খুলনা ২৫ ডিসেম্বর (ইউএনবি)- খুলনায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। রমরমা ব্যবসার কারণে নগরীর বাইরের উপজেলাগুলোতেও এখন রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে।
তবে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশির ভাগেরই অনুমোদন নেই।
এ ধরনের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই।
জানা গেছে, নামমাত্র স্বাস্থ্য বিভাগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই বছরের পর বছর লাইসেন্সবিহীনভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরীর খুলনা মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থিত আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের ভাই মো. এনায়েত জানান, তার ভাইয়ের নামে ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পৃথকভাবে লাইসেন্স নেয়া আছে।
তিনি বলেন, আনোয়ারা নার্সিং হোম নামে লাইসেন্স করা হলেও পরবর্তীতে এফিডেভিট করে আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নাম রাখা হয়।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী মহানগরীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাইসেন্সকৃত ও লাইসেন্সবিহীনসহ ৯৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীন রয়েছে ২১টি, যা লাইসেন্সের প্রক্রিয়াধীন আছে। এ তালিকায় আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোথাও নাম উল্লেখ নেই।
নগরীতে এমন আরও একটি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ভৈরব স্ট্রান্ড রোডের ডা. মো. আমান-উল্লাহ ক্লিনিক ও মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার। জন্মলগ্ন থেকেই লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করে আসছিল। যুগ পার হওয়ায় চলতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্লিনিকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ৮২ নম্বর তালিকায় মন্তব্য ঘরে লেখা আছে ‘লাইসেন্স নেই, প্রক্রিয়াধীন আছে’। কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমতির জন্য আবেদন নেই।
সূত্র জানায়, এদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে গেলেই স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ও বিভিন্ন তদবিরের কারণে অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে সেগুলোও যথাযথ নিয়ম মানছে না। ক্লিনিকগুলোতে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী নার্স ও অন্যান্য শর্ত পূরণ না করেই চলেছে। তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান, নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, বর্তমানে কেউ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র, নারকোটিকস এর লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে আরও কিছু শর্ত আছে, সেগুলো পূরণ করেই আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর ওই প্রতিষ্ঠানে তদন্ত কমিটি যাবে। যদি হাসপাতাল করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের সব শর্ত পূরণ থাকে, তবেই তাকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।
খুলনা বিভাগের (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. সুশান্ত কুমার রায় বলেন, বর্তমানে ক্লিনিকে ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হালনাগাদ তথ্য রয়েছে। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স ও লাইসেন্সবিহীন তথ্য উল্লেখ রয়েছে। যারা লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছেন তাদের তালিকাও রয়েছে। এই তালিকার বাইরে কেউ যদি দাবি করে আমার লাইসেন্স রয়েছে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হবে। তারা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য।