শনিবার কসমস সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো বলেন, ‘প্রথমে আমাদের কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস গভীর করা প্রয়োজন এবং তারপর দরকার অর্থনৈতিক একীভূতকরণ গভীর করা।’
রাষ্ট্রদূতের উত্থাপন করা বাকি তিনটি সুপারিশ হলো- উদ্ভাবন ও মিথষ্ক্রিয়া গভীর করা, নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে শক্তিশালী সহযোগিতা থাকা এবং সংস্কৃতি ও মানুষের মাঝে সংযোগ গভীরে নেয়া।
‘সমতা ও পারস্পরিক বিশ্বাস নিয়ে ভালো অংশীদার হওয়ার জন্য আমাদের হাত মেলানো উচিত। বৈশ্বিক শাসনের স্তর উন্নয়নে আমাদের একসাথে কাজ করা উচিত,’ যোগ করেন তিনি।
রাজধানীর সিক্স সিজনস হোটেলে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কসমস গ্রুপের জনহিতকর সংস্থা কসমস ফাউন্ডেশন এ সংলাপের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ও চীনের বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুদেশের সম্পর্ক, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (আইএসএএস) এর প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘সব সময়ের উপযোগী এবং সময়ের পরীক্ষিত বন্ধুত্ব’ হিসেবে আখ্যা দেন এনায়েতুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কে আনন্দময় ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। আমার ভবিষ্যৎ বাণী হলো যে আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাস, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য ও প্রত্যাশা পূরণের পথে একসাথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে অসাধারণ এক বৈশিষ্ট দেখা যাচ্ছে, আর তা হলো চীনের উত্থান।
অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের নিয়মিত সংলাপ আয়োজনের অংশ। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন চীনের সিচুয়ান ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লি তাও, পিপলস ডেইলির ভারত ব্যুরোর সিনিয়র সাংবাদিক ইয়ন জিরং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে ইউএনবি চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ খান ও পরিচালক মাসুদ খান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন খুব ‘ভালো ও নির্বিঘ্নে’ আয়োজিত হবে বলে তারা আশা করছেন। সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক আরও গভীর করবে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ, প্রত্যাবাসন ও উন্নয়ন- এই তিন ধাপ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যের সমস্যা যথাযথভাবে সমাধান করার জন্য চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাবে।
উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য যথাযথ উপায় বের করার পাশাপাশি সংলাপ ও সলা পরামর্শের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যের বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধানের জন্য চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের রাজনৈতিক অবস্থান বাড়ানোর প্রতি জোর দেন। সেই সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য শাসন, উন্নয়ন ধারণা ও সামাজিক সংস্কৃতিতে বিনিময় জোরদার করার কথা বলেন।
চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজে দুদেশের গতি আনা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। তারপর যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরুর পক্ষে মত দেন রাষ্ট্রদূত।
চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়াতে শুল্ক আরোপ হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৯৭ শতাংশে শূন্য শুল্ক আরোপের জন্য চীন অল্প সময়ের মধ্যে পত্র বিনিময় সম্পন্ন করবে বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ স্থল ও সামুদ্রিক সিল্ক রোডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তাই দেশটি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ যৌথভাবে বাস্তবায়নের জন্য স্বাভাবিকভাবেই অংশীদার হয়েছে। দুদেশের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগ উন্নত করার দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, সমুদ্র অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রকল্পে উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিয়োগ এবং অবকাঠামোগত সহযোগিতার মাধ্যমে চীন সাহায্য দিতে আগ্রহী বলে জানান রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো।
‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম চায়না ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও কুনমিং স্টিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিশেষ নজর দেয়ার মাধ্যমে আমরা ব্যাপকভাবে শিল্পকারখানার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার উন্নয়ন করব,’ যোগ করেন তিনি।
নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘শান্তি ও সহযোগিতার জন্য ভালো অংশীদার হতে আমাদের একসাথে কাজ করা উচিত। আমাদের শান্তি, নিরাপত্তা, পারস্পরিক বিশ্বাসের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করা দরকার।’