অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক নেতা এবং রাজনৈতিক মহলের মদদপুষ্ট হয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট চক্র।
জানা গেছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরমধ্যে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে-দেড় হতে দু’লাখ টাকা, রুটিন মেইনটেনেন্সে-৪০ হাজার টাকা, স্লিপে ৪০ হতে ১লাখ টাকা, ওয়াশব্লক মেইনটেনেন্সে-২০হাজার টাকা, বাউন্ডারি নির্মাণে-৭ লাখ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে-১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে সরকার।
এসব প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বরাদ্দ কোটি-কোটি টাকা উন্নয়ন কাজে ব্যবহার না করে লুটপাটের অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই। এই ভাগ-বাটোয়ারায় নতুন আপদের নাম সিন্ডিকেট। এরা এতই প্রভাবশালী যে, প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিচ্ছে বরাদ্দের চেক।
এই চক্রটি শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জিম্মি করে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা মূল্যের ক্ষুদ্র মেরামত ও সংষ্কার প্রকল্পের ৩৫টি চেক হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেটের কাছে চেক বিক্রি করে নিজেরাই সেই অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ব হলোখানা, বীরপ্রতীক তারামন বিবি, চাঁন্দের খামার, ঘোগাদহ, কাতলামারীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বরাদ্দ পেলেও একটুও কাজ হয়নি। উল্টো বরাদ্দের টাকা লোপাট হয়েছে।
এসব বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে সহকারি শিক্ষকরা বলেন, সরকার কি কি বরাদ্দ দেয় সেটা প্রধান শিক্ষক আর কমিটির সভাপতিই ভাল জানেন। আমাদেরকে কেউ কিছুই জানান না।
কাতলামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখমল হোসেন বলেন, অফিসের নির্দেশেই আমি স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের দেড় লাখ টাকার চেক দিয়েছি। আমাকে প্রশ্ন না করে অফিসে গিয়ে প্রশ্ন করেন।
পুর্ব হলোখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনসার আলী বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন মিটিং না করেই কয়েক মাসের মাথায় আমার কাছ থেকে ৫টি চেকে সই নেয়। আমি জিজ্ঞেস করলেই বলে বরাদ্দ পাওয়া যাবে তাই দরকার। আমি বয়স্ক মানুষ এতো কিছু বুঝিনা তাই সই দিয়েছি।
অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার আবুল হোসেন কিং ছিনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, আমি লোক মুখে শুনতে পারি প্রধান শিক্ষক আমার সই জাল করে ৮১হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। পরে প্রধান শিক্ষককে বললে তিনি ভুল স্বীকার করেন।
এই বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরন্নবী বলেন, ভাই আমি ভুল করেছি। স্কুলে কাজ চলছে তাই জরুরি ছিল টাকা তোলার। সভাপতির সাথে যোগাযোগ করেছিলাম কিন্তু তার দেখা না পাওয়ায় এই কাজটি করেছি।
এ ব্যাপারে সিন্ডিকেট চক্রের মূল হোতা ও সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে মোবাইলে বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এসব বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে দাবি করেন, নিয়মনীতির মধ্যেই সবকিছু করা হয়েছে।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩৫টি চেক উত্তোলনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, ’শিক্ষকরাতো কোন অভিযোগ করেননি। আপনাদের কাছে এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। আর আপনাদের অভিযোগ আমি নিবো না।’
তবে এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম ছুটিতেও থাকলেও তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, ’কোন শিক্ষক বা ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্যই শিক্ষা অফিসে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’