মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালের আগস্টের পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সেই সাথে আগের দশকগুলোতে আরো কয়েক লাখ এসে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ১০ লাখের অধিক কাগজপত্রহীন রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
শুক্রবার প্রকাশিত ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পাচারের অপরাধ তদন্ত করে কিছু অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। সেই সাথে মানবিক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে, যা পাচারের কিছু অপরাধ রোধে অবদান রেখেছে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আগের বছরের তুলনায় এবার বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রচেষ্টা বাড়ানোর ‘নজির রাখেনি’। আদালত ২০১৭ সালে মাত্র একজন পাচারকারীকে সাজা দিয়েছেন। ২০১৬ সালের তুলনায় তা হ্রাস পেয়েছে এবং পাচারের সমস্যার তুলনায় এটি কম।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, বাসাবাড়ি, গেস্ট হাউজ বা হোটেলে কাজের জন্য উদ্বাস্তু শিবির থেকে প্রায়ই রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের নিয়োগ করা হচ্ছে। সেই সাথে রোহিঙ্গা মেয়েদের যৌন কাজে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও ঢাকা এবং আন্তঃদেশীয়ভাবে কাঠমান্ডু ও কলকাতায় পাচার করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু মেয়েকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘বেচাকেনা’ করা হচ্ছে।
কিছু রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েকে অন্য রোহিঙ্গারা কাজ ও বিয়ের প্রস্তাবের প্রতারণা করে যৌন কাজে ব্যবহারের জন্য পাচার করছেন।
রোহিঙ্গা মেয়ে ও ছেলেদের বাংলাদেশে দোকানদারি, মাছ শিকার, রিকশা চালানো ও গৃহস্থলি কাজের জন্য উদ্বাস্তু শিবির থেকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা (১৮-২৪ মার্কিন ডলার) বেতন দেয়ার কথা বলা হলেও এসব শিশুদের অনেক কম বা বেতনই দেয়া হয় না। এছাড়া, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না এবং অত্যধিক সময় ধরে কাজ করিয়ে নেয়া হয়।
বাংলাদেশি মাছ শিকারীদের জমিতে আশ্রয় নেয়ার বিনিময়ে কিছু রোহিঙ্গা পুরুষকে ঋণ দাসত্বে আবদ্ধ হতে হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এমন কিছু রোহিঙ্গা পুরুষ ২০ বছর ধরে বাংলাদেশি মাছ শিকারীদের কাছে ঋণ দাসত্বের জালে আটকা পড়ে আছেন।
সাম্প্রতিক অতীতে নৌকায় করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যাওয়া কিছু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিবাসী মুক্তিপণ দিতে না পেরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাদের বাধ্যতামূলক শ্রমের কাজে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে, জানানো হয় প্রতিবেদনে।