যথাযোগ্য মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এ বছর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস দুই পর্বে উদযাপন করা হয়েছে।
উদযাপনের দ্বিতীয় পর্বে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হ্ইাকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী ও তার সহধর্মিনী মিসেস শামসাদ আরা খানম ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় অভিজাত হোটেল মেরিয়টে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা ও নৈশ্যভোজের আয়োজন করেন।
সংবর্ধনায় পাকিস্তানের রাজ্য ও সীমান্ত অঞ্চল বিষয়ক এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব ধর্ম ও ইন্টারফেইথ হারমনি বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী সিনেটর মুহাম্মদ তালহা মাহমুদ পাকিস্তান সরকারের পক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক, মাদক নিয়ন্ত্রন এবং পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রীগণ, পাকিস্তানের অডিটর ও কম্পট্রোলার জেনারেল (কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদার), ৩০ জনের অধিক সিনেটর ও জাতীয় সংসদের সদস্য, প্রাদেশিক এসেম্বলীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, পাকিস্তান সরকারের বেসামরিক ও সামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, প্রবাসী বাংলাদেশি সমন্বয়ে সাড়ে পাঁচ শতাধিক অতিথি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান স্থলে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়। সংবর্ধনা হলটি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তুলে ধরে ব্যানার ও স্ট্যান্ডিজ দিয়ে সাজানো হয়।
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘রূপকল্প ২০২১’ অর্জন ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মানে ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ও উদ্যোগ বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
অতিথিরা বঙ্গবন্ধু কর্নারে স্থাপিত বই ও প্রকাশনা, সায়য়িকীসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সমৃদ্ধ ব্যানার, স্ট্যান্ডিজ ইত্যাদি অত্যন্ত আগ্রহসহকারে দেখেন।
হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী তার স্বাগত বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
হাইকমিশনার বলেন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী ও বিধ্বংসী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের সরকারি সম্পদ, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। উপরন্তু মানুষের মৃত্যু, ব্যক্তিগত ঘর-বাড়ি ধ্বংস এবং মানসিক আঘাতের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ছিল অপরিমেয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় শূন্য থেকে নয় বরং ঋণাত্বক অবস্থান থেকে।
তিনি তার বক্তব্যে বিগত ৫০ বছরে বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী সাড়ে তিন বছর এবং বর্তমান সরকারের অধীনে উনিশ বছরের বেশী সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা বিশেষভাবে তুলে ধরেন।
হাইকমিশনার বলেন, বিশাল প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র ও বঞ্চনাহীন দেশ হিসেবে পরিণত করার কাজ শুরু করেন। দুর্ভাগ্যবশত ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে।
হাইকমিশনার আরও বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ৫ বছরের জন্য দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা পুনরায় শুরু করেন। তিনি ২০০৯ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হয় এবং বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে দয়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন: কানাডার সংসদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিল পাশ
তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন এবং মানুষের গড়আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছরসহ বাংলাদেশ এখন একটি জ্ঞানভিত্তিক মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের একটি দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশে পরিনত হয়েছে। গত ১৪ বছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৭ শতাংশ। করোনা মহামারী চলাকলীন গত অর্থবছরে সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দমমিক ৯৪ শতাংশ। বাংলাদেশ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, শতবাগ বাড়ি বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, তথ্য প্রযুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এ কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত।
এমুহুর্তে যখন বিশ্ব অর্থনীতি নিম্নমুখী, তখন বাংলাদেশ ‘ভিশন-২০৪১’ এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি উচ্চ আয়ের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফেডারেল মন্ত্রী সিনেটর মুহাম্মদ তালহা মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, একইরূপ বিশ্বাস ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে দুদেশের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে হাইকমিশনার, ফেডারেল মন্ত্রীগণ, বিশেষ অতিথিগণ, কূটনৈতিক কোরের ডিন, সার্কভূক্ত দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলাদেশি খাবারসহ নানরকম সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।