জেলায় অসংখ্য শ্রমিক অন্যান্য জেলা থেকে এসে ধান কাটায় যোগ দেয়ার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিনা পারিশ্রমিকে ধান কাটার সহায়তায় এগিয়ে আসছেন।
শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি ধান কাটার মেশিন দিয়ে কাটা শুরু করেছেন। টাঙ্গাইল থেকে শ্রমিক এসেছে। এছাড়া ঢাকা থেকে গার্মেন্টসকর্মীরা এসে ধান কাটায় নেমেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫-৬ দিনের ভিতরে ফসল কাটা শেষ হবে।
‘শ্রমিকদের মাঝে করোনার ভয় নেই। তবে বজ্রপাত ও অকাল বন্যার আতঙ্ক রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
ধর্মপাশা উপজেলার কৃষক নেতা খায়রুল বশর ঠাকুর খান বলেন, পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে। করোনার এ উত্তাপ এসে লাগছে ধর্মপাশায়। ফলে অনেক শ্রমিক আসতে চাইলেও লকডাউন থাকায় আসতে পারছে না।
‘জমির মালিকরাও নেত্রকোনা থেকে শ্রমিক আনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজেরাই নিজেদের ধান কাটতে হাওরে নেমেছেন। এলাকার শ্রমিকরা কায়দা করে ধান কাটার মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে এখানকার হাওরে শ্রমিক সংকট থেকেই যাবে,’ যোগ করেন তিনি।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক আকমল আলী জানান, করোনায় গৃহবন্দী হয়ে পড়ায় এলাকার মানুষের আয় রোজগার নেই। সামনের দিনগুলো খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিতে পারে। তাই আমরা করোনাকে উপেক্ষা করে হাওরে ধান কাটা শুরু করেছি। অন্য জেলা থেকেও শ্রমিক এসে ধান কেটে দিচ্ছেন। এছাড়া সরকার যে ধান কাটার মেশিন দিয়েছে তা দিয়ে দিনে কমপক্ষে ৩০ কেদার জমির ধান কাটা যায়। এ হিসেবে শ্রমিক তেমনটি নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের এবার বাম্পার ফলন ঘরে উঠবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার হাওরে এবার বোরো চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টন।
সিলেট আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অন্যান্য বছর কমপক্ষে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। শুস্ক আবহাওয়া বিরাজমান। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সফর উদ্দিন জানান, ১৭ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২২০ মিলিটার বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এসেছেন। শ্রমিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ধান কাটার মেশিন বরাদ্দ দিয়েছেন। এসব মেশিন দিয়ে কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে।’