চলতি মৌসুম শেষ করে স্বেচ্ছায় ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাভি এর্নান্দেস। কিন্তু তাকে আরও এক মৌসুম থেকে যেতে রাজি করিয়েছিলেন বার্সা প্রেসিডেন্ট লাপোর্তা। অথচ সেই সিদ্ধান্তের এক মাস পর তিনিই শাভিকে ছাঁটাই করলেন।
এমন অদ্ভূত সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না বার্সেলোনার ভক্ত-সমর্থকসহ ফুটবল বিশ্বের অনেকেই। সেভিয়া কোচ কিকে সানচেজ তো প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন বার্সেলোনার কর্তাব্যক্তিদের ওপর। তবে বিদায় বেলায় এসবের কিছুই করেননি ন্যু ক্যাম্পে বেড়ে উঠে সেখানে থেকেই কিংবদন্তির তকমা গায়ে জড়ানো শাভি এর্নান্দেস।
প্রিয় ক্লাবকে বিদায় জানাতে গিয়ে আবেগে ভেসেছেন, মিশে গেছেন ভক্তদের অনুভূতির সঙ্গে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বার্সেলোনা জানায়, আগামী মৌসুম থেকে বার্সেলোনার ডাগআউটে আর দেখা যাবে না ৪৪ বছর বয়সী এই ম্যানেজারকে। এরপর ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের উদ্দেশে বিদায়ী বার্তা প্রকাশ করেন শাভি।
আরও পড়ুন: শাভি বরখাস্ত, বার্সার নতুন কোচ হচ্ছেন ফ্লিক
ভক্ত-সমর্থকদের ‘বন্ধু’ সম্মোধন করে তিনি বলেন, ‘রবিবারের পর আমাকে বার্সার বেঞ্চে আর দেখা যাবে না। প্রাণের ক্লাব ছেড়ে যাওয়া কখনোই সহজ নয়, তবে আমি গর্ব অনুভব করি। আমি গর্বিত যে, যে ড্রেসিংরুমটি আমার কাছে দ্বিতীয় পরিবারের মতো, সেখানে আড়াই বছর ধরে আমি প্রধান কোচ ছিলাম।
‘আমাকে সবসময় সমর্থন ও ভালোবাসার জন্য ভক্তদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে এবং আমার খেলোয়াড়ি জীবনের মতো একইরকম ভালোবাসা দিয়েছে।’
বার্সেলোনার কোচ হিসেবে এমন তিক্ত বিদায়ের পরও ক্লাবের প্রতি নিজের ভালোবাসা অক্ষুণ্ন রাখার কথা জানান তিনি। বলেন, ‘রবিবার থেকে গ্যালারিতে একজন ভক্ত হিসেবেই থাকব আমি। কারণ বার্সেলোনার খেলোয়াড় কিংবা কোচ হওয়ার আগে থেকেই আমি বার্সেলোনার ভক্ত। আমি এই ক্লাবটি শুধু মঙ্গলই চাই।’
বিদায় বেলায় নিজের সহকর্মী ও শিষ্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
‘এই সময়টায় অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় ও দারুণ সমকর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রস্তাবিত উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করতে পারায় সবাইকে ধন্যবাদ।
‘গত বছর আমরা লিগ ও সুপার কাপ জিতে মৌসুম শেষ করি। যদিও এই মৌসুমে আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাইনি, তবে আমাদের এটি ভুলে যাওয়া উচিৎ। লা মাসিয়ার নতুন প্রজন্মের তরুণ কিছু ফুটবলারদের আমরা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছি যা সকল বার্সা ভক্তকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
আরও পড়ুন: যে ৬ কারণে স্বপ্নযাত্রা থামল লেভারকুজেনের
বিদায়লগ্নে ভক্ত, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কর্মকর্তা, কর্মচারী, ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, পরিচালনা পর্ষদ, এমনকি মিডিয়া কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি শাভি। আড়াই বছর ধরে যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে স্মরণ করে বিদায় নিয়েছেন তিনি-
‘যে ক্লাবটিকে আমার হৃদয়ে ধারণ করি, তার জন্য শুভকামনা। বার্সা দীর্ঘজীবী হোক।’
প্রসঙ্গত, শাভির থেকে যাওয়া নিশ্চিত হওয়ার পর গত ১৫ মে আলমেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনের পর ঘটনা মোড় নেয়।
সেদিন নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়ানো নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বার্সেলোনার বর্তমান নাজুক আর্থিক চিত্র তুলে ধরেন শাভি। এতেই নাখোশ হয় ক্লাবটির পরিচালকদের একাংশ। সপ্তাখানেক ধরেই এ নিয়ে গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত তা সত্যি করে লজ্জাজনক বিদায় নিতে হচ্ছে এই কিংবদন্তিকে।