বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের অবস্থার অবনতি ও খাদ্য সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর কারণে নৌকার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় আসা অব্যাহত রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার(২৩ নভেম্বর) জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি আঞ্চলিক জরুরি প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'সংকটের মূল কারণ হলো মিয়ানমারের অবৈধ সামরিক জান্তা- এর সমাধান না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’
গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশে নৌকায় করে ১ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পৌঁছেছে।
অ্যান্ড্রুজ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, আশ্রয় ও সহায়তা প্রদানের জন্য ইন্দোনেশিয়া সরকারের প্রশংসা করেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, যাদের জরুরি ভিত্তিতে পুষ্টি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: আমরা রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে মনোনিবেশ করছি: আফরিন আখতার
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে তাদের উপকূলে নৌকা থেকে নামিয়ে নেওয়ার ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কারণ, আরও রোহিঙ্গা শরণার্থী নৌকায় করে তাদের উপকূলে আসতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ায় বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গাদের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং অভ্যন্তরীণ আইন অনুযায়ী প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করায় ইন্দোনেশিয়া সরকারকে অভিনন্দন জানানো উচিত। কিন্তু তারা একা এটা করতে পারে না। এটি একটি জরুরি অবস্থা, এবং একটি জরুরি প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। তাদের জীবন বাঁচাতে একটি সমন্বিত অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান প্রয়োজন রয়েছে যারা সমুদ্রে চলাচলের অনুপযোগী জনাকীর্ণ নৌকায় সমুদ্রে আটকা পড়ে থাকতে পারে।’
অ্যান্ড্রুজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সংকটের মূল কারণটি চূড়ান্তভাবে সমাধান না করা পর্যন্ত সংকট আরও জটিল হতে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমাধান ততক্ষণ সম্ভব নয়, যতক্ষণ না জান্তা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও নাগরিকত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার গঠনে বাধা দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জান্তাকে অস্ত্র, অর্থ ও বৈধতা না দিয়ে সংকটের মূল কারণগুলো সমাধান করতে হবে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটে ‘নিজেদের সমর্থন অব্যাহত রাখছে’ ইইউ: রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি
জাতিসংঘের দূত বলেন, যতক্ষণ না রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করে স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা তহবিল প্রদান করতে হবে এবং পুনর্বাসনসহ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে।
অ্যান্ড্রুজ এ বছরের শুরুতে আচেহ ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, এর মধ্যে পিডির একটি শরণার্থী শিবিরও ছিল। যেখানে তাকে বলা হয়েছিল যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিপজ্জনক যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ বলেন, 'আমি ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা মেটাতে মানবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছি। এর মধ্যে সম্প্রতি আগমনকারীদের জন্য আশ্রয়শিবির নির্মাণও রয়েছে। এছাড়া নারী ও শিশুসহ শোষণ ও মানব পাচারের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সেবা প্রদান করা উচিত।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই: জাতিসংঘে বাংলাদেশ
অ্যান্ড্রুজ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই আগমন বাংলাদেশে খারাপ পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গার আগমনের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, কে তাদের দোষ দিতে পারে? বাবা-মায়েরা ভঙ্গুর পর্যায়ে পৌঁছেছেন, কারণ তাদের সন্তানরা ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে এবং শিবিরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে।’
‘এই পরিবারগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভিড়যুক্ত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চড়ছে, কারণ তারা বিপদগ্রস্ত এবং কোনও বিকল্প দেখছে না।’
তিনি বলেন, 'অতীতে কেউ কেউ যেমন করেছে- কোনো রাষ্ট্রই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নামতে বাধা দেবে না। নৌকাগুলোকে সমুদ্রে ঠেলে দেবে না।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি অব্যাহত থাকবে: পররাষ্ট্র সচিব