বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি, ২৭ নভেম্বর (ইউএনবি)- মানবদেহের রক্তশূন্যতা একটি জটিল রোগ। মানুষের দেহে পর্যাপ্ত রক্ত থাকাটা অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। রক্তশূন্য মানুষ খুবই দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। রক্তশূন্য মানুষের জন্য তাই প্রয়োজন অন্য আরেকজন মানুষ থেকে সংগ্রহ করা রক্তের। কিন্তু সেই রক্ত যদি ভেষজ উপদানের মাধ্যমে পূরণ হয় তাহলে কেমন হয় বলুনতো। তেমনই একটি ইতিবাচক খবর দিলেন কলেজ শিক্ষক মো: জহির উদ্দিন।
তিনি জানালেন, রক্ত উৎপাদনের ভেষজ উদ্ভাবন করেছেন। ইতিমধ্যে সেই ভেষজ বেশ কয়েকজন রক্তশূন্য মানুষের মাঝে প্রয়োগ করার পর তারা সুফলও পেয়েছেন।
শিক্ষক মো: জহির উদ্দিন বলেন, তাঁর উদ্ভাবিত এই ভেষজ উপাদানের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে মানবদেহে রক্ত উৎপাদন শুরু হয়। কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়া রক্ত উৎপাদনের এ প্রক্রিয়া আরও বিজ্ঞানসম্মত করতে তিনি সরকারের ওষুধ প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও কামনা করেছেন।
ভেষজ উপায়ে রক্ত উদ্ভাবক মো: জহির উদ্দিন ইউএনবিকে জানান, প্রায় একযুগের বেশি সময় গবেষণা, এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বই সংগ্রহ, পড়া-লেখা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি গাছ-গাছালির নির্যাস থেকে রক্ত উৎপাদনের ভেষজ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু রোগী তাঁর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন।
রক্ত উৎপাদনের এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে রোগীরা শতভাগ সফল হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাঁর উদ্ভাবিত রক্ত উৎপাদনের ভেষজ পাউন্ড প্রতি খরচ হবে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে রোগীর শরীরে রক্ত ভরতে হবে না’।
জহির উদ্দিন বলেন, একজন রক্তশূন্য রোগী তার উদ্ভাবিত ভেষজ ওষুধ সেবনের সাথে সাথেই শরীরে নতুন রক্ত উৎপাদিত হবে। এজন্য তাকে অন্যকোনো ওষুধ বা যন্ত্রপাতির আশ্রয় নিতে হবে না। শুধুমাত্র প্রকৃতির বিভিন্ন গাছ-গাছালির উপাদানের মিশ্রণে তৈরি ভেষজ ওষুধ রক্ত উৎপাদন সম্ভব।
মো. জহির উদ্দিন সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দাসউরা গ্রামের নূর উদ্দিনের ছেলে। তিনি বিয়ানিবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের খন্ডকালীন প্রভাষক। পাশাপাশ তিনি গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।
তাঁর ধারণা, বিশ্বে তিনিই একমাত্র ভেষজ উপায়ে দ্রুততম সময়ে রক্ত উৎপাদনের আবিষ্কারক।
এদিকে তাঁর এ ভেষজ উদ্ভাবনী তথ্যের পর সিলেট জেলাজুড়ে বেশ সাড়া পড়েছে। রক্তশূন্য রোগীরা এসে ভিড় করছে তার কাছে।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: হিমাংশু লাল রায় জানান, আমি ওই ভেষজ উদ্ভাবকের সাথে কথা বলবো। তাঁর এ প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও বেশি করে জানা দরকার। এরপর প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।
জহির উদ্দিনের উদ্ভাবিত ভেষজ ওষুধ সেবন করে সুফল পেয়েছেন এমন একজন রক্তশূন্য রোগী আবদুস সালাম (৪৮)। তিনি বিয়ানিবাজার মাতিউরা গ্রামের আবদুস সহিদের ছেলে। সালাম জানান, শিক্ষক জহির উদ্দিনের কাছ থেকে রক্তশূন্যতা পূরণে ভেষজ ওষুধ নেন। এক সপ্তাহ পরপর ৩ বার ভেষজ ওষুধ সেবন করে এখন সুস্থ আছেন।
জহির উদ্দিনের ভেষজ ওষুধ সেবন করেছেন এমন আরেকজন রক্তশূন্য রোগী মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসের বাজার এলাকার সমরদাসের পুত্র সুবোল দাস (৫০)। তিনি বলেন, ভেষজ ওষুধে তার রক্তশূন্যতা দূর হয়েছে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেননি। এই ওষুধ সেবনে নিজ থেকেই রক্ত উৎপাদন হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মোয়াজ্জেম আলী খান ইউএনবিকে বলেন, ভেষজ উপায়ে অনেক রোগ নির্মূল করা সম্ভব। তবে রক্ত উৎপাদনের এ প্রক্রিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রকৃতির কোনো জিনিসই ফেলনা নয়। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বৈজ্ঞানিক ছাড়পত্র পেলে এ প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং সুজন সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: আমান উদ্দিন বলেন, আমি এ ধরনের একটি ওষুধ উদ্ভাবনের খবর পেয়েছি। এখন যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকারি সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন।