এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৭তম বার্ষিক সভায় যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জর্জিয়ার রাজধানীতে পৌঁছেছেন প্রতিনিধিরা। আগত অতিথিদের উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছে তিবিলিসি।
বৃহস্পতিবার (২ মে) শুরু হতে যাওয়া সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সবুজ বিশ্বায়নসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মূল উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বুধবার (১ মে) রাতে তিবলিসিতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন এক সরকারি কর্মকর্তা।
২০২৪ সালের বার্ষিক সভার পর্দা উত্তোলনের সময়, একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে কী প্রয়োজন সে নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া, ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট ওডিলে রেনাড-বাসো এবং জর্জিয়ার অর্থমন্ত্রী লাশা খুটিশভিলি।
আরও পড়ুন: দেশের বেসরকারি সৌর প্রকল্পে ১২১.৫৫ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন এডিবির
আন্তর্জাতিক সাংবাদিক নিশা পিল্লাইয়ের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বায়ন ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি সত্ত্বেও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও দেশগুলো কীভাবে আরও কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
আলোচনায় এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, তথাকথিত উন্নয়নশীল এশিয়ার অর্থনীতি ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ বেড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যা ২০২২ সালে ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
এই প্রবৃদ্ধির গতি চলতি বছর এবং আগামী বছর প্রায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন আসাকাওয়া। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এডিবি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির হার ২০২২ সালের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি ক্ষেত্র থেকে এই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি আসে- প্রথমত, তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি কর্মক্ষমতা পুনরুদ্ধার। তৃতীয়ত, খুব শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ। চতুর্থত, পর্যটন পুনরুদ্ধার কারণ আরও বেশি সংখ্যক পর্যটক ফিরে আসছেন এবং পঞ্চমত, চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জলবায়ু সহিষ্ণু পানি ব্যবস্থাপনায় ৭১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি
চীনের অর্থনীতি প্রসঙ্গে এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০২২ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩ দশমিক শূন্য হলেও কঠোর শূন্য-কোভিড নীতি থেকে বেরিয়ে আসার পর ২০২৩ সালে তা ৫ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রচুর পরিমাণে অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সত্ত্বেও এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতি খুব স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বলে মনে হচ্ছে।
এ সময় এডিবি প্রেসিডেন্ট চারটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন- প্রথমটি হলো মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য স্থানে চলমান ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত। দ্বিতীয়ত, উন্নত অর্থনীতিগুলোতে- বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক নীতির অভিযোজনের কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারগুলো খুব অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা। তৃতীয়ত, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি। সাধারণত খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও ২০২২ সালে সর্বোচ্চ হওয়ার পর থেকে চালের দাম বেড়েই চলেছে। চতুর্থত বিশ্ব যে নেতিবাচক ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন সংকট।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এটা অস্বস্তিকর সত্য যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কার্বনডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনের জন্য ৫০ শতাংশের বেশি দায়ী। তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যে এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি।’
আরও পড়ুন: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১%, আগামী বছর হবে ৬.৬ %: এডিবির পূর্বাভাস
এডিবির ব্যবস্থাপনা মহাপরিচালক উচং উম বলেন, 'বৈঠকে জর্জিয়া ও এডিবির মধ্যে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব তুলে ধরা হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার প্রতি জর্জিয়ার প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগস্থলে অবস্থিত তিবিলিসিতে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সরাসরি, আর্থিক এবং অর্থনৈতিক সংযোগগুলো খোঁজার একটি চমৎকার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’
এবার প্রথমবারের মতো জর্জিয়ায় এডিবির বোর্ড অব গভর্নর্সের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
'ব্রিজ টু দ্য ফিউচার' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২ থেকে ৫ মে পর্যন্ত চলবে এই সম্মেলন। এতে এডিবির ৬৮ সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
জর্জিয়া ২০০৭ সালে এডিবিতে যোগ দেয়। জর্জিয়াকে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশটির অন্যতম বৃহৎ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদার হয়েছে এডিবি।
এডিবি চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল এবং টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও উন্নয়নশীল এশিয়ায় বলিষ্ঠ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির