কক্সবাজার, ২৪ ডিসেম্বর (ইউএনবি)- বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে নানা নাশকতা ঘটানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা কোনো গোষ্ঠি বা প্রার্থীর পক্ষে যাতে প্রচারণা বা কেন্দ্রে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ।
নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন ও পরের দিন রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্পের বাইরে আসতে না পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশন বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। রোহিঙ্গারা যেমন বাইরে আসতে পারবে না একইভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও যাতে কেউ ঢুকতে না পারে সেই বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে এনজিও কর্মকর্তা ও কর্মীদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে রোহিঙ্গারা দলবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পের বাইরে চলে আসেন। অনেকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন এমনকি অনেকে নির্বাচনী প্রচারণার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের না হতে যে তিনদিনের নির্দেশনা দিয়েছেন তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। নির্বাচনকে ঘিরে রোহিঙ্গাদের কারণে বড় ধরনের সহিংতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে পালিয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বন ও পাহাড় কেটে ছোট-বড় ৩০টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৭৮-৭৯ সালে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের সাথে অন্যান্য রোহিঙ্গাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা ভোটকেন্দ্রে নাশকতা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নির্বাচনে যেন কোনো প্রার্থী পক্ষে বা বিপক্ষে ব্যবহার বা তারা যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
একইসঙ্গে এই সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবীকর্মী গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বা বের হতে না পারে সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তবে খাদ্য, ত্রাণ বা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কাজে ক্যাম্পে প্রবেশের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা শিথিল থাকবে।
পুলিশ সুপার ড. একে এম ইকবাল হোসেন জানান, ইসি তিনদিনের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিলেও এখন থেকেই উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নির্বাচন উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে কড়া নির্দেশনা রয়েছে, সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা টহল দিয়ে যাচ্ছে।
‘নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারণায় বিশৃঙ্খলা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার মতো কোনো কিছুই নজরে আসেনি বলে জানান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।’
কক্সবাজারে ৪টি সংসদীয় আসনে ২৮ জন প্রার্থী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে ৪টি পৌরসভা ও ৭১টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন।