ঢাকার একিউআই স্কোর সকাল ৯টা ২ মিনিটে পাওয়া যায় ১৮৫ এবং বাতাসকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রবলতা এবং দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে বেশি সময় থাকার মাঝে সম্পর্ক থাকায় রাজধানীর বাসিন্দাদের মাঝে এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয় বাতাসের খারাপ মান।
বায়ু দূষণ ও করোনা
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন যে প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে বিপজ্জনক সূক্ষ ধুলা ও বস্তুকণা পিএম২.৫ যদি মাত্র এক মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটি কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
নেদারল্যান্ডসের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দূষণের সংস্পর্শে আসার মাত্রায় সামান্য বৃদ্ধি মৃত্যুর হার ২১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায়ও কোভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতা এবং গাড়ির ধোঁয়া বা জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে আসা নাইট্রোজেন অক্সাইড ও স্থল-স্তরের ওজোনের মতো দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে দীর্ঘ মেয়াদে আসার মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাতেও দেখানো হয়েছে যে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে দীর্ঘ মেয়াদে থাকা করোনাভাইরাসে প্রাণহানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
একিউআই মান ১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে থাকা মানে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যেই দূষণের প্রভাব পড়তে পারে। তবে, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর সদস্যরা আরও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
আজকের একিউআই সূচক অনুসারে, দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় যথাক্রমে ২৭৪ এবং ২৬৫ স্কোর নিয়ে প্রথম দুটি স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর এবং ভারতের দিল্লি।
আরও পড়ুন: শীতে কোভিডের ঢেউ ঠেকাতে বায়ু দূষণ কমাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।
বায়ু দূষণের সাথে ঢাকার সম্পর্ক অনেক পুরনো। সাধারণত বর্ষার মৌসুমে শহরের বাতাসের মানের উন্নতি হয়। তবে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বাতাসের মানের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে। তখন বায়ুতে বিপজ্জনক সূক্ষ ধুলা ও বস্তুকণা পিএম২.৫-এর জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। আর বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহরের উঠে আসে।
ঢাকা শহরের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপন করা ইটভাটা ও অনুপযুক্ত যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ কাজকে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দায়ী করা হয়।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দুষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
আগের বছরগুলোর মতো এবারও শুষ্ক মৌসুমে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহর গুরুতর বায়ু দূষণের কবলে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এ বছরের শীতে দূষিত বায়ু করণাভাইরাসকে মৃত্যুর হারের বিবেচনায় আরও মারাত্মক করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
তারা বলছেন, উচ্চ স্তরের বায়ু দূষণের সংস্পর্শ মানুষের শ্বাসযন্ত্র ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয় এবং কারণ হয় নানা ঠাণ্ডাজনিত রোগের, যা তাদের কোভিড-১৯-এর জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাতাসের মানের ক্রমাগত অবনতি করোনার উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছে যে যেসব শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি রয়েছে তাদের মারাত্মক করোনা মহামারির বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে বায়ু দূষণের পাশাপাশি ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তারা আরও বলছেন, আইন প্রয়োগ এবং জনগণকে অনুপ্রাণিত করে সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এটিই একজনকে দূষণ এবং কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।