গত ২৩ জানুয়ারি আগামী ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে সর্বশেষ ২৮ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৬ জুন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা ও ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনোর মতো বিষয়গুলো সমাধান না করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেয়ায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ইউএনবি’র সাথে আলাপকালে হতাশা ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি শাখা সভাপতি আল মেহেদী হাসান তালুকদার বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রথম শর্তই হলো ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহবস্থান নিশ্চিত করা।
কিন্তু ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীদের আবাসিক হলগুলোতে থাকতে দিচ্ছে না, অভিযোগ ওই ছাত্রদল নেতার।
তিনি আরও বলেন, এমনকি তারা (ছাত্রলীগ) আমাদের নেতাকর্মীদের ক্লাস-পরীক্ষায়ও অংশ নিতে দিচ্ছে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্রদল নেতা অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও কর্তৃপক্ষ এখনো চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেনি। কোথায় কোথায় ভোটের বুথ থাকবে তাও জানানো হয়নি।
এ ধরনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সুরহা না করে কর্তৃপক্ষ কীভাবে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করলেন? প্রশ্ন রাখেন ছাত্রদল সভাপতি আল মেহেদী।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখা সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, চুড়ান্তু ভোটার তালিকা ও ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের পরে কর্তৃপক্ষ ভোটের তারিখ নির্ধারণ করলে আমাদের জন্য প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হতো।
ডাকসু নির্বাচনের তারিখকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ইউএনবিকে বলেন, আমি কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং আশা করছি কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেবেন।
তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে বিভিন্ন বিষয়ের সমাধান হলে ভালো হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখনো পরিষ্কার নই যে কারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং কারাই বা ভোটে যোগ্য হবেন।
এদিকে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে ছাত্রসংগঠনের নেতা, হল প্রভোস্ট ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকদফা বৈঠকে বসলেও তার কোনো সুরহা হয়নি।
সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ে পরিবেশ পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ করা ও চূড়ান্তু ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বামপন্থিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা ক্যাম্পাসে সহবস্থানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তারা আবাসিক হলগুলোর পরিবর্তে ভোট কেন্দ্র বা ভোটবুথগুলো একাডেমিক ভবনে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা এখন নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল প্রস্তুত করছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা ঘোষণা করা হবে।
এছাড়াও ডাকসুর গঠনতন্ত্রে সংশোধনীসহ ভোটের আচরণবিধি ও ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি এক রিটের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই প্রেক্ষিতেই ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে তারা।
খসড়া তালিকা অনুসারে, ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন। যার মধ্যে ২৩ হাজার ৯৮৪ জন ছেলে এবং ১৪ হাজার ৫০৯ জন মেয়ে রয়েছে।