তিনি বলেন, ‘দেশে পাটবীজ উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো অন্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা চাষ করতে চায় না। পাটবীজে কৃষকদের আগ্রহী করতে ও কৃষকেরা যাতে চাষ করে লাভবান হয় সে জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হবে।’

আরও পড়ুন: আমাদের খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে: কৃষিমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমরা পাটবীজের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারি না। আমরা পাটবীজের উৎপাদন বাড়াব। পাটের উৎপাদন বাড়াব। পাট চাষকে এ দেশের চাষিদের নিকট লাভজনক ফসলে উন্নীত করব। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পাটের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আবার ফিরিয়ে আনব।’

আরও পড়ুন: ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: কৃষিমন্ত্রী

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে। সেই জিনোম ব্যবহার করে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল পাটবীজ রবি-১ জাত উদ্ভাবন করেছেন; যার ফলন ভারতের পাটজাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। কৃষক পর্যায়ে এটির চাষ বাড়াতে পারলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব।’

এ সময় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে সব সময় অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। তার সাথে পাটবীজ রপ্তানির ওপর সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ভয়ও থাকে।

বাংলাদেশে বছরে কৃষক পর্যায়ে বীজের চাহিদা হলো ৫,২১৫ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি সরবরাহ করে ৭৭৫ মেট্রিক টন (তোষা পাট ৫১৫ টন ও দেশি ২৬০ টন)। তোষা পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আনতে হয়। এ বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় পাঁচ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এ পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে ৪৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ তোষা পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮,৭৮০ হেক্টর জমি চাষের প্রয়োজন হবে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।

পাটআঁশ এবং পাটবীজ দুটি আলাদা ফসল। পাটবীজ রবি মৌসুমের (আগস্ট-ডিসেম্বর) ফসল। তোষা পাটবীজ সাধারণত আগস্ট-ডিসেম্বর মাসের ফসল। এ সময়ে উচ্চমূল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী নন। তাই পাটবীজ উৎপাদনের পরিবর্তে পাট চাষের সময় কৃষক বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে পাট চাষ করা লাভজনক বলে মনে করে।

আরও পড়ুন:  চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে: কৃষিমন্ত্রী

দেশে মূলত দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। বর্তমানে দেশি পাট ১৫ ভাগ ও তোষা পাট ৮৫ ভাগ উৎপন্ন হয়। তোষা পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ ভারত থেকে আমদানিকৃত জেআরও-৫২৪ জাতের মাধ্যমে মেটানো হয়। অথচ, জিনোম গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিটউট উদ্ভাবিত পাটের জাত রবি-১ (তোষা পাট-৮) এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। এটি ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলের কৃষকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যথাযথভাবে রবি-১ পাট জাতকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন: প্রযুক্তি হস্তান্তর ত্বরান্বিত করতে হবে: কৃষিমন্ত্রী

কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ও  বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বক্তব্য দেন। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালামসহ সংস্থাপ্রধান ও অন্য কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।