সাতক্ষীরা, ২০ জানুয়ারি (ইউএনবি)- সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার শিশু শিক্ষার্থী অঞ্জনা দাস। খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সে। তার গ্রাম কাদাকাটি থেকে প্রতিদিনই বলুয়া নদীর উপর নির্মিত দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে অপর পাড়ের খেজুরডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হয় তাকে।
সম্প্রতি স্কুল ছুটি শেষে কাদাকাটি গ্রামে বাড়ি ফেরার পথে নদীর উপর সাঁকো পার হতে এসে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অঞ্জনা দাসকে, কিছুটা ভীতসন্ত্রস্তও দেখাচ্ছিল তাকে।
শিশু শিক্ষার্থী অঞ্জনা দাশ জানায়, ভয়ে ভয়ে সাঁকো পার হতে হয়, যদি পা পিছলে নদীতে পড়ে যাই। তাহলে তো ডুবে যাবো।
তার মতো এমন অনেক শিশু শিক্ষার্থীই সাঁকোটি পার হওয়ার সময় তাদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠছিল। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবক এসে তাদের সন্তানদের ১২০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোটি পার করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এটি প্রতিদিনেরই চিত্র।
স্থানীয়রা জানায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বলুয়া নদীর উপর নির্মিত বাঁশের তৈরি ১২০ ফুট ঝুঁকিপূর্ণ ওই সাঁকোটিই। সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন খেজুরডাঙ্গা, পারখেঁজুরডাঙ্গা ও বাঁশতলা গ্রামের শত শত মানুষকে পারাপার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বিশেষ করে জীবন বাজি রেখে স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিশু, কিশোর, বয়স্ক ও নারী এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন।
কাদাকাটি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সামছুল হক বলেন, বলুয়া নদীর কাদাকাটি-খেজুরডাঙ্গা দুই গ্রামের মাঝে বলুয়া নদীর উপর প্রায় একযুগ আগে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। সাঁকুটি এখন নদীর এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য খেজুরডাঙ্গা, অপর পাড়ের পারখেজুরডাঙ্গা ও বাশতলা এই তিন গ্রামের জনসাধারণই বেশি ব্যবহার করে থাকে।
তিনি বলেন, স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, কৃষিকাজে, ব্যবসায়ীক কাজে লোকালয়ে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের এই সাঁকোটি।
স্থানীয় কৃষক রবিউল বলেন, নদীটির উপর ব্রীজ না থাকায় পারাপারে ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায় সময় স্কুলে যাতায়াতে বাঁশের সাঁকো থেকে পা পিছলে আমাদের সন্তানার নদীতে পড়ে যায়। নদীর অপর পাড়ে চাষাবাদের কাজ করতে যেতে ও ফসল বাড়ি আনতে খুব সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, বলুয়া নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু আজও তা নির্মাণে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থী অর্পা রানী। সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। কাদাকাটি গ্রাম থেকে তার মা সংগীতা রানী সন্তানকে প্রতিদিনেই স্কুল শুরু ও শেষে সাঁকো পার করে আনা-নেয়া করেন।
সংগীতা রানী জানান, তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে প্রতিদিন সাঁকো পার করে দিয়ে আসতে হয়। আবার স্কুল ছুটির পরে তাদেরকে পার করে নিয়ে আসতে হয় বাড়িতে। নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় যাতায়াতে এমন ভোগান্তি দিনের পর দিন বহন করতে হচ্ছে তাদের।
খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কুমার গাইন জানান, নদীর অপর পাড়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত দীর্ঘ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকরা চরম উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটায়। আমরা অতিদ্রুত নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানাই।
তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে মাঝে মাঝে বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করে দিলেও তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোমলমতি শিশুদের ভয় ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সেখানে ব্রীজ নির্মাণের বিকল্প নেই।
আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসা. শামসুন্নাহার জানান, শিক্ষার্থীরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। গাবতলী এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয় প্রশাসনের নজরেও আনা হয়েছে বিষয়টি।
এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা জানান, খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে নদীর উপর অতিদ্রুত একটি ব্রীজ নির্মাণ করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনও ব্রীজটি নির্মাণ করা সম্ভব হযনি। ওই এলাকায় যাতে অতিদ্রুত একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।