বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে লন্ডনের উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
ফ্লাইটটি একই দিন স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
লন্ডনে দুদিনের যাত্রাবিরতির পর রবিবার সকালে তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে করে নিউইয়র্ক রওনা দেবেন। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে হোটেল গ্রান্ড হায়াত নিউইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি এখানে অবস্থান করবেন।
তিনি প্রতিবারের মতো এবারও ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য দেবেন। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য তুলে ধরবেন নতুন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা।
সেই সাথে একই দিনে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠক করবেন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ডাচ প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন বিশ্বনেতার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ভূমিকার জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন থেকে স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় হোটেল নিউইয়র্ক হিল্টন মিডটাউনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
সফরের দ্বিতীয় দিন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশন আয়োজিত মাদক সমস্যা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতি দেয়ার আগে তিনি গ্রুপ ফটোসেশনেও যোগ দেবেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরে উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনার আয়োজিত উদ্বাস্তুদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সেই সাথে তিনি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রোটের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন।
প্রধানমন্ত্রী হোটেল গ্রান্ড হায়াত নিউইয়র্কে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। বিকালে তার সাধারণ অধিবেশন কক্ষে নেলসন মেন্ডেলা শান্তি সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে।
তিনি নিউইয়র্কে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম আয়োজিত টেকসই উন্নয়ন প্রভাব সম্মেলনে যোগ দেবেন। পাশাপাশি তিনি নারী ও মেয়ে শিশু শিক্ষায় বিনিয়োগ নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান করা গোলটেবিল আলোচনায় থাকবেন। এছাড়া, সার্বজনীন শিক্ষাবিষয়ক জাতিসংঘ বিশেষ দূত আয়োজিত শিক্ষায় অর্থায়ন নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
সন্ধ্যায় তিনি লোট্টে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক কার্যালয় আয়োজিত সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব -অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সাথে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। বিকালে তিনি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক, জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনার এবং ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাক্ষাত করবেন। একই জায়গায় তিনি এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতিসংঘে সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয় আয়োজিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব-বৈঠকে অংশ নেবেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট পিটার মউরার সাথে সাক্ষাত করবেন।
একই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করবেন বলে কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি নিয়ে লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা এবং ইন্টার প্রেস সার্ভিস আয়োজিত অভ্যর্থনায় যোগ দেবেন।
সন্ধ্যায় তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের বার্ষিক নৈশভোজে অংশ নেবেন।
শেখ হাসিনা ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।
লন্ডনে যাত্রাবিরতির পর ১ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।