বাড়িতে না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে ৪ বছরের শিশু মারিয়ার জুতা ভাসতে দেখে পুকুরে নেমে খুঁজতে থাকলে শিশু বায়েজিদ ও মারিয়ার লাশ ভেসে উঠে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ, লাশের সঙ্গে ডাক্তার অবরুদ্ধ
চরফ্যাশনের শশিভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনা জানার পরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের পাঠানো হয়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্বাভাবিক কোনো কিছু পায় নি। পরে শিশুদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে পুকুরে ডুবে ২ বছরের শিশু মৃত্যু
কাতারের আমিরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ঢাকা, সহযোগিতা বাড়ানোর দিকে নজর দুই দেশের
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে কাতার আমিরের। সফরকালে বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ একাধিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে প্রায় ডজনখানিক নথি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সরকার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে আমিরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে ঢাকার কয়েকটি রাস্তা সাজানো হয়েছে।
প্রায় ১৯ বছর পর বন্ধুপ্রতীম দেশ কাতার থেকে ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী এমন উচ্চ পর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কাতারের তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আলে সানি ২০০৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্দি বিনিময়, দ্বৈত কর পরিহার, জনশক্তি রপ্তানি, ধর্ম ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে দুই দেশের মধ্যে ঠিক কতটি চুক্তি সই হবে তা জানা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন: কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছাড়াও ফিলিস্তিন-ইসরায়েলসহ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে। যেখানে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে।
গত মাসে তুরস্কে আন্তালিয়া কূটনীতি ফোরামে অংশ নেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূলের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে, যুদ্ধের পক্ষে নয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন আমিরকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
সোমবার বিকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমিরের পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে তার কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের দুজনের মধ্যে বৈঠক হবে এবং এরপর আরও একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
দুই নেতা সহযোগিতার দলিল সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
সেখানে পরিদর্শন বইয়ে সই শেষে আমির মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের দরবার হলে কাতারের আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে রাজধানীর একটি সড়ক ও একটি পার্কের নামকরণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস কাতারের
ওইদিন বিকাল ৩টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় পার্ক এবং বিকাল ৩টায় মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়ক উদ্বোধন করবেন তিনি।
এছাড়া নির্বাচিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন আমির।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশ ও কাতার জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জাতিসংঘ সম্মেলনের (এলডিসি-৫) ফাঁকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কাতারের কাছে জ্বালানি বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর ১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতের উন্নয়নেও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলার মাধ্যমে প্রতিদান দেয় কাতার।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ, অভিন্ন ধর্মীয় ভিত্তি, অভিন্ন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
সুশৃঙ্খল ও পরিশ্রমী হিসেবে অত্যন্ত প্রশংসিত চার লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ও কাতার বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ এবং কাতারের রূপকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নে একে অপরকে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে।
আরও পড়ুন: জনশক্তি, জ্বালানি ও বিনিয়োগে সহযোগিতা জোরদারে কাতারের আমিরের সফর: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
তীব্র তাপপ্রবাহে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে স্কুল-কলেজ
চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতির কারণে আগামী ২৭ এপ্রিল (শনিবার) পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়েরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ঈদের ছুটি শেষে আগামীকাল (২১ এপ্রিল) দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিন তাপপ্রবাহের বর্তমান অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে।