২০২৩-২৪ মৌসুম শেষে বার্সেলোনার দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্লাবটির সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমান কোচ শাভি এর্নান্দেস। তবে মৌসুম শেষে তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আরও এক মৌসুমের জন্য দায়িত্ব পালনে রাজি করান বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা। তবে এবার সেই শাভিকেই বরখাস্ত করল বার্সার পারিচালনা পর্ষদ।
শুক্রবার শাভিকে বরখাস্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি অফিশিয়াল বিবৃতি দিয়েছে বার্সেলোনা। ফলে আগামী মৌসুমে তাকে আর বার্সলোনার সাইডলাইনে দেখা যাবে না।
বিবৃতিতে বার্সেলোনা জানায়, ‘আজ শুক্রবার বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা কোচ শাভি এর্নান্দেসকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আগামী মৌসুম (২০২৪-২৫) থেকে আর বার্সেলোনার কোচ থাকছেন না।
‘কোচ হিসেবে শাভিকে তার কাজের জন্য, সেইসঙ্গে সাবেক খেলোয়াড় ও দলের অধিনায়ক হিসেবে তার অনবদ্য ক্যারিয়ারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তার ভবিষ্যতের সাফল্য কামনা করে বার্সেলোনা।’
আরও পড়ুন: কোপা আমেরিকায় চালু হচ্ছে ‘গোলাপি কার্ড’
আগামী রবিবার সেভিয়ার বিপক্ষে বার্সার ম্যাচটিই শাভির (বার্সা কোচ হিসেবে) শেষ ম্যাচ হবে জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন দল গঠনের বিষয়ে ঘোষণা দেবে বার্সেলোনা।
এদিকে ট্রান্সফার গুরু ফাব্রিৎসিও রোমানো এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, শাভির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে বায়ার্ন মিউনিখ ও জার্মানির জাতীয় দলের সাবেক কোচ হান্স ডিটার (হান্সি) ফ্লিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চলেছে বার্সেলোনা।
ইতোমধ্যে ফ্লিকের সঙ্গে নাকি মৌখিক চুক্তিও সেরে ফেলেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, বিদায় বলে দেওয়ার পর গত ২৪ এপ্রিল আরও এক মৌসুম বার্সেলোনায় শাভির থেকে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনা মোড় নেয় আলমেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে গত ১৫ মে সংবাদ সম্মেলনের পর।
সেদিন নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়ানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বার্সেলোনার বর্তমান আর্থিক চিত্র তুলে ধরেন শাভি। এতেই নাখোশ হয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর বেরোয়।
আরও পড়ুন: লেভারকুজেনের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে প্রথম ইউরোপা লিগ জিতল আতালান্তা
সেদিন শাভি বলেন, ‘(ক্লাবের নিবন্ধিত) সদস্যদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, আমরা এমন একটি আর্থিক পরিস্থিতিতে রয়েছি যা ২৫ বছর আগের চেয়ে একেবারেই আলাদা। অন্যান্য ক্লাবের মতো (আর্থিক) অবস্থায় আমরা বর্তমানে নেই। এটা আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি আর এর সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।
‘আমরা অবশ্যই শিরোপার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই, কিন্তু বার্সায় স্থিতিশীলতা আনতে সময় প্রয়োজন।’
ক্লাবের আর্থিক দুরাবস্থার কথা প্রকাশ্যে খোলাখুলি বলায় বার্সেলোনার পরিচালনা পর্ষদের একাংশ শাভির ওপর চটে যায়। খবর অনুযায়ী, নতুন করে চুক্তি আলোচনার সময় শাভি বর্তমান পরিস্থিতি ও খেলোয়াড়দের নিয়েই আগামী মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় শিরোপা অর্জনের মিশনে নামবেন- এমন সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। তবে সেই সিদ্ধান্তের বিপরীতে কথা বলায় পরিচালকরা ক্ষেপে যান।
এরপর গত কয়েকদিন ধরে পরবর্তী বার্সেলোনা কোচ হিসেবে হান্সি ফ্লিককে গুঞ্জন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সেটিরই বাস্তবায়ন হতে চলেছে।
গতকাল ফ্লিকের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে লন্ডনে যান ক্লাব কর্তারা। সেখানে আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে বলে জানান বার্সেলোনা বিষয়ক স্প্যানিশ সাংবাদিক জেরার্দ রোমেরো।
আজ ফাব্রিৎসিও রোমানো জানিয়েছেন, বার্সেলোনার কোচ হওয়ার ফ্লিকের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। বেশ কয়েক মাস থেকে তিনি ক্লাবটির কোচ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
এদিকে মুন্দো দেপর্তিভোর বার্সেলোনা বিষয়ক সাংবাদিক ফের্নান্দো পলো জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার ফ্লিককে বার্সেলোনার নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
তিনি জানিয়েছেন, ফ্লিকের সঙ্গে ১ বছরের চুক্তি করতে চলেছে বার্সেলোনা। তবে তিনি চাইলে আরও এক বছর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন তিনি।
আরও পড়ুন: যে ৬ কারণে স্বপ্নযাত্রা থামল লেভারকুজেনের
উল্লেখ্য, ফ্লিকের তত্ত্বাবধায়নে ২০১৯-২০ মৌসুমে ট্রেবল জেতে বায়ার্ন মিউনিখ। সেবার জার্মানির বর্ষসেরা কোচও হন তিনি। এরপর সেভিয়ার বিপক্ষে উয়েফা সুপার কাপ ও পরবর্তীতে ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে বায়ার্নকে প্রথমবারের মতো সেক্সট্রাপল জেতান তিনি।
দুই মৌসুম বায়ার্নের দায়িত্বে থাকাকালে ক্লাবটিকে ৭টি শিরোপা (দুটি বুন্দেসলিগা, একটি করে ডিএফবি পোকাল, সুপার কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ) জেতান তিনি। ফ্লিকের আমলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মাত্র ৭ ম্যাচে হার দেখে বায়ার্ন মিউনিখ।
২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথম কোনো দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বায়ার্ন মিউনিখ। এমন কীর্তির কারণে ২০২০ সালে ইউরোপের সেরা কোচ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ফ্লিক।
এরপর ২০২১ সালর এপ্রিল মাসে বায়ার্ন ছাড়ার ঘোষণা দেন ফ্লিক। ইয়োখিম লোভ জার্মানির জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে অবসরে গেলে লোভের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে ২০২২ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই জার্মানি বিদায় নিলে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জার্মানির জাতীয় দল থেকে বরখাস্ত হন তিনি। তারপর থেকে বেকার বসে আছেন ৫৯ বছর বয়সী এই জার্মান।