বৃহস্পতিবার হত্যা মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১৫ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ আদেশ দেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মোস্তফা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, র্যাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দলাল রক্ষিতকে ৭ দিনের রিমান্ড এবং বাকি আসামসিদের জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে বিকালে ওসি প্রদীপ কুমারসহ ৯ আসামিকে আদালতে হাজির করলে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন প্রথমে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে র্যাবের করা রিমাণ্ডের আবেদনের উপর শুনানি হয়।
এর আগে দুপুরে সিএমপি পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে কক্সবাজার নিয়ে যায়। বিকেল পৌনে ৫টায় প্রদীপসহ ৯ পুলিশকে আদালতে হাজির করে। পরে তাদের পক্ষে জামিন চান আইনজীবীরা। জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
লিয়াকত ও প্রদীপ ছাড়াও কারাগারে অন্য আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এ এস আই টুটুল, ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বুধবার তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে লিয়াকতকে প্রধান আসামি করে মোট ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
টেকনাফে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ মতে টেকনাফ মডেল থানা ৫ আগস্ট রাত সাড়ে দশটায় এ মামলাটি রুজু হয় এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল ও মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, মামলা রেকর্ডের পর কক্সবাজার র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার আজিম আহমেদকে তদন্ত করার নির্দেশও দেন আদালত।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ১৪ ঘণ্টা পর আজ দুপুরে চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতাল থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে পুলিশের দাবি করেছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওসি প্রদীপ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
পরে দুপুর ২টায় প্রদীপ কুমার পুলিশ প্রহরায় নিয়ে আসা হয় কক্সবাজারে।বিকাল সোয়া ৫টার দিকে প্রদীপ কুমারকে বহনকারী পুলিশের গাড়িগুলো কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছে। এসময় সড়কের দুপাশে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মামলার প্রধান আসামি ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে হাজির হয়।
প্রদীপ কুমারসহ ৯ আসামি টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালতে হাজির করার পর জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে র্যাবের পক্ষ থেকে সকল আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত সন্ধ্যায় শুনানীকালে ওসিসহ ৩ জনকে ৭ দিনের রিমান্ড এবং বাকি আসামিকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)।
ঘটনা তদন্তে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
এদিকে, নিহত সিনহা রাশেদকে ঢাকায় সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ২০ জনকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে।