ভিনিসিউস দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়ে দিল রিয়াল মাদ্রিদ। সম্প্রতি ২৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারকে প্রো লিগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে সৌদি আরব। এর জন্য বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রস্তাব করলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এল চিরিঙ্গিতোর বরাত দিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপর্তিভো জানিয়েছে, ভিনিসিউসকে পেতে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তবে সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বর্তমান স্পেন ও ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা।
অবশ্য ভিনিসিউসের জন্য রাখা ১ বিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লসের অর্থ পরিশোধে সম্মত হলে রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে সাড়া মিলতে পারে বলেও প্রতিবদনে বলা হয়েছে।
এর আগে, পাঁচ মৌসুমের জন্য ব্রাজিলের এই প্রতিভাকে মোট ১ বিলিয়ন ইউরো দেওয়া হয়েছিল বলে এক প্রতিবদনে জানায় রয়টার্স।
সূত্রের বরাতে বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছিল, বেতন-বোনাসসহ ভিনিসিউসকে প্রতি মৌসুমে ২০০ মিলিয়ন ইউরো করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ডকে ২০৩৪ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের দূত হওয়ারও একটি বিশেষ প্রস্তাব রাখা হয়েছিল চুক্তিতে।
এরপর এজেন্টের সঙ্গে এ নিয়ে ভিনি আলোচনা করেছেন বলেও জানা যায়। তার এজেন্ট তখন বলেন, মাদ্রিদে সুখে থাকলেও এই ধরনের বিরাট অঙ্কের প্রস্তাব অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিৎ।
আরও পড়ুন: সৌদির বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণে ‘রাজি’ ভিনিসিউস
তবে এ ব্যাপারে রিয়াল মাদ্রিদ ভিনিসিউসকে নিয়ে এসব ভাবছে না। কিন্তু আগামী দলবদলের মৌসুমেও যদি সৌদি আরব এই তারকা ফুটবলের আশা না ছাড়ে, তবে পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে পড়তে পারে।
চলতি মৌসুমে শেষে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ দুই বছর অবশিষ্ট থাকবে ভিনিসিউসের। সাধারণত এমন পর্যায়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করে থাকে ক্লাবগুলো। নতুন শর্তে না মিললে ওই খেলোয়াড় বিক্রি করে দিয়ে লাভের চেষ্টা করে থাকে ক্লাব।
সেক্ষেত্রে ভিনিসিউস রিয়ালকে কী ধরনের বেতন-বোনাসের প্রস্তাব দেবেন, আর তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে কতটা আশ্বস্ত করতে পারবে, সেদিকে চেয়ে থাকবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে নতুন চুক্তি আলোচনায় সৌদি আরবের দেওয়া প্রস্তাবটি যে দুই পক্ষকেই প্রভাবিত করবে, তা আগে থেকেই বলে দেওয়া যায়।
সৌদির প্রস্তাবের পর ভিনিসিউস নিশ্চয়ই বেতন-বোনাস নিয়ে বেশ বড় লাফ দিতে চাইবেন, আর তাতে না পোষালে রিয়াল তাকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আরও একটি বিষয় রিয়াল মাদ্রিদ ও ভিনিসিউস উভয় পক্ষকেই ভাবাতে পারে। আর তা হচ্ছে, এমবাপ্পের রিয়ালে যোগদান। দুজনে একই পজিশনের ফুটবলার হওয়ায় লা লিগার গত দুই ম্যাচেই রিয়ালকে আক্রমণভাগের বাঁ পাশে ভুগতে দেখা গেছে।
ভিনিসিউসকে বাঁয়ে খেলিয়ে এমবাপ্পেকে মাঝে, অর্থাৎ ৯ নম্বর পজিশনে খেলানো হলেও বারবার নিজের সহজাত পজিশনে চলে যেতে দেখা যায় এমবাপ্পেকে। ফলে বাঁ পাশে একপ্রকার নিষ্প্রভ ছিলেন ভিনিসিউস। আবার দুই পজিশনের বিড়ম্বনায় পড়ে নিজের স্বভাবসুলভ ফুটবল খেলতে পারেননি এমবাপ্পেও। ফলে রিয়াল বস কার্লো আনচেলত্তি যদি পজিশনের এই জটিলতার সমাধান না করতে পারেন, তবে ভিনিসিউসের জন্য ভিন্ন কিছু ভাবা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
আরও পড়ুন: আক্রমণভাগে পরিবর্তন আসায় দলে ভারসাম্যের অভাব দেখছেন আনচেলত্তি
প্রসঙ্গত, নিজ দেশের ফুটবল লিগকে জনপ্রিয় করতে গত কয়েক বছর ধরে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে বিশ্বের নামকরা সব ফুটবলারদের কিনে চলেছে সৌদি প্রো লিগের ক্লাবগুলো। এই তালিকায় ইতোমধ্যে নাম লিখিয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, নেইমার, করিম বেনজেমার মতো তারকা ফুটবলাররা।
এর আগে, ফুটবলের আর্জেন্টাইন মায়েস্ত্রো লিওনেল মেসি, ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পেদেরও সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পিআইএফ। তবে লিওনেল মেসি বার্সেলোনা থেকে পিএসজি হয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। আর এমবাপ্পে পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই মৌসুমে নিজের স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে পাঁচ বছরের জন্য রিয়াল মাদ্রিদে চুক্তির মেয়াদ বাড়ান ভিনিসিউস। ক্লাবটির জার্সিতে গত মৌসুমে লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে এ বছরের ব্যালন দ’র জয়ের অন্যতম দাবিদার হিসেবে ফুটবলবোদ্ধাদের বিবেচনায় রয়েছেন তিনি।