প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের সাধারণ কাজ সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার এ উপলক্ষে সেতু বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন (গণভবন) থেকে যোগ দিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
কর্ণফুলী টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে এবং টানেলের উত্তর প্রান্তের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশের টানেল, যা কর্মসংস্থান, পর্যটন এবং শিল্পায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতি বৃদ্ধিতে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের যানজট পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেলের দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের মতে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ করতে আরও দুই মাস সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: কর্ণফুলী টানেলের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জি টু জি) যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রামকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। চীনের সাংহাইয়ের মতো ‘এক নগরী দুই শহর’ মডেল অনুসরণ করে নির্মিত এই টানেলটি উত্তরের বন্দর শহরটিকে দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
চীন এই প্রকল্পে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে, টানেলের ভিতরে অগ্নিনির্বাপণ, আলো এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও, ৫২টি সেচ পাম্পও স্থাপন করা হচ্ছে যাতে বর্ষাকালে পানির স্তর বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে টানেলটি আটকে না যায়, প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল সংলগ্ন দুটি টিউব নির্মাণ করা হয়েছে। টানেলে একই সঙ্গে লাইট, পাম্প এবং ড্রেনেজ সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে এবং একটি ৭৭২ মিটার ফ্লাইওভারও নির্মিত হয়েছে।
বর্তমানে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে।
কর্ণফুলী টানেল ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় টানেলের অ্যাপ্রোচ রোডের দুই পাশে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এরই মধ্যে ভাগ্যের পরিবর্তনের সাক্ষী হতে শুরু করেছে।
কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যমতে, কর্নফুলীর দক্ষিণ তীরে অন্তত ১০টি বড় শিল্প গ্রুপ এবং ১৫০ জন ব্যবসায়ী বিভিন্ন সেক্টরে - বিদ্যুৎ, পেট্রোলিয়াম, পোশাক, জাহাজ নির্মাণ, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইস্পাত, সিমেন্ট এবং তেল শোধনাগার - কারখানা স্থাপনের জন্য অগ্রিম জমি কিনেছে।
টানেলটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আট হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাল্টি-লেন রোড টানেল প্রকল্পটি অনুমোদন করে এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে খরচ বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা করা হয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
প্রকল্পের সর্বশেষ সংশোধনীতে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং ব্যয় ১৬৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
২০১৩ সালে পরিচালিত জরিপ অনুসারে টানেল নির্মাণের আগে বছরে ৬৩ লাখ যানবাহন টানেল দিয়ে চলাচল করতে সক্ষম হবে। সে হিসাবে দিনে প্রায় ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন কর্ণফুলী টানেল দিয়ে যাতায়াত করবে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী