মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আকবর হোসেন জানান, ১৯৭১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের জগদলহাট আক্রমণের মধ্যে দিয়ে এ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাভিযান শুরু হয়। নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে আক্রমণ ও অগ্রাভিযান শুরু হয় পুরোদমে। ২২ নভেম্বর ১২ রাজপুতনা রাইফেলস রেজিমেন্টের ‘এ’ কোম্পানির সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একত্রিত হয়ে হামলা ও অগ্রাভিযানে অংশ নেয়। ওইদিন ৮২টি ভারতীয় ট্যাংক এসে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। সেই সাথে আসে ভারতীয় ৭ মারাঠা রেজিমেন্ট। সম্মিলিত বাহিনী ২৩ নভেম্বর ঈদুল ফিতরের রাতেই অমরখানা ও জগদল দখল করে নেয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধ কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) বদরুদ্দোজা বদর জানান, ২ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী ঠাকুরগাঁও শহরের শক্ত প্রতিরক্ষা ও তাদের রিয়ার হেড কোয়ার্টার ইপিআর ক্যাম্পের ঘাঁটি ছেড়ে বীরগঞ্জের দিকে পিছু হটতে থাকে এবং ভাতগাঁও সেতুর কাছে অবস্থান নেয়। তার আগে ভোরে তারা ইপিআর ক্যাম্পের সামনের রামদাড়া সেতু উড়িয়ে দেয়।
সকালে সম্মিলিত বাহিনী সেতুর পাশ দিয়ে রাস্তা করে সমরাস্ত্র নিয়ে পার হয়। গেরিলারা ২ ডিসেম্বর রাতেই ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করেন। তারা গড়েয়া রাস্তা দিয়েও অগ্রসর হন। পরদিন ৩ তারিখে সকালে সম্মিলিত বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরাট একটি দল ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে।
বালিয়াডাঙ্গী ও আখানগর দিয়ে মুক্তিবাহিনীর অপর একটি দলও আক্রমণ চালিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে এগিয়ে আসে। সম্মিলিত দল ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে এসে হাজির হয় এবং দিনভর বিজয় পতাকা উড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে।
জেলার হরিপুর ও রাণীশংকৈল উপজেলাও মুক্ত হয় একই দিনে। কোচল, ভাতুরিয়া, ডাবরী, চাপসা, জগদল, কাঠালডাঙ্গী সীমান্ত দিয়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী গোলা বর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকে।
জেলা উদীচীর সভাপতি সেতারা বেগম জানান, ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবসে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যৌথভাবে শোভাযাত্রা, সাধারণ পাঠাগার চত্বরের শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে সমাবেশ, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আবৃত্তি, গণসঙ্গীত, ফানুস ওড়ানো এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারদের সদস্যদের সম্মাননা জানানো আয়োজন করা হয়েছে।