ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- মানুষের নানা রকম নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে যেমন মাটি কাটা, গাছ কাটা, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ এবং কার্যকর সংরক্ষণ পরিকল্পনার অভাবে দেশের অধিকাংশ পাহাড় আজ ধ্বংসের মুখে রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র সাথে আলাপচারিতায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচলাক ড. আতিউর রহমান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারমান আবু নাসের খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম এ মতামত দেন।
তারা বলেন, পাহাড়গুলোকে সংরক্ষণের জন্য দেশীয় উদ্ভিদের সংরক্ষণ, পাহাড়ের সম্পদের ওপর ব্যাপক নজরদারি ও পাহাররক্ষা নীতিমালা এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ভূমি ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে পাহাড়াগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে অনেক খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও সতর্ক করে দেন তারা।
যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পাহাড় কাটা ও গাছ কাটার ব্যাপারে আমাদের তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সেটি হচ্ছে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পাহাড়ে তদারকি ব্যবস্থার জন্য গত ছয় বছরে সেখানে কোনো নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে সরকার দ্রুত এসব বিষয়ে দৃষ্টি দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
ড. আতিক রহমান বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ পাহাড়গুলো পাথর ছাড়া শুধু মাটির হওয়ায় স্থিতিশীলতা কম। এজন্য পাহাড় থেকে মাটি ও গাছ কাটা ও সমনিম্বত পরিকল্পনার অভাবে পাহাড়গুলো ধ্বংস হচ্ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, পাহাড়ি ঢালগুলি স্থিতিশীল করতে বিশাল বনায়ন প্রয়োজন এবং এইভাবে পাহাড়ি অঞ্চলে সম্ভাব্য ভূমিধস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, একটি পরিকল্পিত উপায়ে পাহাড়ের উপর রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য একটি উদ্ভাবনী প্রকল্প এবং পাহাড়ের ইকো-সিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা উচিত।
পাহাড়কে রক্ষা করতে এখন সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকে অনেক মূল্য দিতে হবে বলেও সতর্ক করে দেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।
আবু নাসের খান বলেন, পাহাড় কাটা, পাহাড় ও তার সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বৃষ্টির পানি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চ্যানেলের অভাবের কারণে দেশের বেশিরভাগ পাহাড় খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
পাহাড় ও ভূমিধস থেকে রক্ষা পেতে সরকারকে জাতীয় পাহাড় ব্যবস্থানা নীতি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, পাহাড়ের মাটি এবং গাছগুলো যেনো কোনোভাবেই কাটা না পড়ে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ফলে কক্সবাজারে বনগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে পবা চেয়ারম্যান বলেন, তারা জ্বালানী হিসেবে বনের গাছাপালাকে ব্যবহার করছে। বন বাঁচাতে হলে তাদেরকে জ্বালানীর জন্য সরকারকে অতি দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়কে রক্ষা করতে এই মুহূর্তে শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গিকারের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পাহাড় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান।