শনিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২০’ শিরোনামে এ চিত্র তুলে ধরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের সমন্বয়ক রাফেজা শাহীন।
পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা অনুযায়ী, গত বছর ৭১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনাকালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২৬ শিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৩৭ শিশুকে।
আরও পড়ুন: ‘ধর্ষণ ও ভিডিও’ ধারণ: নাটোরে আ’লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২
গত বছর বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ১০১ শিশু।
এমজেএফের পর্যালোচনা অনুযায়ী, অবনতিশীল শিশু অধিকার পরিস্থিতি থেকে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে দেশের শিশুরা তাদের ঘরেই নিরাপদ নয়। কারণ অধিকাংশ শিশু ধর্ষণ পারিবারিক পরিমণ্ডলে পরিচিতদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। একইভাবে পারিবারিক প্রভাবের কারণেই করোনাকালে বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৯২ শিশু নিহত হয়েছে, যার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিশুর সংখ্যা ১৫৮ জন। একই সময়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৬৫ শিশু। এছাড়া ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, হত্যা, অপহরণ, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে আরও ১৪৫ শিশু। করোনাকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় সাত মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, যার মধ্যে তিনজন শিশু মারা যায়।
পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। এরপর রয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা। শিশুদের চকলেট বা খাবাররে লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এবং ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনকি করোনার সময়ে ত্রাণ দেয়ার কথা বলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’: মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ১
রাজধানীতে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ
আলোচ্য সময়ে আত্মহত্যা করেছে ৩৪ শিশু এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ জন। পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, পরিবারের ওপর রাগ, প্রেম, উত্যক্ততা, ধর্ষণের শিকার বা ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়ার কারণেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েও আত্মহত্যা করেছে কেউ কেউ।
গত বছর নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২৯ শিশু।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণ চেষ্টা: প্রধান আসামি ৩ দিনের রিমান্ডে
কলাবাগানে ‘ধর্ষণের’ পর হত্যার শিকার স্কুলছাত্রীকে কুষ্টিয়ায় দাফন
এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায়ও নিরাপদ নয়। শিশু রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আরও বেশি দায়িত্ববান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের শিশু-অধিকার বিষয়ক ককাসের সদস্য অ্যারোমা দত্ত এমপি দেশে বিরাজমান নারী ও শিশু নির্যাতনকে ‘সূর্যগ্রহণের গ্রাস’র সাথে তুলনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মুহিবুজ্জান। এমজেএফের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ফাতেমা ইউসুফসহ তাদের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন আলোচলায় অংশগ্রহণ করে।