এতে ওই গ্রামের শতাধিক পরিবারের চলাচলের একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী।
উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রতনপুর গ্রাম। গ্রামটির উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তাটি গিয়ে মিশেছে কাদিরপুর-রতনপুর-মহিষ গাড়ি বিলে। গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া এই রাস্তাঘেঁষা ইটভাটার মালিক খোকসা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আয়ুব আলী বিশ্বাস।
স্থানীয়রা জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান তার ভাটায় ইট লোড আনলোড করার সুবিধার্থে ২৩ ফুট প্রশ্বস্ত এই কাঁচা রাস্তাটির দক্ষিণের সংযোগস্থল থেকে প্রায় ২০০ মিটার লম্বা করে মাটি কেটে নিজের ভাটার পুকুর ভরাট করেছেন। এখানেই খান্ত হননি চেয়ারম্যান। রাস্তার জমির উপর দিয়ে পোড়ানো ইট রেখেও জমি দখলে নিয়েছে। ফলে গ্রামবাসীর যাওয়া-আসার রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। তারা জানায়, অনাদিকাল থেকে এ রাস্তার দুই পাশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার বসবাস করে আসছে। রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, কৃষকসহ কয়েক হাজার মানুষ আসা যাওয়া করে। রাস্তা কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে একাধিক গ্রামবাসী ও কৃষক চেয়ারম্যানের লোকজনের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল, রুস্তম, ছাত্তার ও মান্নান জানায়, ভাটার কাঁচা ও পাকা ইট লোড আনলোডের খরচ কমানো ও সরকারি রাস্তার জমি দখল নিতে চেয়ারম্যান রাস্তা কেটে মাটি দিয়ে ভাটার পুকুর ভরাট করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসী লাঞ্ছিত হয়েছে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী স্মৃতি খাতুন, পারভিন, মরিয়ম। তারা বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগেও তারা এই রাস্তা দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছে। হঠাৎ করেই একদিন বিকালে ভাটার অংশের রাস্তাটি উধাও হয়ে গেলো। চেয়ারম্যান রাস্তার মাটি কেটে নিজের পুকুর ভরাট করলো, কিন্তু কেউ কিছু বললো না। এখন তারা ইট খোলার ভেতর দিয়ে প্রধান রাস্তায় উঠছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে আর বাড়ি থেকে বেড়তে পারবে না। স্কুলেও যাওয়া হবে না।
এদিকে রাস্তা কেটে নেয়া ও দখল বিষয়ে বিচার চেয়ে স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলার সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। রাস্তা পুনঃনির্মাণ করার জন্য চেয়ারম্যানকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে।
ইটভাটার মালিক ১নং খোকসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, যেখান থেকে তিনি মাটি কেটেছেন সেখানে আসলে কোনো রাস্তাই ছিল না।
বরং তিনি ভাটার রাবিস দিয়ে রাস্তা বানিয়েছেন দাবি করে বলেন, আবার নিজের প্রয়োজনে সে রাবিস কেটে পুকুর ভরাট করেছেন।
এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান স্বীকার করেন ম্যাপে ৪ লিংক (জমি মাপের একক) রাস্তা আছে। সরকারিভাবে রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার কামরুজ্জামান জানান, চেয়ারম্যান রাস্তার মাটি কাটার পর জমি জরিপ করে রস্তার সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ম্যাপে রাস্তার কোথাও কোথাও ২৩ ফুটের বেশি প্রশ্বস্তা আছে।
তবে চেয়ারম্যানের পক্ষে সাফাই গাইলেন সার্ভেয়ার। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান নতুন করে রাস্তার কাজ শুরু করেছেন। রাস্তা পুণঃনির্মাণ করার পর আবার মাপ দেয়া হবে।
তবে, সরেজমিনে গিয়ে রাস্তা নির্মাণের বক্তব্যের সাথে মিল নেই দৃশ্যপটের।