অবশেষে বিত্তবান ও সামাজিক সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বৃক্ষশিশু রিপন রায় (৯) ফের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি হয়েছে। গত বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে রিপনকে ট্রেন করে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
রিপনের বাবা মহেন্দ্র দাস জানান, বৃহস্পতিবার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের সাক্ষাত করে রিপনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন: বিমান বাহিনীর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন
চিকিৎসকেরা বাংলাদেশের প্রথম বৃক্ষমানব হিসেবে খুলনার আবুল বাজানদারের এবং দ্বিতীয় বৃক্ষমানব হিসেবে রিপন রায়ের সন্ধান পায়।
জানা যায়, রিপনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের কেউটগাঁও গ্রামে। রিপনের বাবা মহেন্দ্র দাস জুতা সেলাইয়ের (চর্মকার) কাজ করেন এবং মা গোলাপী রানী দাস গৃহিণী। পরিবারের তিন ভাই বোনের মধ্যে রিপন সবার ছোট। সে কেউটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণিতে পড়ালেখা করার সময় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে রিপনকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজরেও আসে। আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন অনেকেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই সময় রিপনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার তিন দফা অপারেশন হয়।
চিকিৎসার অংশ হিসেবে রিপনকে বাড়ির পরিবেশে রাখতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে দুই মাসের জন্য বাড়ি পাঠায় চিকিৎসকরা। পরবর্তীতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় চিকিৎসা নেয় সে। ২০২০ সালে করোনার কারণে ঢাকায় চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়নি তার।
নিয়মিত চিকিৎসা না নেয়ায় রিপনের হাতে পায়ে আবার গজাতে শুরু করে শিকড়ের মত আঁচিল। কিন্তু অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছিল না রিপনের পরিবার। এ অবস্থায় স্থানীয় কবিরাজের পরামর্শে ভেষজ চিকিৎসার আশ্রয় নেয় রিপনের পরিবার। এরপর থেকে তার শরীর কালা হতে শুরু করে। অক্টোবর মাসে তাকে পীরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২/৩ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার মত অর্থ তার পরিবারের নেই। এতে দিন দিন তার অবস্থা খারাপের দিকে এগিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে চলছে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা
রিপনের বাবা মহেন্দ্র দাস বলেন, রিপনের স্বাস্থ্য ক্রমেই গুরুতর হচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে শুধু কান্না আসছে, কিন্তু আমি তো নিরুপায়। সহ্যও করতে পারছি না, আবার অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। তবে সমাজের অনেক বিত্তবান এগিয়ে আসায় ফের হাসপাতালে নিতে পেরেছি। যারা শিশুটির খোঁজখবর নিতে চাচ্ছেন, তাদের আমার ০১৭৯৭৭৩১৬৯২ নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করছি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল আজম জানান, ভেষজ চিকিৎসার কারণে তার শরীরে খারাপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তার দ্রুত উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। বেশি দেরি হলে শরীরের মাংসে পচন ধরাসহ বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বৃক্ষশিশু রিপন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। সেখানে ৬১৮ নম্বর বেডে থেকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক ডা. রোমানা পারভীনের (রেসিডেন্ট, এম. এস প্লাস্টিক সার্জারি) অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলো রিপন।
ওই চিকিৎসকের বরাত দিয়ে রিপনের বাবা মহেন্দ্র দাস জানান, বৃক্ষ শিশু রিপন ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ বিরল রোগে ভুগছে। চার বছর আগে তিনবার তার হাতে পায়ে অপারেশন করার পর চিকিৎসা নিয়ে প্রায় ৯০ভাগ আরোগ্য লাভ করেছিল রিপন। আবার তার হাতে পায়ে এধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কি না তা দেখার জন্য তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। তবে রিপন পুরোপুরি সুস্থ করতে আরও সময় লাগবে বলে তার পরিবারকে জানায় চিকিৎসক।
প্রসঙ্গত, খুলনার আবুল বাজানদারের হাতে-পায়ে ‘শেকড়ের মতো’ আঁচিল নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচিত হন। পরে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসে সরকার। এক বছরে কমপক্ষে ১৬টি অপারেশন শেষে তার শরীর থেকে ১০ কেজি বর্ধিত আঁচিল (গাছের শিকড়ের মতো) অপসারণ করা হয়েছে। তিনি এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি